Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
কলরবে নেই প্রেসিডেন্সি

অশালীন বিক্ষোভ উড়িয়ে সমাবর্তনে পড়ুয়ারা

উপাচার্যকে ঘেরাও করে রেখে সমাবর্তন অনুষ্ঠান নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছিলেন বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা। শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার সন্ধে পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ, হই-হট্টগোলের বিরামও ছিল না। কিন্তু সে সব পাশ কাটিয়েই এ দিন বিকেলে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান হয়েছে।

উপাচার্যের ঘরেই দেওয়াল লিখন!

উপাচার্যের ঘরেই দেওয়াল লিখন!

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৫ ০৩:১৯
Share: Save:

উপাচার্যকে ঘেরাও করে রেখে সমাবর্তন অনুষ্ঠান নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছিলেন বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা। শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার সন্ধে পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ, হই-হট্টগোলের বিরামও ছিল না। কিন্তু সে সব পাশ কাটিয়েই এ দিন বিকেলে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন আচার্য তথা পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। প্রেসিডেন্সির রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার জানান, ৬৮৪ জনের মধ্যে ৬০০-র বেশি ছাত্রছাত্রী সমাবর্তনে যোগ দিয়েছেন।

‘হোক কলরব’-এর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যা হয়েছিল, ঘেরাও-বিক্ষোভের প্রেসিডেন্সিতে তার পুনরাবৃত্তি হল না। বিশৃঙ্খলা ও অশালীন বিক্ষোভে সামিল হওয়ার বদলে বেশির ভাগ পড়ুয়া সমাবর্তনে যোগ দেওয়াতেই ঘটল এমনটা। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনকে মান্যতা দিয়ে প্রশাসনও এ দিন বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনও পদক্ষেপ করেনি। রাতের অন্ধকারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের উপরে পুলিশের লাঠি চালানোর ঘটনায় যাদবপুরে উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর পদত্যাগের দাবিতে পড়ুয়াদের পাশাপাশি নাগরিক সমাজও সরব হয়েছিল। গত ডিসেম্বরে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ওই একই দাবিতে আচার্য তথা রাজ্যপালের কাছ থেকে পদক নিতে অস্বীকার করেন বাংলা বিভাগের ছাত্রী গীতশ্রী সরকার। ঘটনাচক্রে প্রেসিডেন্সিতেও সমাবর্তন হল এমন একটা সময়ে, যখন সেখানে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ঘেরাও আন্দোলন চলছে।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসা নিয়ে শুক্রবার এক দল পড়ুয়া বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষুব্ধদের একাংশ মুখ্যমন্ত্রীর দিকে যেতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি হয়। এর পর পুলিশি নিগ্রহের অভিযোগ তুলে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে এবং সমাবর্তন অনুষ্ঠান বয়কটের ডাক দিয়ে শুক্রবার বিকেল থেকে শ’দেড়েক পড়ুয়া উপাচার্যকে তাঁর ঘরের মধ্যে ঘেরাও শুরু করেন। উপাচার্যের সঙ্গেই রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ামক এবং কয়েক জন বিভাগীয় প্রধান ঘেরাও হন। শুরুতে পড়ুয়াদের একাংশের মনোভাব এমন ছিল যে, ঘেরাও উঠবে না এবং সমাবর্তন অনুষ্ঠান নিয়ে কী হবে, সেটা তাঁরা ভাবতে রাজি নন।

উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়ার ঘরে বসেই পোস্টার লিখছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়া।
দিনের শেষে অবশ্য এ হেন বেপরোয়া বিক্ষোভকে পাত্তা না দিয়ে সমাবর্তনে সামিল হল প্রেসিডেন্সি।

কিন্তু দুপুর থেকেই বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের একাংশ সমাবর্তন নিয়ে নরম হতে শুরু করেন। প্রথমে তাঁদের মত ছিল, সমাবর্তন বয়কট করা হবে। পরে তাঁরা এটিকে একটি আবেদন বলে উল্লেখ করেন। তাঁদের কেউ কেউ বলেন যে, সমাবর্তনে বাধা দেওয়া উচিত নয়। বিকেলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা এসে কার্যত কর্ডন করে অনুরাধা লোহিয়াকে তাঁর ঘর থেকে বার করে ডিরোজিও হল-এ নিয়ে যান। মাটিতে শুয়ে পড়েও আন্দোলনকারীদের একাংশ তাঁদের আটকাতে পারেননি।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় উপাচার্য সরাসরি বলেন, ‘‘গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ধন্যবাদ। তাঁদের সহযোগিতায় এই সমাবর্তন সফল হল।’’ অনুরাধাদেবীর কথায়, ‘‘প্রতিটি চ্যালেঞ্জই আসলে এক-একটি সুযোগ। কোনও কিছুই আমাদের সমাবর্তনের পথে বাধা হতে পারেনি এবং তার কৃতিত্ব আমাদের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।’’

অনুরাধাদেবীর বক্তব্যে ডিরোজিও হল হাততালিতে ভেসে যায়। অদিতি সাহা, প্রিন্স দাশগুপ্তের মতো পড়ুয়ারা বলেন, ‘‘সমাবর্তনে পদক ও শংসাপত্র পাওয়া আমাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে। এটা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাই একে বয়কটের প্রশ্নই ওঠে না। আমরা সেটা নিতে এসেছি।’’

রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী তাঁর বক্তৃতায় যেমন অনুরাধাদেবীর নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন তেমনই অনুষ্ঠান শেষে প্রেক্ষাগৃহের বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা এখানে পড়তে আসে, বিক্ষোভ দেখাতে নয়। যা ঘটছে, সেটা মোটেই ভাল লক্ষণ নয়।’’

পড়ুয়াদের বড় অংশের ও শিক্ষকদের সমর্থন না-পেয়ে এ দিন আন্দোলনকারীদের বেশ দমে যেতেও দেখা গিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গাড়ির পাশে স্লোগান আর চিৎকারের বাইরে তাঁরা তেমন কোনও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। যদিও আন্দোলনকারীদের ছক ছিল, সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এলে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে তাঁরা ঢুকতে বাধা দেবেন। বিকেলে হঠাৎই পুলিশকে সক্রিয় হতে দেখে তাঁরা অবরোধের তোড়জোড় শুরু করেন। কিন্তু এক আন্দোলনকারীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ছেড়ে দে, এটা রাজ্যপালের গাড়ি।’’ রাজ্যপালের গাড়ি বিক্ষোভকারীদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখা যায়, সেই গাড়ির ভিতরে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে বসে রয়েছেন শিক্ষামন্ত্রীও। সমাবর্তন শেষে আন্দোলনকারীরা যখন বিক্ষোভের ছক কষতে ব্যস্ত, তারই ফাঁকে নির্বিঘ্নে বেরিয়ে যান রাজ্যপাল ও শিক্ষামন্ত্রী।

শুক্রবার রাতেও মনে করা হচ্ছিল, পড়ুয়াদের ঘেরাও-বিক্ষোভে সমাবর্তন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা উপাচার্যের ঘর থেকে বেরিয়ে এলেও ঠিক তার বাইরে বসে থাকেন। রাতে অবশ্য উপাচার্য ও ঘেরাও হয়ে থাকা অন্য আধিকারিক ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য খাবার এসেছে। তাতে ছাত্রছাত্রীরা বাধা দেননি। রাতভর বাইরে বসে থাকার পর শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ফের তাঁরা উপাচার্যের ঘরে ঢোকেন। তার পর থেকে টানা চলতে থাকে স্লোগান, চেয়ার-টেবিলের উপর দাপাদাপি। টেবিলে ও মাটিতে প্লাস্টিকের থালা-বোতল পিটিয়ে বাজাতে থাকেন ওই পড়ুয়ারা। উপাচার্যের ঘরের দেওয়ালে এবং নামের ফলকে কালো কালি দিয়ে স্লোগান ও ‘এক্স’ (প্রাক্তন) শব্দটি লিখে দেওয়া হয়।

পড়ুয়াদের একাংশের অসংযত আচরণ দেখা গিয়েছিল শুক্রবার রাতেই। উপাচার্যকে ঘিরে ধরে গালিগালাজ শুরু হয়, চলে দেদার ধূমপান। এ সব দেখেই পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের অনেকে আন্দোলনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এক পড়ুয়া বলেন, ‘‘সমাবর্তন অনুষ্ঠানের জন্য প্রেসিডেন্সিতে দেশ-বিদেশের অতিথিরা এসেছেন। তাঁদের সামনে এমন আচরণ প্রতিষ্ঠানের গৌরব বৃদ্ধি করে না।’’

বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের আচরণ সম্পর্কে উপাচার্যের মন্তব্য, ‘‘অসভ্য, অশ্লীল।’ পরে একটি খবরের চ্যানেলে তিনি বলেন, ‘‘এই আচরণ কি ওদের অভিভাবকেরা দেখছেন? ওরা কি ঠিক করছে? ওরা ভবিষ্যতে বাড়িতে এমন আচরণ করবে না, তার নিশ্চয়তা আছে কি?’

সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন

প্রেসিডেন্সিতে এই রকম ঘেরাও-বিক্ষোভ সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনকে মান্যতা দিয়ে প্রশাসন তাতে কোনও হস্তক্ষেপ করেনি এ দিন। নবান্ন সূত্রের খবর, প্রশাসনের শীর্ষস্তর থেকে দিনভর উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও অনুরাধাদেবীর কথা হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপাচার্যকে আশ্বাস দেওয়া হয়, তিনি প্রয়োজন মনে করলেই সব রকম সাহায্য করা হবে। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘সন্তোষ ভট্টাচার্যের আমলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিবেশ তৈরি করেছিল সিপিএম, পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে আবার যদি সেই দিন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হয়, তা হলে আমরা শেষ বিন্দু পর্যন্ত যাব। সেই কালো দিন কিছুতেই ফেরাতে দেব না।’’

যাদবপুরের ‘হোক কলরব’ আন্দোলনের সময় পাল্টা মিছিলে নেমেছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। এ দিনও কলেজ স্ট্রিটে পাল্টা মিছিলের আয়োজন করেছিল তারা। গোলমাল এড়াতে প্রচুর পুলিশি আয়োজনও ছিল। তৃণমূলের শীর্ষ মহল থেকে টিএমসিপি নেতাদের কাছে নির্দেশ যায়, প্রেসিডেন্সিতে এ দিন যেন তৃণমূল কর্মীদের ছায়াও না দেখা যায়। সেই নির্দেশ মেনেই কলেজ স্ট্রিটের মিছিল শেষ করে চলে যায় টিএমসিপি।

বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা ঠিক কী অভিযোগ তুলে উপাচার্যের ইস্তফা চাইছেন?

তাদের বক্তব্য. অনুরাধাদেবী প্রতিষ্ঠান চালাতে ব্যর্থ। শিক্ষকের ঘাটতি ও ভর্তির সমস্যা থাকলেও তিনি নিরুত্তাপ। ক্যাম্পাসে পুলিশি নিগ্রহের পরেও উপাচার্যের কোনও হেলদোল নেই, তিনি প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রাখতে পছন্দ করেন।

যদিও অধ্যাপক স্বপন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এতটা বাড়াবাড়ি এবং সটান উপাচার্যের ইস্তফা দাবি করাটাকে সমর্থন করতে পারছি না। শিক্ষকদের প্রতি ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহারও ঢের সংযত হওয়া উচিত ছিল।’’

প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন ছাত্র ও প্রাক্তন অধ্যাপক (বর্তমানে যাদবপুরের ইংরেজির এমিরেটাস অধ্যাপক) সুকান্ত চৌধুরীর মতে, ‘হোক কলরব’ আন্দোলনের পরিস্থিতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটা বিরলতম সঙ্কট ছিল। তিনি নিজেও সেই এক বার বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচানোর স্বার্থে সেই আন্দোলনে যোগ দেন। কিন্তু তিনিও মনে করছেন, ‘হোক কলরব’-এর দৃষ্টান্ত তুলে ধরে যেন এক ধরনের প্রতিযোগিতার মেজাজ তৈরি হয়েছে। যে কোনও আন্দোলনেই চরম দাবি-দাওয়া তোলা হচ্ছে। এটা মানতে পারছেন না সুকান্তবাবু। তাঁর কথায় ‘‘এটা এক ধরনের কপি ক্যাট সিন্ড্রোম (নকলনবিশির লক্ষণ)।’’

‘হোক কলরব’-এর পাশে দাঁড়ানো প্রেসিডেন্সির বহু পড়ুয়াও এ দিন বিক্ষোভের বিরোধিতা করেছেন। বলেছেন, এ দিন বিক্ষোভকারীরা যা করেছেন, সেটা প্রেসিডেন্সির ঐতিহ্য নয়। ঘটনাচক্রে, প্রেসিডেন্সির বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন যাদবপুরের এক দল পড়ুয়াও। আন্দোলনে অসংযত আচরণের জন্য তাঁদের দিকেই আঙুল তুলেছেন প্রেসিডেন্সির অনেক পড়ুয়া।

বিকেলে আন্দোলনকারীরা সিদ্ধান্ত নেন, সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপাচার্যকে যোগ দিতে দেওয়া হবে। কিন্তু উপাচার্য ঘর থেকে বেরোতেই তাঁর পথ আটকান কয়েক জন ছাত্রী। তিনি লিফট দিয়ে নীচে নেমে গাড়িতে ওঠামাত্র তাঁর গাড়ির বনেটের উপরে চড়চাপড় মারতে থাকেন এক দল বিক্ষোভকারী। তাঁদের বাধা দেন আর এক দল বিক্ষোভকারী। পরে প্রেসিডেন্সির এক দল পড়ুয়া বলেন, ‘‘ওরা যাদবপুর থেকে এসেছে। আমাদের কোনও পড়ুয়া উপাচার্যের গাড়িতে চড়াও হয়নি।’’

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিটি কলেজ কিংবা সুরেন্দ্রনাথের পড়ুয়ারা আন্দোলনে হাজির হলে ‘বহিরাগত’ তকমা পায়। তা হলে প্রেসিডেন্সির আন্দোলনে যাদবপুরের পড়ুয়ারা বহিরাগতের তকমা পাবেন না কেন? কেনই বা নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ ছেড়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির হয়েছেন ওই সব পড়ুয়ারা?

যাদবপুর থেকে আসা শ্রমণ গুহ, রূপকথা বসুদের মতো প়ড়ুয়ারা এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘যাদবপুরের হোক কলরব আন্দোলনে সামিল হয়েছিল প্রেসিডেন্সি। তাই আমরাও এসেছি।’’

শনিবার সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া ফিরে যান নিজের ঘরে। অনুরাধাদেবী আগেই জানিয়েছিলেন, সমাবর্তন অনুষ্ঠানের শেষে তিনি নিজেই ঘেরাওয়ের জায়গায় ফিরে যাবেন। ফেরার পর তাঁর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠকে ছিলেন প্রাক্তনী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ডিস্টিংগুইশড প্রোফেসর’ স্বপন চক্রবর্তীও। সেই বৈঠকেই ছাত্র প্রতিনিধিরা জানান, উপাচার্য বাড়ি যেতে চাইলে যেতে পারেন। তাঁরা আটকাবেন না।

উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া এ দিন সন্ধে সওয়া সাতটা নাগাদ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি অনমিত্র চক্রবর্তী তাঁকে বলেন, ‘‘আপনার শরীর খারাপ লাগলে বাড়ি চলে যান। আমরা ব্যক্তি অনুরাধা লোহিয়ার বিরোধী নই। আমরা চেয়ারকে ঘিরে বসে থাকব। আপনি সুস্থ হলে ফিরে আসবেন।’’ বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা অবশ্য উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তাঁর ঘরের বাইরে শনিবার রাতভর অবস্থান করছেন।

অনুরাধাদেবীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রীকে প্রেসিডেন্সিতে আমন্ত্রণ জানানো কি ভুল হয়েছিল? তার জন্যই কি এত সমস্যা? উত্তেজিত গলায় অনুরাধাদেবী উত্তর দিয়েছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে আনা অবশ্যই ঠিক কাজ হয়েছে। তিনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের শরিক। এর আগে কেউ তাঁকে তেমন ভাবে ডাকেননি বলে তিনি আসেননি। আর মনে রাখবেন, এক সময় জ্যোতি বসু ও সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় একসঙ্গে প্রেসিডেন্সিতে এসেছিলেন।’’

প্রেসিডেন্সিতে শুক্রবার বিক্ষোভকারীদের উপরে পুলিশ লাঠি চালিয়েছে বলে দাবি করে এ দিন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের উপর লাঠি চালানো অগণতান্ত্রিক। আমি এর নিন্দা করছি।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্সি বা যাদবপুরের মতো বাংলার প্রথম সারির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও যা অবস্থা, তাতে উচ্চশিক্ষার জন্য কোনও অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের সেখানে পাঠাবেন কি না সন্দেহ।’’

ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE