ভুয়ো পাসপোর্ট-কাণ্ডের পরে নতুন পাসপোর্টের আবেদন ও পুনর্নবীকরণের সময়ে জমা দেওয়া নথির প্রতিলিপি যাচাই করতে পাঠাতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট নথি প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের কাছে। সেখান থেকে উত্তর মিললে যাচাইয়ের কাজ শেষ করে তা পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হচ্ছে। অভিযোগ, সমস্ত নথির প্রতিলিপি এ ভাবে যাচাই করতে পাঠানোয় তার রিপোর্ট আসতে অনেক সময় লাগছে। সেই সঙ্গেই জমা দেওয়া বিভিন্ন নথির তথ্য আবেদনকারীর বাড়িতে গিয়ে ভাল করে খুঁটিয়ে দেখার কাজ করছেন পাসপোর্টের সঙ্গে যুক্ত পুলিশ অফিসারেরা। এই জোড়া কারণের ধাক্কায় নতুন পাসপোর্টের আবেদন ও পুনর্নবীকরণের সময় বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকটাই। ফলে, বিভিন্ন থানায় জমে গিয়েছে পাসপোর্টের আবেদন। ভোগান্তির মুখে পড়েছেন পাসপোর্টের আবেদনকারীরাও।
এ বার তাই পাসপোর্টের নথি খতিয়ে দেখার কাজ দ্রুত শেষ করতে ও আবেদনকারীকে দ্রুত পাসপোর্ট দিতে থানায় থাকা স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের অফিসারদেরও কাজে লাগাতে শুরু করেছে লালবাজার। সূত্রের খবর, আপাতত পাসপোর্ট অফিসারদের পাশাপাশি, গোটা মার্চ মাস জুড়ে পাসপোর্ট যাচাইয়ের কাজ করবেন থানায় থাকা অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিভিশনাল অফিসারেরাও (এডিও)। প্রাথমিক ভাবে কলকাতা পুলিশের তিনটি ডিভিশনে সব চেয়ে বেশি পাসপোর্টের আবেদন জমে গিয়েছে। তাই ওই তিনটি ডিভিশনে ২৮ জন এডিও-কে পাসপোর্ট যাচাইয়ের কাছে লাগানো হয়েছে। প্রয়োজনে আগামী মাসেও ওই কাজ করবেন তাঁরা।
এক পুলিশ অফিসার জানান, পাসপোর্ট যাচাইয়ের কাজ দ্রুত শেষ করে রিপোর্ট দিতে এডিও-দের কাজে লাগানোর আগে তাঁদের তিন দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বাকি থানাতেও তাঁদের কাজে লাগানো হবে। উল্লেখ্য, স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের অধীনে দুই অফিসার (ডিও এবং এডিও) থানায় থেকে গোপনে বিভিন্ন তথ্য জোগাড় করেন। তাঁদের এক জনকেই আপাতত পাসপোর্ট যাচাইয়ের কাজে লাগানো হয়েছে। তবে, তিন দিনের সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণে ওই কাজ কতটা রপ্ত করতে পেরেছেন তাঁরা, সেই প্রশ্ন উঠছে। বর্তমানে প্রতিটি থানায় পাসপোর্ট যাচাই করতে এক জন করে পুলিশ অফিসার এবং তাঁর এক জন সঙ্গী থাকছেন। এ ছাড়া, সিকিয়োরিটি কন্ট্রোল অর্গানাইজ়েশন বা এসসিও-র পাসপোর্ট অফিসারেরা পাসপোর্ট যাচাইয়ের কাজ করে থাকেন। এ বার তাঁদের সঙ্গে ওই কাজ করবেন এডিও-রা।
গত ডিসেম্বরে ভুয়ো পাসপোর্ট-কাণ্ডের পরে পাসপোর্ট যাচাইয়ে থানার ওসিদের সতর্ক হতে নির্দেশ দেন নগরপাল। পাসপোর্ট যাচাইয়ের সার্বিক প্রক্রিয়া খুঁটিয়ে পরীক্ষা করতেও বলা হয় সহকারী নগরপাল ও ডিভিশনাল উপ-নগরপালদের। কারণ, তদন্তে জানা গিয়েছিল, ভুয়ো নথি দিয়ে এ রাজ্যের একটি চক্র বাংলাদেশি নাগরিকদের ভুয়ো পাসপোর্ট বানিয়ে দিয়ে বিদেশে পালাতে সাহায্য করেছে। তদন্তে পুলিশের একাংশের গাফিলতিও সামনে আসে। গ্রেফতার হন পুলিশের এক অবসরপ্রাপ্ত পাসপোর্ট যাচাই অফিসার। এর পরেই কড়া অবস্থান নেয় লালবাজার। এক পুলিশ অফিসার জানান, এর ফলে বিভিন্ন থানায় জমে গিয়েছে ২০০-৩০০টি পাসপোর্টের আবেদন। সব চেয়ে বেশি আবেদন জমেছে কলকাতা পুলিশের তিনটি ডিভিশন— যাদবপুর, বেহালা ও দক্ষিণ-পূর্বে। আগে যেখানে মাসে হাজার পাঁচেক আবেদন পাসপোর্ট যাচাইয়ের জন্য জমা হত, তা গত দু’মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ হাজারে! সূত্রের খবর, তাই ওই তিন ডিভিশনের থানাগুলিতেই পাসপোর্ট যাচাইয়ের কাজে লাগানো হয়েছে এডিও-দের।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)