—প্রতীকী ছবি।
জঞ্জালের স্তূপে নিজের সন্তানকে ফেলে রেখে যাওয়ার অভিযোগ উঠল যে মায়ের বিরুদ্ধে, দিনের শেষে তাঁর হাতেই শিশুটিকে তুলে দিল পুলিশ? নারকেলডাঙায় শিশু উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের এই ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্ন তুলছেন সমাজকর্মী থেকে আইনজীবীদের একটা বড় অংশ। বিষয়টি জেনে অবাক রাজ্যের শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনও। কমিশন জানিয়েছে, বিষয়টি তারা খোঁজ নিয়ে দেখবে।
আইনজীবীদের প্রশ্ন, ‘‘পুলিশ কেন জুভেনাইল জাস্টিস আইনে অভিযোগ দায়ের করে শিশুটিকে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির (সিডব্লিউসি) কাছে পাঠাল না?’’ তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারত। পুলিশ অবশ্য শনিবারই জানিয়েছিল, পারিবারিক বিবাদ থেকে ওই ঘটনা ঘটেছিল। মহিলার উপরে নজর রাখা হবে। যদিও এক আইনজীবী বলেন, ‘‘শিশুটির মা ফের একই কাজ করলে পুলিশ কি দায়িত্ব নেবে?’’ কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘শিশুটিকে পুলিশ
চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে পাঠাতে পারত।’’
গত শুক্রবার রাতে নারকেলডাঙার কসাই বস্তিতে ন’মাসের এক শিশু উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য দেখা দেয়। পুলিশ গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। জানা যায়, শিশুটির বাবা মহম্মদ তনভির নামে এক ব্যক্তি। মায়ের নাম মুমতাজ বেগম। গত জুলাইয়ে ওই মুমতাজের বিরুদ্ধেই বয়সে দ্বিগুণ ছোট স্বামী তনভিরের কান কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। কয়েক দিন ফেরার থাকার পরে গ্রেফতার হন মুমতাজ।
এর পরে শুক্রবার রাতে তিনি নিজের সন্তানকে তনভিরদের বাড়ির কাছে জঞ্জালের স্তূপে ফেলে গিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পরে শিশুটিকে মুমতাজের হাতেই তুলে দেয় নারকেলডাঙা থানার পুলিশ। শনিবারই মুমতাজ বলেছিলেন, ‘‘স্বামী আমার বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেবে বলেও তোলেনি। তাই মনে হয়েছিল, জেলে যেতে হলে ছেলেকে দেখব কী করে! আমার বোনকে বলেছিলাম তনভিরদের পাড়ায় ছেলেকে রেখে আসতে।’’ সেই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, আর এমন কাজ করবেন না। সন্তানের খেয়াল রাখবেন।
যদিও শিয়ালদহ আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুলিশ ঠিক কাজ করেনি। জুভেনাইল জাস্টিস আইনে এফআইআর করে শিশুটিকে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে পাঠানো উচিত ছিল।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘মহিলা ইতিমধ্যেই একটি ঘটনায় অভিযুক্ত। ওই ঘটনার শুনানিতে আমি নিজে ছিলাম। জামিন পেয়েও দেখছি, মহিলা অপরাধমূলক কাজ করে চলেছেন। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকেই তো পুলিশের সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। শিশুটি যে মুমতাজ নামের ওই মহিলার কাছে নিরাপদ নয়, তা বোঝা উচিত ছিল।’’ আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল
অবশ্য বলেন, ‘‘আমার মনে হয় পুলিশ ঠিকই করেছে। যতই হোক, মহিলা শিশুর মা তো! সে মায়ের কাছেই ভাল থাকবে।’’
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল অবশ্য সৌরীনবাবুর সঙ্গে একমত নন। তাঁর কথায়, ‘‘মহিলা যদি সত্যিই সন্তানকে ফেলে রেখে যান, তা হলে বুঝতে হবে তিনি স্বাভাবিক আচরণ করছেন না। তিনি আদৌ শিশুটির দেখভাল করতে পারবেন কি না, সেটা সবার আগে দেখা দরকার।’’ এলাকাটি কলকাতা পুলিশের ইস্টার্ন সাবার্বান ডিভিশনের অন্তর্গত। ডিসি দেবস্মিতা দাসকে এ ব্যাপারে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। এসএমএস এবং হোয়াটসঅ্যাপেরও উত্তর দেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy