Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ফ্ল্যাটে দু’দিন ‘বন্দি’ বৃদ্ধা, উদ্ধার করল পুলিশ

অভিযোগ, শাশুড়িকে তালাবন্ধ করে মেয়ের বাড়ি গিয়েছিলেন বৌমা। আর তাই গত রবিবার থেকে ‘ঘরবন্দি’ ওই বৃদ্ধা। তবে শেষমেশ পুলিশের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন পরিজনেরা।

উদ্ধার করার পরে জ্যোৎস্না দাশগুপ্ত। মঙ্গলবার, বালিতে। নিজস্ব চিত্র

উদ্ধার করার পরে জ্যোৎস্না দাশগুপ্ত। মঙ্গলবার, বালিতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৯ ০১:২৯
Share: Save:

ফ্ল্যাটের কোল্যাপসিবল গেটে গোঁজা তিন দিনের পুরনো খবরের কাগজ। বারবার ওই গেট এবং কাঠের দরজায় ধাক্কা মারলেও সাড়া মিলছে না। তাই ভিতরে থাকা বৃদ্ধা কী অবস্থায় রয়েছেন, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল সকলের মধ্যে। শেষে পুলিশ এসে তাঁকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে।

অভিযোগ, শাশুড়িকে তালাবন্ধ করে মেয়ের বাড়ি গিয়েছিলেন বৌমা। আর তাই গত রবিবার থেকে ‘ঘরবন্দি’ ওই বৃদ্ধা। তবে শেষমেশ পুলিশের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন পরিজনেরা। জানিয়েছেন, দ্বিতীয় বার এমন ভুল আর করবেন না। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বালির
কৃষ্ণ চ্যাটার্জি লেনে।

পুলিশ জানায়, বছর আশির ওই বৃদ্ধার নাম জ্যোৎস্না দাশগুপ্ত। বছর দু’য়েক আগে ছেলের মৃত্যুর পর থেকে বৌমা সুজাতাদেবীর সঙ্গে চারতলার ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি। বৃদ্ধার দুই নাতনির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। প্রতিবেশীরা জানান, গত রবিবার জ্যোৎস্নাদেবীকে তালা দিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখা গিয়েছিল সুজাতাকে। তার পর থেকে
সুজাতা ফেরেননি। বৃদ্ধারও কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। এ দিন সকালে দুধওয়ালা এসে বারবার ডাকলেও কেউ দরজা খোলেননি। প্রতিবেশীরাও একাধিক বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তাঁদের থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে বালি থানার পুলিশ।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ফ্ল্যাটটির কোল্যাপসিবল গেটে ভিতর থেকে তালা দেওয়া। গেটের পিছনে কাঠের দরজাটিও বন্ধ। পুলিশ অফিসারেরা বারবার ধাক্কা দিলেও সাড়াশব্দ আসছে না। আশপাশের বাসিন্দারাও তত ক্ষণে ভিড় করেছেন ফ্ল্যাটে। এমন ভাবে বেশ কিছু সময় কেটে যাওয়ার পরে কোল্যাপসিবল গেটের তালা ভাঙে পুলিশ। ইতিমধ্যে বৃদ্ধার নাতনি, পেশায় কলেজশিক্ষিকার ফোন নম্বর জোগাড় করে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ আধিকারিকেরা। পুলিশ জানায়, বৃদ্ধার নাতনি স্বীকার করে নেন, ফ্ল্যাটে রয়েছেন তাঁর ঠাকুরমা জ্যোৎস্নাদেবী। তবে ফ্ল্যাটের সব
চাবি রয়েছে মা সুজাতার কাছে। তিনি আছেন ভদ্রেশ্বরে।

যদিও প্রথমে তিনি দাবি করেন, বিষয়টি একেবারেই তাঁদের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত। এর পরে পুলিশ অফিসারেরা বৃদ্ধার নাতনিকে ফোনে জানান, কাঠের দরজার চাবি না নিয়ে এলে সেটিও ভাঙতে তাঁরা বাধ্য হবেন। এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন। তার পরেই ফ্ল্যাটে চলে আসেন নাতনি। তিনি বলেন, ‘‘প্রয়োজন রয়েছে বলেই মা আমার কাছে গিয়েছেন। রান্না করে রেখে গিয়েছেন। মাঝেমধ্যে ঠাকুরমাকে রেখে মা এ দিক-ও দিক যান। কিন্তু আর কোনও দিন এই ধরনের ভুল হবে না।’’

শেষে প্রায় এক ঘণ্টা পরে আসেন সুজাতা। চাবি দিয়ে কাঠের দরজা খুলে দেখা যায়, ভিতরে একটি ঘরে ঘুমোচ্ছেন জ্যোৎস্নাদেবী। তা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন সকলে। এক বাসিন্দা ভাস্করগোপাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খুবই অমানবিক ঘটনা। আবাসনে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তো জানাই যাবে না যে ভিতরে কেউ আছেন। পরিজনেদের কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন থাকতেই পারে। কিন্তু প্রতিবেশী বা স্থানীয় থানাকেও তো তাঁরা বৃদ্ধার থাকার কথা জানাতে পারতেন।’’

সকলের ডাকাডাকিতে ঘুম থেকে উঠে ঠিক মতো হাঁটাচলা করতে না পারা, কানে একেবারে শুনতে না
পাওয়া জ্যোৎস্নাদেবী নাতনিকে জড়িয়ে ধরেন। জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘তোরা কি আমার জন্য চিন্তা করছিলি? আমারও খুব চিন্তা হচ্ছিল!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy