বেসরকারি বাসের সংখ্যা ছিল কম। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অতিরিক্ত সরকারি বাসেরও দেখা মেলেনি রাস্তায়। যার ফলে বন্ধের দিন ঝোপ বুঝে কোপ মারার অভিযোগ উঠল হলুদ ট্যাক্সির বিরুদ্ধে। অ্যাপ-ক্যাবও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে পিছিয়ে থাকেনি বলে অভিযোগ।
সাঁতরাগাছি, হাওড়া, শিয়ালদহ, গড়িয়াহাট, বড়বাজার, টালিগঞ্জ, বেহালা কিংবা সল্টলেক— সর্বত্রই চড়া ভাড়া হাঁকতে দেখা গিয়েছে হলুদ ট্যাক্সিকে। বহু সাধাসাধির পরেও যাত্রীদের অনেকেই ট্যাক্সি পেতে গিয়ে রীতিমতো নাজেহাল হয়েছেন। অভিযোগ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মিটারের তোয়াক্কা না করে যাত্রীদের সঙ্গে ইচ্ছেমতো ভাড়ায় রফা করেছেন ট্যাক্সিচালকেরা।
সোমবার সকালের দিকে এক আত্মীয়াকে আনতে শিয়ালদহ স্টেশনে গিয়েছিলেন গড়িয়ার মহামায়াতলার বাসিন্দা সঞ্জীব কর্মকার। সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ ট্যাক্সি পেতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হতে হয় তাঁকে। শেষে ৫৫০ টাকায় যেতে রাজি হন এক ট্যাক্সিচালক। মিটারের থেকে যা প্রায় ১৫০ টাকা বেশি।
একই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে হরিদেবপুরের পবন সিংহের। বড়বাজার থেকে মালপত্র নিয়ে ট্যাক্সির খোঁজ করছিলেন তিনি। বেশ কিছু ক্ষণ চেষ্টা করার পরে ট্যাক্সি পান পবন। ৪৮০ টাকায় যেতে রাজি হন চালক। মিটারের থেকে প্রায় ১৩০ টাকা বেশি।
এ দিন সকালে সাঁতরাগাছি থেকে ঠাকুরপুকুর যাওয়ার জন্য অনুরাগ শর্মা নামে এক যাত্রী ট্যাক্সিচালককে ৬০০ টাকা দিতে বাধ্য হন। মাঝেরহাট সেতু ভেঙে যাওয়া এবং ফিরতি পথে যাত্রী না পাওয়ার অজুহাত দিয়ে ওই বাড়তি টাকা চেয়েছিলেন ট্যাক্সিচালক। বেহালার পর্ণশ্রী, ১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ড, ম্যান্টন বাজার যাওয়ার ক্ষেত্রেও একাধিক যাত্রীর এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে।
সিটু এবং এআইটিইউসি অনুমোদিত বামপন্থী ট্যাক্সি ইউনিয়নের নেতাদের দাবি, অন্য দিনের তুলনায় এ দিন রাস্তায় ট্যাক্সির সংখ্যা কম ছিল। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বিষয়টিকে সমর্থন করে অনেক ট্যাক্সিচালকই এ দিন রাস্তায় নামেননি। সেই পরিস্থিতির সুযোগেই কোনও কোনও ট্যাক্সিচালক চড়া ভাড়া হেঁকে থাকতে পারেন বলে মত ওই দুই সংগঠনের নেতাদের। পাশাপাশি, চলতি মাসের মধ্যে সমস্ত ট্যাক্সির মিটার সংশোধনের কাজ (ক্যালিব্রেশন) শেষ না হওয়াকেও দুষেছেন তাঁরা।
হাওড়া এবং শিয়ালদহে প্রি-পেড ট্যাক্সি বুথ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ‘প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সি মেনস অ্যাসোসিয়েশন’-এর মত অবশ্য ভিন্ন। আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শম্ভুনাথ দে বলেন, “অন্য দিনের মতোই হাওড়া এবং শিয়ালদহ থেকে সারা দিনে আড়াই হাজারের উপর ট্যাক্সি চলেছে। যাত্রীদের তেমন অসুবিধা চোখে পড়েনি। শিয়ালদহ থেকে অসুস্থ যাত্রীদের হাসপাতালেও পৌঁছে দিয়েছেন ট্যাক্সিচালকেরা।”
ট্যাক্সির পাশাপাশি এ দিন অ্যাপ-ক্যাবের ভাড়াও ছিল ঊর্ধ্বমুখী। দমদম থেকে সল্টলেকের সেক্টর ৫, টালিগঞ্জ থেকে ডালহৌসি, ইএম বাইপাসের কালিকাপুর থেকে রবীন্দ্র সরোবর, বেহালা শখেরবাজার থেকে বিমানবন্দর-সহ বিভিন্ন রুটে যাত্রীদের অন্যান্য দিনের তুলনায় গড়ে ১৫০-১৬০ টাকা বেশি দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ। অথচ, অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলি নিজেরাই কিছু দিন আগে জানিয়েছিল, ‘সার্জ প্রাইস’ আগের তুলনায় অনেকটাই কমবে। তাদের সেই প্রতিশ্রুতি নিয়েই ফের প্রশ্ন উঠেছে। এ দিন সকালের দিকে রাস্তায় গন্ডগোলের আশঙ্কায় অ্যাপ-ক্যাবের সংখ্যাও কম ছিল বলে খবর। সন্ধ্যার দিকে বেসরকারি বাসের সংখ্যা কমে আসায় ফের এক প্রস্ত ভাড়া বাড়ে অ্যাপ-ক্যাবের।
রাজ্যের ক্রেতা-সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে বলেন, “অ্যাপ-ক্যাব যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছে বলে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড’-এর সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলি সরকার নির্ধারিত ভাড়ার হার মানছে না। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে চালকদের প্রাপ্য টাকার হার কমছে। আমরা এ নিয়ে সরকারি হস্তক্ষেপ চেয়ে পরিবহণমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি।”
পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলি কী হারে ভাড়া আদায় করছে, তা নির্দিষ্ট সময় অন্তর সরকারকে জানানোর কথা। ওই তথ্য পেলে খতিয়ে দেখা হবে। সরকারের তরফে নজরদারি শিথিল করা হয়নি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy