Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Doctors

Rural doctors: গ্রামীণ ডাক্তার নিয়োগ নিয়ে উভয়সঙ্কটে স্বাস্থ্যকর্তারা

কয়েক বছর হল, স্বাস্থ্য দফতরের তরফে গ্রামীণ চিকিৎসকদের ছ’মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২২ ০৫:৩৩
Share: Save:

সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গ্রামীণ চিকিৎসক নিয়োগ সংক্রান্ত মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় উভয়-সঙ্কটে পড়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। এক দিকে নিয়োগ নিয়ে চাপ বাড়াচ্ছেন গ্রামীণ চিকিৎসকেরা। অন্য দিকে, বিধি মেনে এই নিয়োগ কী ভাবে সম্ভব, তা বুঝতে পারছেন না স্বাস্থ্যকর্তারা।

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা দ্রুত কার্যকর করার দাবি দিনদিনই তীব্র হচ্ছে। শাসক এবং বিরোধী— উভয় পক্ষের মদতপুষ্ট গ্রামীণ চিকিৎসকদের সংগঠনগুলি প্রবল চাপ তৈরি করেছে স্বাস্থ্যকর্তাদের উপরে। তারা স্বাস্থ্যসচিব ও মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে চিঠি পাঠাচ্ছে, স্মারকলিপি দিচ্ছে। এর মধ্যেই আবার অভিযোগ উঠেছে, শাসকদলের অনেক স্থানীয় নেতা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা তুলছেন গ্রামীণ চিকিৎসকদের কাছ থেকে! মুর্শিদাবাদ, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো একাধিক জেলায় এই অভিযোগ উঠেছে।

এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকর্তারা না পারছেন গ্রামীণ চিকিৎসকদের আশ্বস্ত করতে, না পারছেন সরাসরি মুখের উপরে ‘হবে না’ বলে দিতে। তাঁরা বিলক্ষণ বুঝেছেন যে, আইন মেনে সরকারি জায়গায় গ্রামীণ চিকিৎসকদের নিয়োগ কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করায় তাঁরা মুখেও কিছু বলতে পারছেন না।

মাস ছয়েক আগে এসএসকেএমে স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, গ্রামীণ চিকিৎসকদের (যাঁদের এক সময়ে হাতুড়ে বলা হত) গ্রামে গ্রামে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করাতে চায় রাজ্য সরকার। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে পাশে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘আমাদের ডাক্তারের অভাব রয়েছে। চাইলেই পাওয়া যায় না। কারণ, ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ নিয়ে তবে আসতে হয়। তাই আমরা ঠিক করেছি, কোয়াক ডাক্তারদের কাজে লাগানো হবে।’’ তাঁর বক্তব্য ছিল, চিকিৎসক হিসেবে নয়, ওই হাতুড়েদের প্রয়োজনীয় কিছু প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাস্থ্য-পরিষেবার কাজে লাগানো হবে গ্রামের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এ বিষয়ে চিকিৎসক মহলের একটি বড় অংশেরই প্রশ্ন, যে গ্রামীণ চিকিৎসকদের বৈধ ডিগ্রিই নেই, যাঁদের সরকারই চিকিৎসকের স্বীকৃতি দিতে পারেনি, তাঁরা কী ভাবে সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মানুষকে পরিষেবা দেবেন?

কয়েক বছর হল, স্বাস্থ্য দফতরের তরফে গ্রামীণ চিকিৎসকদের ছ’মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যার শর্ত হল, তাঁরা শুধু রোগ নির্ণয় করতে পারবেন, রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে প্রচার করতে পারবেন এবং রোগীকে মৌখিক পরামর্শ দিতে বা ‘রেফার’ করতে পারবেন। কিন্তু তাঁরা ওষুধ লিখতে পারবেন না, স্যালাইন বা ইঞ্জেকশন দিতে অথবা ক্ষতে সেলাই করতেও পারবেন না। তা হলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিযুক্ত হলেও তাঁরা কী ভাবে কাজ করবেন? কোন পদে তাঁদের নিয়োগ করা হবে? এর কোনও উত্তরই স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে নেই। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘কী প্রক্রিয়ায় বা পদ্ধতিতে এটা করা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা চলছে।’’ স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা এখনও কিছু ঠিক করিনি।’’

এ দিকে, নিয়োগের দাবিতে চাপ বাড়াচ্ছেন গ্রামীণ চিকিৎসকেরা। তাঁদের মধ্যে তৃণমূলপন্থী গ্রামীণ চিকিৎসকেরাও রয়েছেন। গত ১৪ জানুয়ারি ‘প্রোগ্রেসিভ রুরাল ফিজ়িশিয়ান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য সভাপতি মনোজ চক্রবর্তী মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। ‘রাজ্য পল্লি চিকিৎসক সংগঠন’-এর সভাপতি দিলীপকুমার পান বললেন, ‘‘রাজ্যে প্রায় আড়াই লক্ষ গ্রামীণ চিকিৎসক রয়েছেন। সরকারি খাতায় তাঁদের মধ্যে সাকুল্যে এক লক্ষ ১০ হাজারের নাম নথিভুক্ত রয়েছে। আমাদের দাবি, এঁদের অন্তত অবিলম্বে নিয়োগ করা হোক।’’

গ্রামীণ চিকিৎসকদের আর এক সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ মেডিক্যাল প্র্যাক্টিশনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’র প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্যসচিবকে স্মারকলিপি দিয়ে একই দাবি জানিয়েছেন। সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা তরুণ মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার সূত্র ধরেই বিভিন্ন জেলায় অনেক নেতা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চাকরি দেওয়ার নামে গ্রামীণ চিকিৎসকদের থেকে টাকা নিচ্ছেন। সরকার এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Doctors primary health center
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy