ডায়মন্ড হারবার রোড।
কামালগাজি কানেক্টর: জল-জমা, ঢেউ খেলানো রাস্তায় পড়তে পড়তে টাল সামলালেন রেনকোট-পরা মোটরবাইক আরোহী। অস্ফুট মন্তব্য, ‘লাইফলাইন না ছাই! বাইপাসটা লাইফ হেল করে দিচ্ছে!’ বাস্তবিকই গাড়ি চলছে নৌকোর মতো দুলতে-দুলতে। ছোটখাটো দুর্ঘটনা এ তল্লাটে জলভাত। কুমড়োখালি, ফরতাবাদ এলাকার রাস্তায় বড় বড় গর্ত। বিক্ষিপ্ত ভাবে ইটের খোয়া ফেলে তা বোজাচ্ছেন কেএমডিএ-কর্মীরা।
অজয়নগর-হাইল্যান্ড পার্ক: ঝকঝকে বিপণির সামনে জলে টইটম্বুর গর্ত। বুঝতে না-পেরে আকছার হোঁচট খাচ্ছেন পথচারীরা। কেনাকাটা করতে এসে ব্যাগপত্র সামলে সন্তোষপুরের রমা চৌধুরী ঝাঁঝিয়ে ওঠেন, ‘‘ফি-বর্ষাতেই এখানকার রাস্তার এই হাল হয়। প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয় না।’’ বাইপাসের অর্ধেকটা দখল করে মেট্রোর কাজ চলছে। আর অজয়নগর মোড় থেকে হাইল্যান্ড পার্ক পর্যন্ত বিস্তৃত ‘অ্যাপ্রোচ রোড’টি খানাখন্দ ও জলে ভরা।
কসবা কানেক্টর: রুবি হাসপাতালের মোড়টুকু সহনীয় বলা যায়! তবে সায়েন্স সিটির দিকে এগিয়ে শান্তিপল্লির শুল্ক দফতরের আবাসনের সামনেই পিচের আস্তরণ উঠে রাস্তার ছাল-চামড়া বেআব্রু। এখানেও ‘অ্যাপ্রোচ রোড’টি খন্দ আর জলে ভরে রয়েছে। কোনওমতে তা মাড়িয়েই যাতায়াত করছেন পথচারীরা।
তারাতলা: উড়ালপুলে ওঠার মুখেই পিচ-ওঠা রাস্তায় পাথরকুচি বেরিয়ে পড়েছে। ফলে, গাড়ির চাকার দফারফা। তারাতলা থেকে জোকা ট্রামডিপো পর্যন্ত বিস্তৃত ডায়মন্ড হারবার রোডের নরক-যন্ত্রণা শুরু এখান থেকেই।
১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ড: মেট্রোর কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। কিন্তু রাজপথের মোড়ের পিচ ও পাথরকুচির আস্তরণ উঠে বেরিয়ে পড়েছে ইটের কঙ্কাল। বর্ষার শহরে সামান্য তাপ্পির প্রলেপও পড়েনি। গাড়ি, বাস, অটোর পথে পদে-পদে ডোবার ফাঁদ। বেহালা থানার সামনের রাস্তাও সঙ্গীন।
ম্যান্টন: মেট্রোর কাজের অংশটুকু ছেড়ে যেটুকু অবশিষ্ট, তাতে কোনও মতে দুটো গাড়ি পাশাপাশি যাচ্ছে। এবড়ো-খেবড়ো রাস্তায় সফর মানে অহরহ ঝাঁকুনি-যন্ত্রণা। রাস্তার ধারে ঠিকাদার সংস্থার সাইনবোর্ডে স্লোগান, ‘টুডেস পেন, টুমরোজ গেন’! সে-দিকে তাকিয়ে ধবধবে এসইউভি-র চালক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, ‘ভবিষ্যতের ভরসাতেই আছি!’
বেহালা চৌরাস্তা: চার মাথার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে শুধুই বড় বড় গর্তের প্রদর্শনী। এক দিকের গর্ত বাঁচাতে কাত হওয়া গাড়ি পরমুহূর্তে অন্য গর্তে ঠোক্কর খাচ্ছে। বাস, অটো, বেসরকারি গাড়ি— সকলের অবস্থাই তথৈবচ।
সখেরবাজার: মেট্রোর কাজের জন্য এর পরে সিধে এগোনো অসম্ভব। সব গাড়ি ঘুরে যাচ্ছে জেমস লং সরণি হয়ে। পরিচর্যাহীন রাস্তায় দু’পা এগোতেই গর্তে ঠোক্কর অনিবার্য। দক্ষিণ ২৪ পরগনার দিক থেকে শহরে ঢোকা গাড়ি ও কলকাতা থেকে উপকণ্ঠমুখী গাড়ির চাপেও রাস্তার দফা রফা।
গিরিশ পার্ক, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ: শহরের অন্য প্রান্তে উত্তর ও মধ্য কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের অবস্থাও সঙ্গীন। গিরিশ পার্ক মোড়ের আগে রাস্তায় অজস্র ছোট ছোট গর্ত। অ্যাসফল্টের রাস্তা ভেঙে কোথাও কোথাও ঢেউ-খেলানো চেহারা। জল জমে রাজপথ জুড়ে বিক্ষিপ্ত ‘ডোবা’। একই হাল মুক্তারামবাবু স্ট্রিটেরও। ফলে ঝাঁকুনি খেতে খেতে শামুকের গতিতে গাড়ি চলছে উত্তরের দিকে। ট্রাফিক পুলিশের আফশোস, এমন রাস্তায় যানজট ঠেকানো অসম্ভব।
কী বলছেন, সরকারি কর্তারা? রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই ‘দুর্গতি’র জন্য মেট্রোর কাজকেই দুষছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মেট্রোর কাজ যত দিন চলছে, মানুষের ভোগান্তি পুরোপুরি এড়ানো যাবে না।’’ কিন্তু বর্ষায় রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ ও দুর্ঘটনা রুখতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজ্য সরকার? সদুত্তর নেই মন্ত্রীর কাছে। নিউ গড়িয়া থেকে বিমানবন্দর এবং বি বা দী-বাগ থেকে জোকা পর্যন্ত মেট্রোর কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটে়ড-এর এক কর্তা অবশ্য দায় নিতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘পূর্ত দফতর ও কেএমডিএ-কে সবিস্তার জানিয়েই আমরা কাজ করছি।’’
‘জাতীয় সড়ক’ বলে চিহ্নিত ডায়মন্ড হারবার রোডটি দেখার দায়িত্ব পূর্ত দফতরের। জনৈক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বৃষ্টির সময়ে রাস্তার মেরামতি কী করে হবে? বর্ষার পরেই রাস্তা সারাই করা যাবে।’’
ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী, সুদীপ্ত ভৌমিক, সুদীপ আচার্য এবং বিশ্বনাথ বণিক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy