Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

জুয়ার ঠেক ভেঙে প্রহৃত পুলিশ, ঘুরে দাঁড়িয়ে পাল্টা মার

ফের থানায় বসে মার খেল পুলিশ। এ বার বাগুইআটিতে। জুয়ার আসর থেকে চার জুয়াড়িকে গ্রেফতার করে আনা হয়েছিল। তার জেরেই সোমবার রাতে বাগুইআটি থানায় ঢুকে পুলিশের উপরে চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। নিস্তার পাননি মহিলা অফিসারও। এর আগে কলকাতার আলিপুর-সহ রাজ্যের বহু থানাতেই মার খেয়ে চুপ করে তা হজম করতে হয়েছে পুলিশকে।

ধৃত শান্তনু বণিক ও সোমপ্রকাশ দত্ত। — নিজস্ব চিত্র।

ধৃত শান্তনু বণিক ও সোমপ্রকাশ দত্ত। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৫ ০৩:৩৪
Share: Save:

ফের থানায় বসে মার খেল পুলিশ। এ বার বাগুইআটিতে।

জুয়ার আসর থেকে চার জুয়াড়িকে গ্রেফতার করে আনা হয়েছিল। তার জেরেই সোমবার রাতে বাগুইআটি থানায় ঢুকে পুলিশের উপরে চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। নিস্তার পাননি মহিলা অফিসারও। এর আগে কলকাতার আলিপুর-সহ রাজ্যের বহু থানাতেই মার খেয়ে চুপ করে তা হজম করতে হয়েছে পুলিশকে। বাগুইআটি থানার পুলিশ অবশ্য দুষ্কৃতীদের মার খেয়ে চুপ করে থাকেনি। পাল্টা লাঠিপেটা করে দুষ্কৃতীদের অনেককে এলাকা ছাড়া করে দিয়েছে। গ্রেফতারও করেছে হামলাকারীদের কয়েকজনকে।

পুলিশ জানায়, ঘটনার সূত্রপাত বাগুইআটির পুরনো বাজারে। রাতে বাজার বন্ধের পরে হামেশাই ওখানে মদ আর জুয়ার আসর বসে বলে আগে থেকেই খবর ছিল বাগুইআটি থানার কাছে। সোমবারও সূত্র মারফত খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হানা দেন সাব ইনস্পেক্টর অর্পিতা বিশ্বাস-সহ কয়েক জন পুলিশকর্মী। ঘটনাস্থল থেকে তাস, নগদ ৭৩ হাজার টাকা ও মদের বোতল আটক করা হয়। গ্রেফতার হয় সোমপ্রকাশ দত্ত, শান্তনু বণিক, সৌমেন মুখোপাধ্যায় ও গৌতম মণ্ডল। ধৃতদের থানায় নেওয়ার কিছু পরেই শুরু হয় গোলমাল।

বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই জানান, ধৃতদের ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ থানার সামনে জড়ো হয় ৭০-৮০ জন। তাদের মধ্যে জনা তিরিশেক লোক থানার ভিতরে ঢুকে পুলিশের সঙ্গে গোলমাল শুরু করে। গোয়েন্দাপ্রধানের অভিযোগ, গালিগালাজ করার পাশাপাশি দুষ্কৃতীরা সাব-ইনস্পেক্টর অর্পিতাকে ধাক্কাও মারতে থাকে। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন ইনস্পেক্টর ইন চার্জ সুকমলকান্তি দাস ও সাব-ইনস্পেক্টর প্রতাপাদিত্য মণ্ডল। পুলিশের দাবি, দুষ্কৃতীদের মারে জখম হন ওই দু’জনও। অভিযোগ, থানা চত্বরেই ফেলে পেটানো হয় প্রতাপাদিত্যবাবুকে।


সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

বাগুইআটি থানার পুলিশ জানায়, ওই সময়ে সব মিলিয়ে জনা দশেক পুলিশকর্মী ছিলেন থানার ভিতরে। তাঁরা জানান, সাধারণত এই ধরনের ঘটনায় পুলিশ ধড়পাকড় করলে ধৃতের সমর্থনে লোকজন থানায় এসে কিছুক্ষণ চিৎকার চেঁচামেচি করে। কিন্তু পুলিশের গায়ে হাত তোলা হবে, তা আঁচ করতে পারেননি অফিসারেরা। তাই প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেলেও পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে শেষপর্যন্ত ঘুরে দাঁড়ান থানার পুলিশকর্মীরা। ঘটনাস্থলে থাকা এক অফিসার বলেন, ‘‘থানায় ঢুকে আমাদের মারা হচ্ছে দেখেও যদি কোনও ব্যবস্থা নিতে না পারি, তবে আর পুলিশের থাকার দরকার কী! তাই আমরাও লাঠিসোঁটা নিয়ে ঘুরে দাঁড়াই। আমাদের রুখে দাঁড়াতে দেখে থমকে যায় দুষ্কৃতীরা।’’ এর পরে লাঠি উঁচিয়ে থানায় জড়ো হওয়া লোকজনকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত ধাওয়া করে নিয়ে যায় পুলিশ। এক অফিসার বলেন, ‘‘সুকমলবাবুই প্রথম লাঠি নিয়ে তেড়ে যান। এতেই সাহস পেয়ে অন্যরাও দুষ্কৃতীদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন।’’ ঘটনাস্থল থেকে আরও সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়।

তবে গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশকর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, কমিশনারেট হওয়ার পরেও জেলা পুলিশের পরিকাঠামোর কোনও উন্নতি হয়নি। পর্যাপ্ত কর্মী নেই কোনও থানাতেই। সে কারণেই এমন ঘটনা ঘটল। তাঁদের বক্তব্য, থানায় পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী দেখলে দুষ্কৃতীরা এমন সাহস দেখাত না। পরে অবশ্য উপায় না-দেখে রুখে দাঁড়ান উপস্থিত পুলিশকর্মীরা। এক পুলিশকর্মীর কথায়,‘‘রুখে না দাঁড়াতে পারলে আলিপুর থানার মতো আমাদেরও মুখ লুকোনো ছবি দেখা যেত।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE