যাত্রীর প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া পাইলট মাঝ আকাশে ককপিট থেকে বললেন, তিনি চিকিত্সকের সঙ্গে কথা বলতে চান।
কী ভাবে? মাঝ আকাশ থেকে তো আর মোবাইলে কথা বলা যায় না। ঠিক হয়, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) অফিসারদের সঙ্গে পাইলট যে রেডিও-বার্তা মারফত কথা বলেন, সেই ভাবেই কথা বলবেন চিকিত্সকের সঙ্গে। বুধবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দরের এটিসি-তে ডাকা হয় চিকিত্সককে। চটজলদি শেখানো হয় একটি বোতাম টিপে পাইলটের সঙ্গে কথা বলার পদ্ধতি। চিকিত্সকের কানে হেডফোন, মুখের সামনে বাঁকানো মাউথপিস।
মাঝ আকাশ থেকে ভেসে আসে পাইলটের কণ্ঠস্বর, “ম্যাডাম, এই যাত্রী বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন।” চিকিত্সক শর্মিলা কবিরাজ বুঝতে পারেন পাইলটের কথা শেষ হয়েছে। তিনি বোতাম টিপে জিজ্ঞেস করেন, “ব্লাড-প্রেশার, পালস্ দেখা হয়েছে?” এ ভাবেই চলে কথোপকথন। ওই রেডিও-বার্তা মারফতই অক্সিজেন ও স্যালাইন চালু করার কথা বলেন চিকিত্সক। ততক্ষণে বিমানের মুখ কলকাতার দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছেন পাইলট। এয়ার ইন্ডিয়ার ওই বিমানটি ব্যাঙ্কক থেকে যাচ্ছিল মুম্বই। সেই বিমানেই ছিলেন গুজরাতের বাসিন্দা সাবজি জেঠাভাই বাবারিয়া (৫৮)।
যদিও পাইলটের ওই উদ্যোগ, এটিসি-তে চিকিত্সকের ছুটে যাওয়া, কলকাতায় নামার পরে অসুস্থ সাবজি-কে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে হাসপাতালে যাওয়া— কিছুই কাজে আসেনি। রাতেই কলকাতার এক নার্সিংহোমে মারা যান তিনি।
৩০ বছরেরও বেশি কলকাতা বিমানবন্দরে কর্মরত চিকিত্সক সুজিত বক্সী। বিমানবন্দরের চিকিত্সকদের প্রধান তিনি। এ দিন বলেন, “এ ভাবে যাত্রীর প্রাণ বাঁচাতে এটিসি থেকে চিকিত্সকের সঙ্গে পাইলটের কথা বলার নজির আছে বলে আমার অন্তত মনে পড়ছে না। মাঝ আকাশে যাত্রী অসুস্থ হওয়ার ঘটনা ঘটেই। মুখ ঘুরিয়ে বিমান কলকাতায় জরুরি অবতরণও করে। আমাদের ডেকে পাঠানো হয়। আমরা বিমানে উঠে অসুস্থ যাত্রীদের শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিই। অনেক সময়ে মরণাপন্ন যাত্রী থাকেন। অনেকে বেঁচে যান, অনেকে বাঁচেন না। মাঝ আকাশে বিমানে প্রসবের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু এ ভাবে চিকিত্সক-পাইলটের যোগাযোগের ঘটনা জানা নেই।”
ঠিক কী হয়েছিল এ দিন? বুধবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ কলকাতার এটিসি-তে বার্তা পাঠান এয়ার ইন্ডিয়ার ওই পাইলট। জানান, এক যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বিমান তখন বঙ্গোপসাগরের মাথায়। যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন না কোনও চিকিত্সক। এ দিকে, অবস্থার অবনতি হচ্ছে ওই যাত্রীর। এই অবস্থায় মুম্বই না গিয়ে তিনি তাড়াতাড়ি কলকাতায় নামতে চান। এটিসি অফিসারেরাও সেই মতো বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। খবর যায় মেডিক্যাল ইউনিটে। চিকিত্সক তাঁর সহকারীকে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে রওনা হন পার্কিং বে-র দিকে, যেখানে বিমানটি এসে নামার কথা। এই সময়েই এটিসি থেকে আবার খবর পাঠানো হয়, পাইলট কথা বলতে চাইছেন চিকিত্সকের সঙ্গে। এর পরে রাত দশটা নাগাদ বিমানটি কলকাতায় নামে। সাবজি ও তাঁর দুই বন্ধুকে নামিয়ে বিমানটি রাত বারোটা নাগাদ বাকি ২৪৪ জন যাত্রীকে নিয়ে মুম্বই উড়ে যায়।
যে ভিএইচএফ (ভেরি হাই-ফ্রিকোয়েন্সি) রেডিও-বার্তা মারফত পাইলট ও এটিসি অফিসারেরা কথা বলেন, তার জন্য প্রশিক্ষণ দরকার। প্রয়োজন লাইসেন্সেরও। প্রধানত বিমানের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং জরুরি অবস্থা দেখা দিলে এই বার্তা আদানপ্রদান হয়। বিমান কোন উচ্চতায় উড়বে, কখন নামবে, কখন উড়বে, আগে-পিছে অন্য বিমান রয়েছে কি না— এ সবই পাইলটকে জানানো হয় রেডিও-বার্তা মারফত। কিন্তু কোনও যাত্রীর প্রাণ বাঁচাতে এ ভাবে চিকিত্সক-পাইলট কথোপকথন? মনে পড়ছে না পোড় খাওয়া এটিসি অফিসারদেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy