বাঁশ-কাপড় দিয়ে মণ্ডপ তৈরি হয়ে গিয়েছে। সকাল থেকেই বাজছিল সানাই। আত্মীয়-পরিজনেদের আনাগোনাও শুরু হয়ে গিয়েছিল। শেষ হয়ে গিয়েছে দধিমঙ্গল। তখন গায়ে হলুদের প্রস্তুতি চলছিল। সন্ধ্যায় বিয়ের আসর, শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি তাই তুঙ্গে। এমন সময়ে ভারী বুটের শব্দে ছন্দপতন ঘটল উৎসবের মেজাজে।
নোদাখালি থানার উত্তর বাওয়ালি এলাকার ওই বিয়ে বাড়িতে পুলিশকে ঢুকতে দেখে তত ক্ষণে পড়শিদের উঁকিঝুঁকিও শুরু হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে পা রেখেই এক পুলিশ কর্তার হাঁক—‘‘কার বিয়ে হচ্ছে,পাত্রীকে সামনে নিয়ে আসুন। সঙ্গে বয়সের প্রমাণপত্রও আনুন!’’ ডাক শুনে কাঁচুমাচু মুখে বেরিয়ে এলেন গৃহকর্তা দেবব্রত সাঁপুই। কারণ তত ক্ষণে তিনি বুঝে গিয়েছেন, কী হতে চলেছে। পুলিশ কর্তার সামনে করজোড়ে তাঁর প্রবল আকুতি—‘‘স্যর, ভাল পাত্র পেয়ে মেয়েটার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিলাম। এরকম আর জুটবে না! সে কারণেই পাত্র হাতছাড়া করতে চাইনি স্যর।’’
কিন্তু তখন কোনও কথাই শুনতে রাজি নন পুলিশকর্তা। কারণ, তাঁর কাছে পাকা খবর ছিল, বিয়ের কনে কিশোরী। তবে খবর পেলেই তো হবে না, হাতেনাতে প্রমাণ পাওয়া দরকার। এ জন্য জরুরি বয়সের প্রমাণপত্র। তাই কোনও কাকুতি-মিনতিই কাজে এল না। পুলিশ কর্তার একই কথা— ‘‘মেয়ের বয়সের প্রমাণপত্র আগে নিয়ে আসুন।’’ শেষমেশ মেয়ের জন্মের শংসাপত্র আনলেন বাবা। দেখা গেল, পাত্রীর বয়স মাত্র ১৬ বছর। ব্যস। এ বার নিশ্চিন্ত পুলিশকর্তা। তৎক্ষণাৎ বিয়ে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে পাত্রী ও তার পরিবারের লোকজনকে থানায় আসতে বলেই সটান বেরিয়ে যান তিনি। রবিবার এ ভাবেই দেবব্রতবাবুর কিশোরী মেয়ের বিয়ে বন্ধ করে দিল পুলিশ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার চাইল্ড লাইন। মেয়ের বিয়ে এখনই দেওয়া হবে না, এমনই মুচলেকা পরে দেবব্রতবাবুর কাছ থেকে লিখিয়ে নেয় পুলিশ।
পুলিশ এবং দক্ষিণ কলকাতার চাইল্ড লাইন সূত্রের খবর, কাঠমিস্ত্রি দেবব্রতবাবু ওই থানারই পূর্ব পূজালি গ্রামের রাজমিস্ত্রি অনিল দাসের বড় ছেলে দেবব্রতের সঙ্গে তাঁর মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলেন। রবিবারই ছিল বিয়ে। থানা এবং জেলার চাইল্ড লাইনের কাছে কিশোরীর বিয়ের খবর পৌঁছতেই তড়িঘড়ি বন্ধ করা হয় বিয়ে।
শুধু জেলায় নয়, সম্প্রতি চাইল্ড লাইন খাস কলকাতাতেই জুলাই-অগস্টের ১২ তারিখে ১৪-১৫ টি কিশোরীর বিয়ে বন্ধ করেছে। অভিযোগ, প্রগতি ময়দান, তপসিয়া এবং উল্টোডাঙার মতো জায়গায় এ ধরনের বিয়ের সংখ্যা বেশি এবং প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাড়ি থেকে দেখাশোনা করেই ঠিক হয়েছিল বিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy