ভোগান্তি: পুজোর অস্থায়ী কাঠামোয় দখল হয়ে গিয়েছে ফুটপাত। কোনও রকমে ফাঁক গলে যাতায়াত পথচারীদের। মঙ্গলবার, হাতিবাগান এলাকায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
শহরে ফুটপাত উধাও। অগত্যা পুজোমুখী জনতার ঢল নেমে এসেছে রাস্তায়। অভিযোগ, তাতেই তীব্র যানজট শহর জুড়ে। কোথাও গাড়ির চাকা এতটাই শ্লথ যে, সামান্য রাস্তা পেরোতেই বহু ক্ষণ সময় লেগে যাচ্ছে! কোথাও আবার গাড়ি নড়ছেই না, ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েই থাকতে হচ্ছে! ভিআইপি রোডের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় আবার অ্যাম্বুল্যান্সও আটকে থাকছে বলে অভিযোগ। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের হুঁশ ফিরছে না। পুজোর ভিড়ে ভোগান্তি হলে কার্যত ধরেই নেওয়া হচ্ছে, ‘‘ক’দিন এমনটা তো হবেই!’’
ভুক্তভোগীদের যদিও দাবি, এমনটা হওয়ার কথাই নয়। নানা মহল থেকে অভিযোগ পেয়ে শহর ঘুরে দেখতে গিয়ে মঙ্গলবার চোখে পড়ল, সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ভিআইপি রোডের। গোলাঘাটায় শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোর প্রধান প্রবেশপথ যে দিকে, ভিআইপি রোডে তারই ঠিক উল্টো দিকের ফুটপাতে পর পর বসানো হয়েছে বিজ্ঞাপনের প্রচারের কাঠামো। সেখানে ফুটপাত বন্ধ করে বসেছে বিজ্ঞাপনী গেটও। এ ছাড়াও, পুলিশের সহায়তা কেন্দ্র এবং বেসরকারি সংস্থার স্টলের জন্যও ফুটপাত দখল হয়ে গিয়েছে। বিকেলে তো বটেই, দুপুরেও সেখানে ঠাকুর দেখতে হাজির হওয়া লোকের ভিড়। কিন্তু ফুটপাতে জায়গা না পেয়ে তাঁরা রাস্তায় নেমে এসেছেন। কেউ প্রবল গাড়ির জটের মধ্যেই ছুটে রাস্তা পার হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, কেউ আবার মাঝপথে এসেও ভয়ে উল্টো দিকে ফিরে যাচ্ছেন! পুলিশ কার্যত দর্শকের ভূমিকায়। চোখে পড়ল না যানশাসনের কোনও পৃথক বন্দোবস্তও।
দর্শনার্থীরা যেখানে রাস্তায় নেমে আসছেন, সেখানেই পর পর বাস, গাড়ি দাঁড়িয়ে। গণপরিবহণ থেকে তো বটেই, নিজস্ব গাড়ি থেকেও অনেকেই নেমে পড়ছেন ইচ্ছে মতো। ওই অংশেই বেশ কিছু জায়গায় গাড়ি পার্কিংও করানো হচ্ছে। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে পুজোর ভিড়ের জট কাটছে না। একই অবস্থা দমদম পার্কের তরুণ দল এবং ভারতচক্রের পুজো ঘিরেও। সেখানেও স্টল, বিজ্ঞাপনী গেট ও কাঠামোর জেরে ফুটপাত গ্রাস হয়ে গিয়েছে। গাড়ি চলার রাস্তায় একই সঙ্গে নেমে আসছেন মানুষও।
কিছুমাত্র আলাদা নয় কলকাতা পুলিশ এলাকার পরিস্থিতিও। দেখা গেল, গ্রে স্ট্রিটের মতো সঙ্কীর্ণ রাস্তারও ফুটপাত উধাও হয়ে গিয়েছে। সেখানকার একটি পুজোর প্রশ্রয়ে ফুটপাত সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়ে স্টল বাঁধা হচ্ছে। এ ছাড়াও রয়েছে হোর্ডিংয়ের বাঁশ এবং বিজ্ঞাপনী কাঠামো। গেটও বসেছে ফুটপাতের উপরেই। আর এই কারণেই রাস্তায় নেমে এসেছেন পথচারীরা। গাড়ি, অটো, লরির সঙ্গে লড়াই করে কোনও মতে এগিয়ে চলেছেন তাঁরা। রাস্তা ফাঁকা পেতে নাগাড়ে হর্ন দিয়ে চলেছেন গাড়ির চালকেরা। একই অবস্থা উত্তরের অরবিন্দ সরণি, রবীন্দ্র সরণি, বাগবাজার, বেলেঘাটা, শ্যামবাজার, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, বৌবাজার চত্বরেও। দক্ষিণের গড়িয়াহাট, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, চেতলা এবং আলিপুর চত্বরে ঘুরেও দেখা মিলেছে একই ছবির। বিকেলের পরে এই সব জায়গার পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
এ প্রসঙ্গে এ দিন আলাদা করে আর মন্তব্য করতে চাননি শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের কর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, সারা কলকাতায় যা ঘটছে, সেখানেও তা-ই হচ্ছে। ফলে আলাদা করে দায় নেওয়ার ব্যাপার নেই তাঁদের। দমদম পার্ক তরুণ দলের পুজো কর্তা বিশ্বজিৎ প্রসাদের যদিও দাবি, ‘‘গেট না করলে তো পুজোই বন্ধ হয়ে যাবে। বিজ্ঞাপন আসবে কোথা থেকে!’’ একই রকম দাবি দমদম পার্ক ভারতচক্রের পুজো কর্তা প্রতীক চৌধুরীর। তিনি বললেন, ‘‘পুজো এলেই এ সব নিয়ে আলোচনা হয়। রাজনৈতিক নেতারা তো সারা বছর ওখানে গেট করে রাখেন, সেই নিয়ে কোনও প্রতিবাদ হয় না।’’
দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ পার্থ বর্মা জানান, এত বড় উৎসবে এত মানুষ অংশগ্রহণ করেন, অনেকের রুজি রোজগারের বিষয় জড়িত এতে। সে সব বিবেচনায় রেখে অনুমতি দেওয়া হয়। তবে পথচারীদের চলাচল থেকে শুরু করে যান চলাচল যাতে স্বাভাবিক থাকে, সেই বিষয়ে পুজোর আয়োজক, পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে সচেষ্ট থাকতে বলা হয়। সকলে চেষ্টাও করছেন। কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ তথা পুরসভার বিজ্ঞাপন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত দেবাশিস কুমার বললেন, ‘‘পুজোর এই সময়ে কিছুটা ছাড় থাকে। তা ছাড়া কাকে ছেড়ে কাকে বলব? পুজোর ক’দিন সকলেই একটু নিয়ম ভাঙেন।’’ কিন্তু পুলিশ কেন কড়া পদক্ষেপ করে না? বিধাননগর কমিশনারেট বা লালবাজারের কারও থেকেই এ ব্যাপারে সদুত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy