একটি ১৪ বছরের কিশোরী জানে সে কী করছে। তাই এ ক্ষেত্রে তার প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা যাবে না। পাঁচ বছরের পুরনো একটি পকসো মামলায় অভিযুক্তের পক্ষে রায় দিয়ে এমনটাই জানাল বম্বে হাই কোর্ট।
২০১৯ সালের একটি পকসো মামলায় অভিযু্ক্তকে গত সোমবার জামিন দিয়েছে উচ্চ আদালত। বিচারপতি মিলিন্দ যাদবের কথায়, ‘‘কিশোরী জানিয়েছে, সে ছেলেটিকে ভালবাসত এবং দু’জনের সম্মতিতেই ঘটনাটি ঘটেছিল।’’ বিচারপতি যাদব জানিয়েছেন, কিশোরী হলেও মামলা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্যপ্রমাণ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, সে কী করছিল তা বোঝার মতো যথেষ্ট জ্ঞান তার ছিল। অন্য দিকে, পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে অভিযুক্ত তরুণ জেলে বন্দি থাকলেও বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এর পরেই ওই তরুণকে জামিন দিয়েছেন বিচারপতি।
সোমবার আদালতে মামলাকারীর আইনজীবী জানান, যে হেতু মেয়েটির বয়স ১৮ বছরের কম ছিল, সে ক্ষেত্রে তার সম্মতিকে ‘সম্মতি’ হিসাবে গ্রাহ্য করা যায় না। যদিও এই যুক্তি উড়িয়ে দিয়েছেন বিচারপতি। হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, শারীরিক পরীক্ষার সময়েও বার বার ওই তরুণের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছিল কিশোরী। তাই এ ক্ষেত্রে মেয়েটি কিশোরী হলেও ওই তরুণের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মতো অভিযোগ আনা যাবে না।
২০১৯ সালে ওই তরুণের বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন কিশোরীর বাবা। সেই সময় ‘নির্যাতিতা’র বয়স ছিল ১৪ বছর। অভিযুক্তের বয়স ছিল ১৯। ওই দু’জনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সে সময় চার দিন তিন রাত স্বেচ্ছায় প্রেমিকের সঙ্গে সহবাস করেছিল ১৪ বছরের কিশোরী। এর পরেই তরুণের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন কিশোরীর বাবা। ভারতীয় দণ্ডবিধির অপহরণ ও ধর্ষণের সংশ্লিষ্ট ধারার পাশাপাশি পকসো আইনেও মামলা দায়ের হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৯ সালেই তরুণকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সোমবার ছাড়া পেয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, অতি সম্প্রতি এক মামলায় দিল্লি হাই কোর্ট জানিয়েছে, বয়ঃসন্ধিকালে দু’জনের সম্মতিতে প্রেমের সম্পর্কে কারও মনে পকসো আইনের ভয় থাকা উচিত নয়। আইনি খবর পরিবেশনকারী মাধ্যম ‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’ও জানিয়েছে, গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন হাই কোর্টে একই ধরনের মতামত উঠে এসেছে। বয়ঃসন্ধিকালে দু’পক্ষের সম্মতিতে যৌন সম্পর্ককে যৌন হেনস্থা বলা নিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। ন্যূনতম বয়সসীমা ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ করার জন্য আইনি সংশোধনের প্রয়োজনের কথাও সেই সময় জানায় আদালত। ২০২১ সালে মাদ্রাজ হাই কোর্টও একই কথা বলেছিল। এ বার একই সুর বম্বে হাই কোর্টের।