অকুস্থলে: প্রতুল চক্রবর্তীর ঘরের সামনে খুনের পুনর্নির্মাণের জন্য অদিতিকে নিয়ে পুলিশ। শনিবার, পানিহাটিতে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
পানিহাটিতে প্রতুল চক্রবর্তীকে খুনের পরে ঘর থেকে সমস্ত রকমের নথি সরিয়ে ফেলেছিলেন তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী অদিতি চক্রবর্তী। শনিবার ওই খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণে এমনই তথ্য উঠে এসেছে তদন্তকারীদের সামনে। সেই সঙ্গে জানা গিয়েছে, প্রথমে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করার পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতেই শাড়ির পাড়ের ফাঁস দেওয়া হয়েছিল প্রতুলের গলায়।
বিমানবন্দরের কর্মী অদিতিকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার পরে এ দিন তাঁকে নিয়ে পানিহাটির শান্তিনগরের ঘটনাস্থলে যান খড়দহ থানার তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অদিতি জেরায় জানিয়েছেন, গত বুধবার বাসে চেপে তিনি রহড়া বাজারে এসেছিলেন।
তার পরে প্রতুলকে ফোন করে সেখানে আসতে বলেন। সেই মতো রাত ৯টা নাগাদ ওই প্রৌঢ় বাসস্টপে এসে স্ত্রীকে শান্তিনগরের ভাড়া বাড়িতে নিয়ে যান। রাতে হোম ডেলিভারি থেকে রুটি, তরকা, ভাত ও ডিমের ঝোল আনিয়ে দু’জনে খাওয়াদাওয়াও করেছিলেন। এর পরে অদিতি ১৪ লক্ষ টাকা ফেরত চাইতেই প্রতুল অশান্তি শুরু করেন বলে দাবি করেছেন ওই মহিলা।
পুলিশকে অদিতি জানিয়েছেন, রাত ১২টা নাগাদ টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে অশান্তি শুরু হয়। তখন প্রতুল তাঁকে মারার চেষ্টা করলে নেশাগ্রস্ত ওই প্রৌঢ়কে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে মুখে বালিশ চেপে ধরেন অদিতি। কিছু ক্ষণ পরে তিনি দেখেন, প্রতুলের কোনও সাড়াশব্দ মিলছে না। তখন তাঁকে বিছানায় ঠিকমতো শুইয়ে দেন ওই মহিলা। তার পরে জামাকাপড় শুকোনোর জন্য টাঙানো শাড়ির পাড় খুলে নিয়ে প্রতুলের গলায় পেঁচিয়ে টেনে ধরেন। মৃত্যু নিশ্চিত করার পরে কিছু ক্ষণ বসে থাকেন অদিতি। তিনি জেরায় আরও জানিয়েছেন, মাথা ঠান্ডা হওয়ার পরেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। প্রথমেই প্রতুলের পরিচয় সম্পর্কিত যে সমস্ত কাগজপত্র এবং ডায়েরি ছিল, তা খুঁজে বার করেন। সব কিছু একটা ব্যাগে ভরে প্রতুলের মোবাইল দু’টিও নিয়ে নেন।
এ দিন পুনর্নির্মাণের সময়ে অদিতি পুলিশকে জানান, ভোর চারটে নাগাদ পানিহাটির ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে খড়দহ খালপাড় ধরে হাঁটতে শুরু করেন তিনি। সেই সময়েই কিছু কাগজ ও মোবাইল দু’টি খালে ছুড়ে ফেলেন। এর পরে পানশিলা পৌঁছে সেখান থেকে রিকশা চেপে কাচকল মোড়ে পৌঁছন। সেখানে নর্দমায় বাকি নথিগুলি ফেলে দিয়ে অটো চেপে বি টি রোডে এসে বাস ধরে কাশীপুরে ফিরে যান। তার পরে অফিস চলে গিয়েছিলেন। অদিতি তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, গুরুগ্রামের বাসিন্দা ও প্রসাধনী সংস্থার কর্তা— এই দু’টি বিষয় ছাড়া প্রতুলের সম্পর্কে কেউ আর কিছু জানতেন না। তাই মৃতদেহ উদ্ধারের পরেও যাতে কেউ কিছু জানতে না পারে, তার জন্যই তিনি সব কাগজপত্র সরিয়ে ফেরেছিলেন।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, গত মার্চে প্রতুল ও অদিতির বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু অদিতি ফের বিয়ের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছেন জানতে পেরেই প্রতুল খেপে যান। শুধু কয়েক দিন আগেই নয়, বেশ কয়েক বার বাগুইআটির হোটেলে ওই প্রৌঢ়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন অদিতি। শেষ বার যখন যান, তখনই প্রতুল তাঁকে ফের সংসার করার প্রস্তাব দেন। জেরায় অদিতি স্বীকার করেছেন, ১৪ লক্ষ টাকা ফেরত পাওয়ার আশাতেই তিনি ওই প্রস্তাবে রাজি বলে জানিয়েছিলেন। সেই মতো গত বুধবার প্রতুলের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি পানিহাটি গিয়েছিলেন। এ দিন পুনর্নির্মাণের সময়ে যে সমস্ত জায়গা অদিতি দেখিয়েছেন, তা ঠিক কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy