এ ভাবেই ভাঙচুর চালানো হয় হাসপাতালে।
হাসপাতালে রোগীমৃত্যু। চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ। তা ঘিরে তাণ্ডব। ব্যাপক ভাঙচুর। হাসপাতাল কর্মীদের মারধর। কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল হাসপাতালের অন্দর।
বুধবার সাতসকালেই ইকবালপুরের সিএমআরআই হাসপাতালে তাণ্ডবের জেরে আতঙ্কিত কর্মী-আধিকারিক-অন্যান্য রোগীর আত্মীয়েরা। আতঙ্কে হাসপাতাল ছেড়ে পালালেন বহু কর্মী ও রোগীর আত্মীয়। তাণ্ডবের জেরে সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে গেল হাসপাতাল পরিষেরা। পুলিশি উপস্থিতি সত্ত্বেও দু’দফায় তাণ্ডব চালাল শতাধিক যুবক। ঘটনার জেরে প্রশ্নের মুখে শহরের হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা। হাসপাতালে তাণ্ডব চালিয়েও শান্ত হয়নি বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভ ও তাণ্ডব চালানোর পর দফায় দফায় চলে রাস্তা অবরোধ। অফিসটাইমে অবরোধের জেরে ডায়মন্ড হারবার রোডে ব্যাপক যানজট হয়। ভোগান্তিতে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। গোটা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার নিন্দা করে সিএমআরআই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এই ঘটনায় আইনি সহায়তা নেবেন তাঁরা।
ভাঙচুর করা হল রিসেপশন কম্পিউটার-প্রিন্টার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
পুলিশ সূত্রের খবর, পেটে ব্যথা নিয়ে ইকবালপুরের এক কিশোরীকে মঙ্গলবার রাত ৯টা নাগাদ ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সাইকা পরভীন নামে বছর ষোলোর ওই কিশোরীর পরিবারের দাবি, প্রাথমিক চিকিত্সার পরে রোগীর অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে জানান চিকিত্সকেরা। কিন্তু, অস্ত্রোপচারের আগেই মারা যান সেই কিশোরী। তাঁর বাবা বলেন, “চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, অপারেশন করাতে হবে। অপারেশনের জন্য আমাদের কাছে দেড় লাখ টাকা চান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই মতো ৪০ হাজার টাকাও দিয়েছি। কিন্তু, অপারেশনের আগেই মেয়ে মারা যায়।” তাঁর আরও দাবি, মেয়ের অবস্থা গুরুতর নয় বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আশঙ্কাজনক অবস্থাতেই ওই কিশোরীকে আনা হয়েছিল। এবং রোগীর পরিবারকে সে কথা জানানোও হয়েছিল। রোগীর এক দাদা মহম্মদ জাহিরের অভিযোগ, “চিকিৎসকেরা এক্সরে করে বলেছিলেন, ওঁর পেটে ফুটো হয়েছে। আর অপারেশন করলেই সে সুস্থ হয়ে উঠবে। কিন্তু, রাত ৩টে নাগাদ সে মারা যায়।” এর পর মৃতার দেহ নিতে অস্বীকার করে তাঁর পরিবার। মহম্মদ জাহিরের অভিযোগ, সে সময় তাঁর বোনের দেহ দেখতে গেলে তাঁকে বাধা দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। ধস্তাধস্তিতে দরজার কাচ ভেঙে ডান হাত কেটে যায় বলে দাবি তাঁর। এর পর মৃতার দেহ নিতে অস্বীকার করে তাঁর পরিবার।
আরও পড়ুন
যেখানেই থাকি, দলের কথাই চিন্তা করব, কান্নায় ভেঙে পড়ে জানালেন শশী
কুর্সি নয় কারাবাস, শশীর স্বপ্নে জল ঢাললেন দুই বাঙালি
ভাঙুচরের পর হাসপাতালের রিসেপশন। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
কিশোরীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরেই এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ হাসপাতাল চত্বরে জড়ো হয় শতাধিক যুবক। সে সময় মৃতার দেহ সরানো নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এক দফা বচসাও বাধে বলে মহম্মদ জাহিরের দাবি। এর পর প্রথমে হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। তার পর হাসপাতালের রিসেপশনে ভাঙচুর চালানো হয়। রিসেপশনের কাচের দেওয়াল ভেঙে ফেলে কম্পিউটার, প্রিন্টার ছুড়ে ফেলে বিক্ষোভকারীরা। রিসেপশনের চারপাশে ভাঙা কাচ। উল্টোনো কম্পিউটার, প্রিন্টার পড়ে থাকতে দেখা যায়। তচনছ করা হয় হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। মারধর করা হয় হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার-সহ বহু কর্মীদের। ডিউটি ম্যানেজারের অভিযোগ, “একসঙ্গে প্রায় শ’খানেক লোক এসে চড়াও হয় আমার উপর। মাটিতে ফেলে আমাকে মারধর করতে থাকে ওরা। তার পর আমার ঘড়ি ও মোবাইল খুঁজে পাচ্ছি না।” এতেও থামেনি বিক্ষেভকারীরা। টেলিভিশন ক্যামেরার সামনেই হাসপাতাল চত্বর থেকে ফুলের টব উঁচিয়ে ছুড়ে ফেলতে থাকে কাচের গেটের উপর। রড চালিয়ে ভেঙে ফেলা হয় মেইন গেটের একাংশ।
ব্যাহত পরিষেবা। ছবি: তিয়াষ মুখোপাধ্যায়।
আতঙ্কিত হয়ে তত ক্ষণে পুলিশে খবর দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঘটনাস্থলে পৌঁছন ডিসি (সাউথ) প্রবীণ ত্রিপাঠী-সহ ইকবালপুর থানার একাধিক পুলিশ আধিকারিক। পৌঁছয় র্যাফ। তা সত্ত্বেও পুলিশের উপস্থিতিতেও তাণ্ডব চলতে থাকে বলে অভিযোগ। দু’দফায় ভাঙচুরের পর ডায়মন্ড হারবার রোডে বেশ কিছু ক্ষণ অবরোধ চলে। ভোগান্তিতে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। সিএমআরআই কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ পুলিশ। হাসপাতালের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক পিয়াসী রায়চৌধুরী বলেন, “মৃতার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েও বলছি, কর্মীদের সুরক্ষার কথা ভেবে আমরা ভীত, সন্ত্রস্ত।” রোগীর মৃত্যু নিয়ে তিনি বলেন, “এখানে ভর্তির সময়ই ওই মেয়েটির অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। সে কথা রোগীর পরিবারকে জানানোও হয়েছিল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy