কলকাতার পুজো এখন থিমের পুজো। যত বড় শিল্পী, তত জবরদস্ত থিম। এই সব থিমের মধ্যে উঠে আসে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার প্রতিচ্ছবি। শিল্পী কী ভাবছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জানেন না পুজোর উদ্যোক্তারাও। শেষ মুহূর্তে চমক দেওয়ার জন্য শিল্পীরা থিম লুকিয়ে রাখেন আস্তিনে। এমনই কিছু থিম বেছে এনেছে আনন্দবাজার।
হরিণঘাটা দুধের ভাঙা বোতল, পুরনো লন্ঠন বা চিমনি পরিত্যক্ত জিনিসের সঙ্গে স্তূপ হয়ে পড়েছিল দীর্ঘদিন। অবহেলায় পড়ে থাকা সেই সব ভাঙা বোতল-চিমনি দেখেই পরিকল্পনাটা মাথায় এসেছিল শিল্পীর। আর যেমন ভাবা তেমন কাজ।
কিন্তু একসঙ্গে এত বোতল, চিমনি পাওয়া যাবে কোথায়? শিল্পী ছুটলেন উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদে। সেখানে পরপর রয়েছে কাচের কারখানা। ওই সব কারখানার বয়লার কখনও বন্ধ হয় না। বয়লারের মধ্যে গলছে কাচ। বিভিন্ন ধরনের ছাঁচ রয়েছে সেখানে। সেই গলা কাচ ছাঁচে ঢেলে তৈরি হচ্ছে নানা আকারের পাত্র। কোনওটার লম্বা গলা, কোনওটির গা ঢেউ খেলানো।
ফিরোজাবাদে গিয়ে তিন সপ্তাহ ধরে এ কারখানা, ও কারখানা ঘুরে বেড়ালেন শিল্পী শিবশঙ্কর দাস। তিনি দেখেছিলেন, কারিগরদের অভিজ্ঞ হাতে আর রঙের ছোঁয়ায় কী ভাবে পরিত্যক্ত ওই চিমনি আর বোতল একে একে শিল্পের রূপ নিচ্ছে। শিবশঙ্করের কাছে তখন বাতিল জিনিসই হয়ে উঠেছিল মহার্ঘ। এর পরেই সুদূর ফিরোজাবাদের হোটেলে বসেই দক্ষিণ কলকাতার পুজোর থিম তৈরি করে ফেলেন কলকাতার ওই তরুণ শিল্পী।
শিবশঙ্করের কথায়, ‘‘ফিরোজাবাদের কারখানায় এখন নকশাদার বোতল-চিমনির কাজ আর নেই। ভারতের বাজারে চিন এখন দেদার সরবরাহ করছে ওই জিনিস। যন্ত্রে খুব তাড়াতাড়ি তৈরি হচ্ছে সে সব। মজুরির খরচও নেই। তাই দামও যথেষ্ট কম।’’
গোটা মহল্লা ঘুরে কলকাতার শিল্পী দেখে এসেছেন চিনের বাজারের চাপে ফিরোজাবাদের কারিগরদের কী রকম নাভিশ্বাস অবস্থা। এখন তাঁদের জীবিকা টিকে আছে শুধুমাত্র কাচের চুড়ির উপরে। সারা রাত ধরে কারখানাগুলিতে তৈরি হচ্ছে কাচের চুড়ি। শিবশঙ্কর বলেন, ‘‘আমাদের অর্ডার পেয়ে তো ফিরোজাবাদের ওই কারখানার মালিক-শ্রমিকেরা আহ্লাদে আটখানা। ওঁরা এমন সব নকশা আমাদের তৈরি করে দিলেন তা দেখে তো আমরা অবাক!’’
ফিরোজাবাদের কারিগরদের তৈরি করা নকশা করা দুধের বোতল এবং চিমনির ভিতরে আলো ফেলে মণ্ডপে মায়াবী পরিবেশ তৈরি করতে চাইছেন শিবশঙ্কর। মণ্ডপে যাঁরাই ঢুকবেন নানা রঙে রাঙিয়ে যাবেন তিনি। থিমের নাম তাই— রাঙিয়ে দিয়ে যাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy