শাহনওয়াজ খান
প্রথম দিনেই উঠে এসেছে তাঁর নাম। শোনা গিয়েছে, তৃণমূল নেতা মহম্মদ সোহরাবের দুই ছেলে আম্বিয়া ও সাম্বিয়ার ঘনিষ্ঠ তিনি। এ-ও শোনা গিয়েছে, গত বুধবার ভোরে রেড রোডে কুচকাওয়াজের মহড়ায় ঢুকে পড়া ঘাতক অডি গাড়িতে তিনি ছিলেন বলেই সন্দেহ করছে পুলিশ। ২৪ বছরের সেই যুবক শাহনওয়াজ খান ওরফে শানুর নামেই এ বার নিখোঁজ ডায়েরি করল তাঁর পরিবার। পুলিশের কাছে শানুর বৌদির দাবি, দুর্ঘটনার সময়ে অডি গাড়িটি সাম্বিয়া চালাচ্ছিলেন বলে শানুই তাঁদের ফোনে জানিয়েছিলেন। কিন্তু বুধবার সন্ধ্যার ওই ফোনের পর আর যোগাযোগ করা যায়নি শানুর সঙ্গে।
পরিবারের দাবি, শানু আশঙ্কা করছেন, তাঁর প্রাণ সংশয় হতে পারে। বৃহস্পতিবার রাতে বৌবাজার থানায় নিখোঁজ ডায়েরিটি করেন শানুর বৌদি প্রিয়ঙ্কা খান। সেখানে তিনি লিখেছেন, গত মঙ্গলবার দুপুর ৩টে নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন শানু। মাঝরাতে ফোন করে বলেছিলেন, তিনি খাওয়া সারতে বাড়ি আসছেন। কিন্তু আসেননি। উল্টে পরের দিন বিকেল ৪টে ৫০ নাগাদ দাদা খালিদ খানকে ফোন করে রেড রোডের দুর্ঘটনার কথা বিস্তারিত জানান শানু।
কী বলেছিলেন তিনি?
শুক্রবার আনন্দবাজারকে খালিদ বলেন, ‘‘কোলাঘাট থেকে আমায় ফোন করেছিল শানু। নম্বরটা ওর নয়। শানু বলেছিল, ভোরবেলায় দু’টো গাড়িতে খিদিরপুরের দিক থেকে ফিরছিল ওরা। অডি চালাচ্ছিল সাম্বিয়া। সেই গাড়িতে আর কেউ ছিল না। পিছনে একটা স্কোডা গাড়িতে জনি নামে আর এক যুবকের সঙ্গে ছিল শানু। গাড়ি চালাচ্ছিল জনি (এই জনি পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত। পরে চার্জশিট থেকে তাঁর নাম বাদ যায়)।’’ খালিদের দাবি, ‘‘ধর্মতলার দিকে যাওয়ার সময়ে পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে পড়ে অডি গাড়িটা। তখন এক কনস্টেবলের সঙ্গে বচসা জোড়ে সাম্বিয়া। তার পর হঠাৎ গতি বাড়িয়ে ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যায় সাম্বিয়া। তখনই দুর্ঘটনা ঘটে।’’
শানুরা তখন কী করেছিলেন? নিখোঁজ ডায়েরিতে শানুর বৌদি প্রিয়ঙ্কা লিখেছেন, ‘জনি ও শানু গাড়ি ঘুরিয়ে অন্য পথে চলে যায়।’ দাদার সঙ্গে শানুর কথোপকথনের মূল অংশগুলিই তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন বলে প্রিয়ঙ্কার দাবি। চিঠির শেষে তিনি লিখেছেন, ‘শানুর সঙ্গে কিছু না কিছু ঘটে যেতে পারে।’
কেন এমন আশঙ্কা? দুবাই থেকে আসা শানুর বোন বললেন, ‘‘শানুকে ফাঁসানো হতে পারে। ওকে দিয়ে জোর করে কিছু লিখিয়ে নেওয়া হতে পারে। সেই প্রস্তাবে রাজি না হলে জীবন সংশয়ও হতে পারে। দাদাকে ফোনে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে শানু নিজেই। তাই দুশ্চিন্তা করছি।’’ বোন জানান, শানুকে হোয়াটসঅ্যাপ করেছেন তিনি। কিন্তু সেই মেসেজ ‘ডেলিভারড’ হয়নি এখনও।
বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে শানুদের বাড়ি। শানুর বাবা পারভেজ খান ওরফে লালা হলেন নয়ের দশকের বৌবাজার বিস্ফোরণের মূল পাণ্ডা রশিদ খানের ভাগ্নে। ওই বিস্ফোরণের পর থেকেই লালা ফেরার। রশিদও জেলে। অনেক উত্থান-পতন দেখেছে পরিবার। শানুকে নিয়েও তাই চিন্তাটা চেপে বসছে। এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘সাম্বিয়া যে গাড়িতে ছিল, তা পুলিশ এক বারও বলছে না।’’ শানুর এক বন্ধু বললেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত সলমন খানের মামলার মতো ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে কি না কে জানে! এই সব আশঙ্কা থেকেই আমরা নিখোঁজ ডায়েরি করেছি। সাম্বিয়ার দাদু পুলিশকে বলেছিলেন, শানু গাড়ি চালাচ্ছিল। পুলিশও তা-ই বলছে। তবে কি ছক কষে প্রথম দিনেই শানুর নামটা তুলে দেওয়া হয়েছিল?’’
ঘনিষ্ঠরা জানালেন, পুলিশ শানুর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করেছে। কোনও কোনও মহল যে ভাবে শানুকে সাম্বিয়ার গাড়িচালক হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে, তাতেও আপত্তি রয়েছে পরিবারের। শানুর বোনের দাবি, ‘‘ও কোনও দিনও গাড়ি চালাত না। মাস ছয়েক আগে মুম্বই থেকে ফিরে দাদার ব্যবসা দেখাশোনা করছিল। এই জন্যই আমরা চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছি।’’
কী বলছে লালবাজার? পুলিশ জানাচ্ছে, শানুর খোঁজ শুরু হয়েছে। তবে পরিবারের কথায় কিছু ধোঁয়াশা থেকে যাচ্ছে। এক অফিসারের কথায়, ‘‘বিদ্যাসাগর সেতু ও হেস্টিংস মোড়ের সিসিটিভি ফুটেজ খুঁটিয়ে দেখেছি। অডি-র পিছনে দ্বিতীয় কোনও গাড়ি দেখা যাচ্ছে না।’’ অস্পষ্টতা আরও রয়েছে। শানুর দাদার দাবি, দুর্ঘটনার ভোরে তাঁরা ‘ফিরছিলেন’ বলে জানিয়েছিলেন শানু। কোথা থেকে ফিরছিলেন, জানাননি।
পুলিশি তদন্তে চোখে পড়ার মতো অগ্রগতি যদিও নেই। সোহরাব ও তাঁর দুই ছেলের দেখা মেলেনি এ দিনও। অডিতে পিষ্ট হয়ে বায়ুসেনা অফিসারের মৃত্যুর পর তিন দিন কাটতে চললেও শুক্রবার পর্যন্ত গ্রেফতারির সংখ্যা শূন্য!
সেই দিন রেড রোডে ঠিক কী ঘটেছিল? তারই ভিডিও দেখুন...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy