সপ্তাহখানেক আগে থেকেই ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ অভিযোগ করেছিলেন, শাসক দল প্রভাবিত চিকিৎসক-সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’ (পিডিএ)-এর কিছু নেতা তাঁদের ২১ জুলাই উপলক্ষে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় তৈরি অস্থায়ী স্বাস্থ্যশিবিরে যোগ দিতে চাপ দিচ্ছেন। আরও অভিযোগ, শিবিরে না গেলে পরবর্তীকালে বাজে জায়গায় বদলি বা পদন্নোতি পিছিয়ে দেওয়ার প্রচ্ছন্ন হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।
ওই চিকিৎসকেরা আরও জানিয়েছিলেন, বিতর্ক এড়াতে ‘ক্লিনিক্যাল’ বিষয় অর্থাৎ মেডিসিন, সার্জারি, ইএনটি, স্কিন, গাইনি, কার্ডিওলজির মতো বিষয়ের চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যশিবিরে যেতে জোর করা হয়নি। মূলত ‘টার্গেট’ ছিলেন ‘নন-ক্লিনিক্যাল’ বিষয় অর্থাৎ কমিউনিটি মেডিসিন, মাইক্রোবায়োলজি, অ্যানাটমি, ফিজিওলজি-র মতো বিষয়ের চিকিৎসকেরা। ওই বিভাগগুলিতে ঘুরে ঘুরে কিছু সিনিয়র চিকিৎসক শিবিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
অ্যানাটমির এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আমি যেতে পারব না জানাতে ওরা সম্প্রতি আর জি কর থেকে উত্তরবঙ্গে বদলি হওয়া এক চিকিৎসকের নাম করে বলেন, ‘ওঁর সঙ্গী হওয়ার ইচ্ছা থাকলে না আসতে পারেন।’ এটা তো হুমকি।’’ কমিউনিটি মেডিসিনের আর এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘যাঁরা যাবেন না বলেছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করে ‘দেখে নেওয়া’র কথা বলেছে পিডিএ-র একাধিক সদস্য-ডাক্তার।’’
এ ব্যাপারে হাসপাতালের যে দুই চিকিৎসকের নাম সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছিল, তাঁরা হলেন মৈত্রেয়ী বন্দ্যোপাধ্যায় ভক্ত এবং রুদ্রদেব মেউর। হাসপাতালের এক পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি সেজে ফোন করা হয়েছিল দু’জনকেই। মৈত্রেয়ীদেবী বললেন, ‘‘চলে আসবেন মঙ্গলবার দুপুরের দিকে কলকাতা স্টেশনের ক্যাম্পে। সমাবেশে আসা লোকের সংখ্যা তখনই সবচেয়ে বাড়বে। হাসপাতালের কাজটা একটু অ্যা়ডজাস্ট করে নেবেন। এটাও তো জনগণের কাজ।’’ যদি কোনও ভাবে আটকে যাই, তা হলে কারও কোপে পড়তে হবে কি না জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো কাউকে বাধ্য করছি না। তবে আসবেন এটা আশা করি।’’ আর রুদ্রদেববাবুর কথায়, ‘‘কলকাতা স্টেশনে তিনটে শিফ্টে আর জি করের চিকিৎসকেরা যাবেন। সকাল ৬টা থেকে ১০টা, ১০টা থেকে ২টো আর ২টো থেকে সন্ধ্যা ৬টা। মাঝের শিফ্টে চলে আসুন। শিবিরে একটা খাতা থাকবে। সেখানে নাম, কোন বিভাগ সেটা এন্ট্রি করে দেবেন।’’
সরকারি চিকিৎসকদের আর এক সংগঠন, ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর অভিযোগ, ‘‘এই রেজিস্ট্রেশন খাতাটিই হল পিডিএ-র অস্ত্র। সেখানে যাঁর নাম থাকবে না, তাঁকেই শাসক গোষ্ঠী-ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক সংগঠন কালো তালিকাভুক্ত করবে।’’ যদিও পিডিএ-র তরফে শান্তনু সেনের দাবি, ‘‘আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে।’’
মঙ্গলবার সকালে আর জি কর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, অধিকাংশ নন-ক্লিনিক্যাল বিভাগেই চিকিৎসক নেই। ফলে ব্যাহত হয়েছে পঠনপাঠন। অনেক ক্লাসই হয়নি। রাস্তাঘাটে সমস্যায় পড়ার আশঙ্কায় সংখ্যায় কম এসেছেন রোগীরাও। হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের অধিকাংশও সমাবেশে যাওয়ায় পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা, অস্ত্রোপচারে সাহায্য করা, ডাক্তারদের লগবুক আনার মতো বহু কাজেও বাধা পড়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy