ধৃত দিলশাদ হোসেন। তবে পুলিশ মরিয়া মহম্মদ দিলশাদের খোঁজ পেতে।
দুষ্ট চতুষ্টয় ঠিকই। তবে ‘গ্যাং অব ফোর’ নয়। চার জনই কাজ করে আলাদা ভাবে। তাদের গ্যাং বা দল-ও আলাদা। চার জনই মাদক পাচার চক্রের বড় চাঁই। ওই চার জনকেই এখন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা হন্যে হয়ে খুঁজছেন। শহরে চরস নামে মাদকের মূল সরবরাহকারী ওই চার জন বলে লালবাজারের দাবি।
চার জনের এক জনও ১৯৭৬-এর বলিউডি ছবি, ধর্মেন্দ্রর ‘চরস’-এর খলনায়ক, মাদক কারবারি কালীচরণ নয়। লালবাজার জানাচ্ছে, তাদের নাম ভরম, দিলশাদ, ইমরান ও আয়ুব। সকলেরই বাড়ি পার্ক সার্কাসের আশপাশে। অধিকাংশ সময়েই তারা ভিন্ রাজ্যে বসে কলকাতায় চরসের কারবার নিয়ন্ত্রণ করে। যে চরসের বেশির ভাগটা যায় গভীর রাত পর্যন্ত চলা উদ্দাম পার্টিতে ও ধনী পরিবারের অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের কাছে।
লালবাজারের হিসেবে, এরা চার জন মিলে ভিন্ রাজ্যে বসে থেকে কলকাতায় প্রতি মাসে গড়ে দেড় কোটি টাকার চরস সরবরাহ করছে। ‘অর্ডার’ পেলে তবেই এরা কলকাতায় ওই নেশার জিনিস পাঠায়।
গত সপ্তাহে পুলিশের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছিল। যখন তারা শোনে, ৪ জানুয়ারি রাতে শিয়ালদহ স্টেশনে দিলশাদ ধরা পড়েছে রেলপুলিশের হাতে। তার কাছে ১০ কেজির কিছু বেশি গাঁজা ও নগদ এক লক্ষ ১৫ হাজার ৭০০ টাকাও মিলেছে। কিন্তু অচিরেই ভুল ভাঙে। বোঝা যায়, এই দিলশাদ সেই দাগি দিলশাদ নয়। শিয়ালদহের ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ধৃত এই দিলশাদকে ‘জুনিয়র দিলশাদ’ বলা যায়। একবালপুর এলাকার ছেলে, ৩৩ বছরের এই দিলশাদ মূলত গাঁজার কারবারি। নাম দিলশাদ হোসেন। কলকাতা পুলিশ যাকে খুঁজছে, তার নাম মহম্মদ দিলশাদ। সে চল্লিশোর্ধ্ব।
লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘মহম্মদ দিলশাদ এক বড় মাদক কারবারি। সে এখন রাজ্যের বাইরে বলে আমরা খবর পাচ্ছি। সম্ভবত ওড়িশা কিংবা অসমে।’’ আর এক অফিসারের দাবি, ‘‘শহরে যারা মাদক চক্র চালায়, তাদের ৭৫ শতাংশকে আমরা গ্রেফতার করেছি। তারা এখন জেলে। কিন্তু বাকি ২৫ শতাংশ আমাদের জ্বালিয়ে মারছে। চরসের কারবারে এই চার জন বড় সমস্যা তৈরি করছে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, ভরম, ইমরান, আয়ুবরাও এখন অন্যান্য রাজ্যে ঘাপটি মেরে আছে। পুলিশের বক্তব্য, মধ্য কলকাতা ও বন্দর এলাকার চরসের কারবার এখন এই চার জনই শাসন করছে, তবে আলাদা ভাবে।
লালবাজারের খবর, ১০ গ্রাম চরস এখন শহরে বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে চার হাজার টাকায়। চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকলে দাম প্রতি ১০ গ্রাম চার হাজার টাকার কাছাকাছি পৌঁছয়। জোগান যখন বেশি, তখনও অবশ্য ওই পরিমাণ চরসের দাম দু’হাজার টাকার নীচে নামে না। ওই চার জন অধিকাংশ সময়ে রেলপথে, কখনও সড়কপথে চরস পাঠায়।
এক পুলিশকর্তা জানান, এক-একটি কনসাইনমেন্ট পিছু ক্যারিয়ার বা মাদক বাহককে হাজার দুয়েক টাকা দেয় ‘দুষ্ট চতুষ্টয়’। চরসের বাহক হিসেবে বেছে নেওয়া হয় হতদরিদ্র যুবকদের। অনেক সময়ে তাই মাদক নিয়ে যাচ্ছে জেনেও তাদের কিছু করার থাকে না। তবে পুলিশের একটি সূত্রের খবর, বন্দর এলাকার কয়েক জন নাবালককে মাদক পাচারের কাজে লাগাচ্ছে এই চার জন। যাদের বয়স ১৪-১৬। তবে এদের অনেকেই বিষয়টি না জেনেই এই কাজ করছে বলে দাবি পুলিশের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy