Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বিপজ্জনক গেম থেকে পড়ুয়াদের বাঁচাতে উদ্যোগী স্কুল

পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ ‘ব্লু হোয়েলের’ মতো মারণ গেমগুলিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে বলে দাবি বিভিন্ন স্কুলের। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলিকে ‘ব্লু হোয়েল’ এর লিঙ্ক বন্ধ করতে নির্দেশও দিয়েছে কেন্দ্রের ইলেক্ট্রনিক্স এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক।

সুপ্রিয় তরফদার, তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৭ ০৬:৩০
Share: Save:

সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক বিপজ্জনক অনলাইন গেমের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে দুশ্চিন্তায় সরকার থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ। পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ ‘ব্লু হোয়েলের’ মতো মারণ গেমগুলিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে বলে দাবি বিভিন্ন স্কুলের। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলিকে ‘ব্লু হোয়েল’ এর লিঙ্ক বন্ধ করতে নির্দেশও দিয়েছে কেন্দ্রের ইলেক্ট্রনিক্স এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক। এ বার পড়ুয়াদের এই সমস্ত অনলাইন গেম থেকে দূরে রাখতে সচেষ্ট হচ্ছে কলকাতার বিভিন্ন স্কুলও।

সম্প্রতি মুম্বইয়ে এক পড়ুয়ার বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুতে নীল তিমি বা ব্লু হোয়েলের তত্ত্ব সামনে আসে। গত সপ্তাহে মেদিনীপুরে এক পড়ুয়ার মৃত্যু ফের সেই আশঙ্কা উস্কে দিয়েছে। মূলত এই খেলাটিতে অংশ নেওয়ার আগেই জানিয়ে দেওয়া হয় যারা খেলার অংশ নেবে তাদের ৫১ নম্বর ধাপে গিয়ে আত্মহত্যা করতেই হবে। এমনকী মাঝপথে খেলা বন্ধ করে দিলে তাদের পরিবারের ক্ষতিও করা হবে বলে ব্ল্যাকমেল করা হয়। তা জেনে শুনেই কিশোর কিশোরীরা খেলার অংশ নেয়!

জেনে শুনেও কী কারণে মারণ খেলায় নামছে কিশোর কিশোরীরা? মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম বলেন, ‘‘যাদের মধ্যে হীনমন্যতা এবং মানসিক অবসাদ আছে তাদের মধ্যেই এই ধরণের খেলার প্রবণতা বেশি। পরিবারের উচিত এই কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে জীবনের ব্যর্থতা ও সাফল্য সম্পর্কে খোলা মনে আলোচনা করা।’’

শুধু ব্লু হোয়েল নয়, এমনই আরও বেশ কয়েকটি খেলায় ক্রমশ জড়িয়ে পড়ছে তরুণ প্রজন্ম। এ ধরনেরই একটি খেলায় স্কোর বাড়ানোর উপায় হল কোনও তরুণীকে নানা ভাবে হয়রান করা। তাকে ভুলিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা। এমনকী সেই খেলার শেষ ধাপে গিয়ে তরুণীকে নিষ্ঠুর ভাবে ধর্ষণ করতেও বলা হয়।

প্রথমে পড়ুয়া ও পরে অভিভাবকদের সচেতন করার মাধ্যমেই যুব সম্প্রদায়কে বাঁচাতে উদ্যোগী হয়েছে শহরের স্কুলগুলি। দ্য হেরি়টেজ স্কুলের অধ্যক্ষা সীমা সাপ্রু জানান, সম্প্রতি এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে অভিভাবক এবং পড়ুয়াদের। ক্লাসে শিক্ষকদের মাধ্যমেও আমরা প্রচার চালাই। তাঁর কথায়, ‘‘জোর করে কিছু করা সম্ভব নয়। তাই আমরা এই সমস্ত খেলার বিপজ্জনক এবং অনৈতিক দিকগুলি তুলে ধরে পড়ুয়াদের বোঝানোর চেষ্টা করি। পরিবারের তরফেও বেশি করে নজরদারি চালানো উচিত বলেই মনে করি।’’ ডিপিএস, নিউ টাউন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে সার্কুলার দিয়ে অভিভাবকদের সচেতন করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ তাঁদের নজরদারি সব থেকে বেশি প্রয়োজন। ‘‘ছাত্র সংসদের মাধ্যমেও পড়ুয়াদের সচেতন করা হচ্ছে,’’— বললেন স্কুলের অধ্যক্ষা সোনালি সেন। লা-মার্টিনিয়ারের সচিব সুপ্রিয় ধরের মত, স্কুলের থেকে বাড়িতেই এ সব খেলার সুযোগ বেশি থাকে। তাই অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। সাউথ পয়েন্টের ট্রাস্টি কৃষ্ণ দামানিও একই ভাবে অভিভাবকদের সচেতনতার উপরে বেশি জোর দিয়েছেন। তবে স্কুলেও কাউন্সেলিং হয় বলে জানান তিনি।

পিছিয়ে নেই রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিও। হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক তুষারকান্তি সামন্ত বলেন, ‘‘অভিভাবকদের বলা হয়েছে সন্তানদের যতটা সম্ভব স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখতে। সন্তানেরা তা ব্যবহার করলেও অভিভাবকদের নজরে থাকা প্রয়োজন। একই সঙ্গে নিরন্তর সচেতনতা জরুরি।’’ যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্যও অভিভাবকদের সাহায্যেই পড়ুয়াদের বাঁচানোর পক্ষে মত দিয়েছেন।

তবে আশার কথা, সম্প্রতি ব্রাজিলের এক ব্যক্তি পিঙ্ক হোয়েল নামে একটি গেম তৈরি করে ছড়িয়ে দিয়েছেন ইন্টারনেটে। এটি কার্যত ব্লু হোয়েলের বিপরীতধর্মী ইতিবাচক খেলা। এখানেও ৫১টি ধাপ থাকে, তবে সেই সব ধাপে নানা ভাবে
ছড়িয়ে দিতে হয় ভালবাসার কথা, অপরাধ করে থাকলে ক্ষমা প্রার্থনার বার্তা। মনোবিদদের মতে, এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।

সম্প্রতি সফটঅয়্যার নিরাপত্তা সংস্থা নর্টনের আন্তর্জাতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ইন্টারনেট দাদাগিরি বা অনলাইন বুলিংয়েও চিন ও সিঙ্গাপুরের পরেই রয়েছে ভারত। সে ক্ষেত্রেও লাগাম পরানো জরুরি বলে মত শিক্ষকদের। কলকাতার শিক্ষাভবন সূত্রের খবর, স্কুলশিক্ষা দফতর থেকে কেন্দ্রীয় ভাবে কোনও নির্দেশিকা নেই। কিন্তু বিভিন্ন স্কুল নিজেদের মতো করে অনলাইনের বিপজ্জনক গেম এর বিষয়ে সচেতনতার প্রচার চালু করেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

School Blue Whale Online Games
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE