অবশেষে ‘নিষ্ক্রিয়’ থেকে ‘সক্রিয়’ করা গেল তাঁদের। অবশেষে বোল ফুটল তৃণমূলের ‘মূক-বধির’ বিধায়কদের মুখে। সদ্যসমাপ্ত বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের শেষ চার দিনে শাসকদলের দু’ডজনের বেশি বিধায়ক অংশ নিলেন বক্তৃতায়।
২০২৫-’২৬ অর্থবর্ষের বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনই দলের বিধায়কদের সঙ্গে বিধানসভার নওশার আলী কক্ষে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকের আগে তৃণমূল পরিষদীয় দলের তরফে বিধায়কদের গত চার বছরের কাজকর্মের পর্যালোচনা হয়েছিল। পর্যালোচনার পর পরিষদীয় দল যে তালিকা তৈরি করেছিল, তাতে মোট ১১৮ জন ‘মূক-বধির’ বিধায়কের নাম উঠে এসেছিল। যাঁরা গত চার বছরে বিধানসভার কোনও পর্যায়ের আলোচনাতেই অংশ নেননি। সে প্রশ্নোত্তর পর্ব হোক বা দৃষ্টি আকর্ষণ পর্ব কিম্বা কোনও প্রস্তাব বা বিল নিয়ে আলোচনা হোক। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে মাত্র এক বছর হাতে রয়েছে বিধায়কদের। এই এক বছরে ওই ১১৮ জন বিধায়ককে বিধানসভার অন্দরে সক্রিয় করতে চেয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং বিধানসভায় তৃণমূলের মুখ্যসচেতক নির্মল ঘোষকে।
বাজেট অধিবেশনের প্রথমার্ধের শেষে দেখা যাচ্ছে, আপাতত সেই দায়িত্ব পালনে খানিকটা সফল হয়েছেন তৃণমূলের দুই প্রবীণ নেতা। আবার পর্যালোচনা করে তৃণমূল পরিষদীয় দল জেনেছে, প্রশ্নোত্তর পর্ব, দৃষ্টি আকর্ষণ পর্ব, রাজ্যপালের ভাষণের উপর বক্তৃতা এবং বাজেট নিয়ে আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন ওই ১১৮ জনের তালিকায় থাকা একঝাঁক বিধায়ক। সেই তালিকায় রয়েছেন জয়নগরের বিশ্বনাথ দাস, কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনওয়াজ, হরিপালের বিধায়ক করবী মান্না, নারায়ণগড়ের বিধায়ক সূর্য অট্ট, বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। সদ্য বিধানসভার উপনির্বাচনে জিতে বিধায়ক হওয়া মাদারিহাটের বিধায়ক জয়প্রকাশ টোপ্পো, মেদিনীপুরের সুজয় হাজরা, তালড্যাংরার ফাল্গুনী সিংহ বাবু, বাগদার মধুপর্ণা ঠাকুর এবং হাড়োয়ার শেখ রবিউল ইসলামও বক্তৃতা করেছেন।
দীর্ঘ চার বছর ধরে ‘নিষ্ক্রিয়’ বিধায়কদের বক্তৃতা করা প্রসঙ্গে মুখ্যসচেতক নির্মল বলেন, ‘‘বাজেট অধিবেশনের প্রথমার্ধে অনেক নতুন বক্তাকে আমরা বক্তৃতা করার সুযোগ করে দিয়েছি। আগামী ১০-২০ মার্চ পর্যন্ত আবার বিধানসভার বাজেট অধিবেশন হবে। সেই সময়ে আরও নতুন বক্তাকে অধিবেশনে অংশগ্রহণ করতে দেখা যেতে পারে।’’ দলের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন প্রথম বারের বিধায়ক হয়েও গত চার বছরে প্রায় বিধানসভার সব বড় ধরনের বিল বা প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নেওয়া লালগোলার বিধায়ক মহম্মদ আলি। তিনি বলেন, ‘‘দল এবং মানুষ— উভয়ের প্রতিই আমরা জনপ্রতিনিধিরা দায়বদ্ধ। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমাদের প্রত্যেকের উচিত বিধানসভার প্রতিটি পর্বে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা। যে ভাবে আমাদের গোটা পরিষদীয় দলকে সক্রিয় করার চেষ্টা হচ্ছে, তাতে রাজ্যের মানুষের প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের দায়বদ্ধতা কতটা, তা-ও প্রমাণিত হয়েছে।’’
দীর্ঘ চার বছর ধরে ‘নিষ্ক্রিয়’ বর্ধমান উত্তরের বিধায়ক নিশীথ মালিকও প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়েছেন শেষ চার দিনের মধ্যে এক দিন। তাঁর কথায়, ‘‘দল টিকিট দিয়েছিল বলেই বিধায়ক হয়েছি। তাই দল যা নির্দেশ দেবে, তা মেনে চলতে আমি বাধ্য। দল আমাদের বিধানসভার অধিবেশনে সক্রিয় হতে বলেছে। সেই নির্দেশমতোই আমি প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়েছিলাম। আগামী দিনেও নানা ভাবে বিধানসভার অধিবেশনে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করব।’’ প্রথম বারের বিধায়ক আমতার সুকান্ত পাল বলেন, ‘‘কোনও কোনও মহল থেকে বলা হয়েছে, আমিও নাকি বিধানসভায় নিষ্ক্রিয় থাকি। কিন্তু শেষ চার বছরের অধিবেশনে আমি নিজের বিধানসভার দাবিদাওয়া নিয়ে বার বার সরব হয়েছি। বিল এবং প্রস্তাব নিয়েও আলোচনায় অংশ নিয়েছি। মানুষ আমাদের নির্বাচিত করেছেন বিধানসভায় তাঁদের হয়ে কথা বলার জন্য। আমাদের তো সক্রিয় থাকতেই হবে।’’