আদালতে ধৃতেরা। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র।
জাল ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে ফ্রান্সে কাজে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্রীলঙ্কার পাঁচ নাগরিককে কারা কলকাতায় এনেছিল, তা খোঁজ করছে পুলিশ। শনিবার, স্বাধীনতা দিবসের বিকেলে চাঁদনি চকের একটি হোটেল থেকে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। একই হোটেল থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে তামিলনাড়ুর দুই বাসিন্দাকেও। ওই দু’জনের কাছে এই চক্রের তথ্য আছে বলে প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের ধারণা।
পুলিশ সূত্রে খবর, শ্রীলঙ্কার ওই নাগরিকেরা বহু বছর চেন্নাইয়ের উদ্বাস্তু শিবিরে ছিলেন। কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি হয়ে তাঁদের বাইরে পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছিল। এর জন্য তাঁরা মোটা টাকাও দেন। ধৃতদের কাছে মিলেছে মার্কিন ডলারও। বাগডোগরা থেকে বিমানে বা শিলিগুড়ি থেকে সড়কপথে নেপালে ঢুকে তাঁদের আরও দূরে পাঠানোর ছক ছিল বলে পুলিশের সন্দেহ। প্রত্যেকের ভুয়ো ভারতীয় পরিচয় জেনেছে কলকাতা পুলিশ।
রবিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে ধৃত সাত জনকেই ২৪ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত দেন বিচারক মধুসূদন পাল। তাঁদের বিরুদ্ধে বিদেশি নাগরিক আইন ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের মধ্যে সায়ন্তথন রত্নরাসা, যোগলিঙ্গম শিলনন ওরফে গুণশেখরন, মঙ্গলেশ্বরম, শিবাশীতবন শিবারাসা, মেহেতি রারাসা কাঘুবন ওরফে কাটিস শ্রীলঙ্কার নাগরিক। বাকি দু’জন, আবদুল রহিম মালিক বাটচা ও শফিক আহমেদ তামিলনাড়ুর বাসিন্দা। বাকিরা শ্রীলঙ্কার নাগরিক। ছোটবেলায় জাফনার গ্রামে বোমা পড়ার জেরে যোগলিঙ্গমের বাঁ হাত কব্জি থেকে নেই, পায়েও সমস্যা আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গোয়েন্দারা জানান, শুক্রবার নকশালবাড়ির ভারত-নেপাল সীমান্তে তামিলনাড়ুর এক বাসিন্দাকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে জেরা করে শ্রীলঙ্কার এই পাঁচ নাগরিকের কথা জানা যায়। গোয়েন্দাদের একাংশ ভেবেছিলেন, শ্রীলঙ্কার পাঁচ তামিল টাইগার নাশকতার উদ্দেশ্যে কলকাতায় ঢুকেছে। বিশেষত জাফনাই ছিল এলটিটিই-র সদর দফতর। জাফনাকে একদা ‘স্বাধীন’ বলেও ঘোষণা করেছিল টাইগাররা। এমনিতেই স্বাধীনতা দিবসে ভারতে বড় জঙ্গি হামলার একাধিক সতর্কবার্তা এসেছে। এলটিটিই-র সঙ্গে এ দেশের মাওবাদীদের যোগাযোগ নিয়েও বহু গোয়েন্দা-রিপোর্ট রয়েছে। পরে অবশ্য এসটিএফ-এর গোয়েন্দারা জানান, ওই পাঁচ জনের কোনও জঙ্গি সংস্রব নেই।
পুলিশ জানায়, শ্রীলঙ্কার ওই পাঁচ নাগরিককে নিয়ে আবদুল ও শফিক তিন দিন আগে কলকাতায় পৌঁছয়। গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের দাবি, জালিয়াত-চক্রটি পাঁচ জনকে জানিয়েছিল, কলকাতায় জাল পাসপোর্ট করে ফ্রান্সে হোটেল, ভারতীয় বা তামিল রেস্তোরাঁয় কাজ দেওয়া হবে। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘কলকাতাকে কেন্দ্র করে জাল পাসপোর্টের চক্র কাজ করছে, তা পরিষ্কার। চক্রে কারা আছে, তার খোঁজ করছি।’’ পুলিশি সূত্রের খবর, শ্রীলঙ্কার ধৃত পাঁচ নাগরিক তামিল ছাড়া অন্য ভাষা বোঝেন না। তামিল ও ইংরেজি ভাল ভাবে জানেন, এমন কারও উপস্থিতিতে তাঁদের জেরার কথা ভাবা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy