আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
বছর পাঁচেক আগে হৃদ্যন্ত্রের অস্ত্রোপচার হয়েছিল। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পেসমেকার বসেছিল। কিন্তু ফের সমস্যা দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পেসমেকার কাজ করছে না। এখন এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে ঘুরছেন। অভিযোগ, দায়িত্ব নিতে নারাজ আর জি কর কর্তৃপক্ষ।
বরানগরের বাসিন্দা বছর চৌষট্টির গৌরী দাসের ২০১৪ সালে তাঁর হৃদ্যন্ত্রে সমস্যা দেখা দিলে আর জি কর হাসপাতালের কার্ডিওভাসকুলার বিভাগে অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু সম্প্রতি ফের সমস্যা শুরু হলে পরিবারের তরফে গৌরীদেবীকে আর জি করেই নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক জানান, দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হবে। অভিযোগ, এর পরে গৌরীদেবীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে গেলে সেখান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে শয্যা খালি নেই। কয়েক দিন পরে ফের তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। অভিযোগ, তখনও তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। বরং হাসপাতালের তরফে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কিংবা এসএসকেএমে রোগী নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। গৌরীদেবী বলেন, ‘‘যে হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হল, তাদের কোনও দায়িত্ব নেই? কত দিন ধরে ঘুরছি, ন্যূনতম পরিষেবা পাচ্ছি না।’’
গৌরীদেবী একাই নন। কয়েক মাস ঘুরেও অস্ত্রোপচারের দিন পাননি হাবড়ার রাবেয়া বিবি। বারবার আর জি কর হাসপাতালে গিয়ে ফিরতে হয়েছে তাঁকেও। হৃদ্যন্ত্রের ধমনীতে তাঁর সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসকেরা দ্রুত অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়েছেন। অভিযোগ, হাসপাতাল অস্ত্রোপচারের দিন নির্ধারণ করতে না পেরে রাবেয়াকেও এসএসকেএমে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। রাবেয়ার অভিযোগ, ‘‘এত মাস এখানে ঘুরলাম। তার পরেও অন্য হাসপাতালে পাঠাচ্ছে। এত বড় হাসপাতাল কিছুই কি নেই?’’
প্রায় এক দশক আগে রাজ্যে হৃদ্রোগের চিকিৎসা উন্নত করতে কলকাতার দু’টি মেডিক্যাল কলেজ বেছে নিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। আর জি কর ও এসএসকেএমে তৈরি হয়েছিল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলার সায়েন্সেস। বহুতল তৈরি হলেও আর জি করের পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ উঠছে। অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের পরে
ফলোআপ করতে যাওয়া রোগীদেরও ভর্তি নিতে নারাজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্সের অভাবে ধুঁকছে আর জি করের হৃদ্রোগের ওই বিভাগটি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগীদের হাসপাতালে শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা করেই পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে এসএসকেএম কিংবা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, আর জি করের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পৌঁছেছিল স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার কাছেও। কয়েক মাস আগে স্বাস্থ্যকর্তারা কলকাতার পাঁচ মেডিক্যাল কলেজের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। অধিকর্তার নির্দেশ ছিল, ‘রেফার’-এর কারণ স্পষ্ট না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার পরেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি বলেই দাবি ভুক্তভোগীদের।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আর জি করে মাসে সর্বাধিক আটটি বাইপাস অস্ত্রোপচার হয়। প্রতিটি বাইপাস সার্জারি করতে প্রায় ছয় থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। মাত্র চার জন চিকিৎসক এত সময়ের অস্ত্রোপচার ধারাবাহিক ভাবে
করতে পারছেন না। তাই আর জি করের একাধিক রোগীকেই এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পেসমেকার মাসে শ’খানেকের বেশি বসানো যায় না। তাই রোগীদের অস্ত্রোপচারের দিন নির্ধারণের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ছ’ থেকে আট মাস। হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘পর্যাপ্ত শয্যা কিংবা চিকিৎসক কিছুই নেই। এ ভাবে এ রকম প্রতিষ্ঠান চালানো যায় না। বাধ্য হয়েই রোগীকে রেফার করতে হচ্ছে।’’
হৃদ্রোগের চিকিৎসায় উন্নত পরিষেবা দিতে স্বাস্থ্য দফতর আলাদা প্রতিষ্ঠান তৈরি করার পরেও কেন রোগীদের পরিষেবা নিয়ে এত অভিযোগ? কেন রোগীদের মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে? চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতি নিয়ে কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা কী? আর জি করের সুপার মানস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি অবশ্য এর কোনও উত্তরই দেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy