Advertisement
E-Paper

সিন্ডিকেটের মোটরবাইকের দাদাগিরি শহরে, নাজেহাল যাত্রীরা

হেনস্থার শিকার ওই বাইকচালকের অভিযোগ, এর পরে পুলিশ জানায়, সেখানে সিন্ডিকেটের বাইক রয়েছে।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৩
Share
Save

হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ বাবাকে দেখতে কর্মক্ষেত্র ছেড়ে তড়িঘড়ি ট্রেন ধরে কলকাতায় এসেছিলেন ছেলে। হাওড়া স্টেশন থেকে গন্তব্য ছিল মল্লিকবাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতাল। দ্রুত সেখানে পৌঁছে যেতে অ্যাপনির্ভর সংস্থার একটি বাইক-ট্যাক্সি নেন তিনি। কিন্তু অভিযোগ, হাওড়া স্টেশনের বাইরে সেই বাইকে ওঠার সময়ে কয়েক জন ঘিরে ধরে তাঁকে। মারমুখী ভঙ্গিতে বলা হয়, ‘‘এই বাইকে যাওয়া যাবে না! অন্য পথ দেখুন।’’

অভিযোগ, অ্যাপ-বাইকের চালকের উপরে ওই ঘিরে ধরা লোকজনের চোটপাট ছিল আরও বেশি। যাত্রী নেওয়া তো দূর, কার্যত ধাক্কা দিতে দিতে বার করে দেওয়া হয় ওই অ্যাপ-বাইক চালককে। অভিযোগ, কাছেই কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকে বিষয়টি জানানো হলে ওই অ্যাপ-বাইক চালককেই উল্টে হেনস্থা করা হয়। কী করে বাণিজ্যিক নম্বর প্লেট ছাড়া ওই
অ্যাপ-বাইক চালানো হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তোলা হয়। বাইকচালকের দাবি, মোটা টাকার জরিমানার ভয় দেখিয়ে পুলিশ তাঁকে বলে, ‘‘এই জায়গাটা ওদের। সারা শহর তো পড়ে রয়েছে, গিয়ে যাত্রী তোলো।’’

হেনস্থার শিকার ওই বাইকচালকের অভিযোগ, এর পরে পুলিশ জানায়, সেখানে সিন্ডিকেটের বাইক রয়েছে। অফলাইনে তারাই যাত্রী পরিষেবা দেয়। তাই কোনও অ্যাপনির্ভর সংস্থার বাইককে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয় না। অভিযোগ, এই ভাবেই যাত্রী ভাঙিয়ে নিয়ে আদতে এক ধরনের ‘বাইক সিন্ডিকেট’ চলছে সেখানে। এই পথে যাত্রীর থেকে ভাড়াও হাঁকা হচ্ছে অনেকটাই বেশি। অ্যাপ সংস্থার বাইকে যে পথ যেতে হয়তো ১০০ টাকা লাগত, সেটাই কারও থেকে ১৫০ কারও থেকে ২০০ টাকারও বেশি নেওয়া হচ্ছে!

এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং শহরের একাধিক জায়গায়
এমন বাইক সিন্ডিকেটের রমরমা চলছে বলে অভিযোগ। একাধিক ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থ
হয়েও কোনও সুরাহা হচ্ছে না বলে দাবি ভুক্তভোগী বাইকচালকদের। উল্টে ‘টাকার সেটিং’ থাকায় অভিযোগকারী বাইকচালকের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে প্রশাসনিক কোনও কোনও স্তর থেকে। ‘কলকাতা সাবার্বান বাইক ট্যাক্সি অপারেটর্স ইউনিয়ন’-এর সভাপতি শান্তি ঘোষ বললেন, ‘‘এমন এক সিন্ডিকেট-রাজ চলছে, যার জেরে সাধারণ
মানুষই সবচেয়ে বেশি নাজেহাল হচ্ছেন।’’ শান্তি জানান, এমন সিন্ডিকেটের রমরমা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছে দমদম, হাওড়া,
কলকাতা রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকা এবং কলকাতা বিমানবন্দর, টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়।
বাদ নেই ধর্মতলার মতো ব্যস্ত এলাকাও। এ নিয়ে তাঁদের তরফে পুলিশের কাছে স্মারকলিপি
দেওয়া হলেও কোনও উত্তর এখনও পর্যন্ত আসেনি বলে শান্তির
অভিযোগ।

কিন্তু কী ভাবে চলছে এমন বাইক-ট্যাক্সি সিন্ডিকেট? ভুক্তভোগী বাইকচালকদের দাবি, গত বছর পরিবহণ দফতর বাণিজ্যিক
কাজে মোটরবাইক ব্যবহার করার জন্য ছাড়পত্র দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। বাইক-ট্যাক্সি এবং নানা অ্যাপনির্ভর সংস্থায় যে বাইক
চলে, তার মালিকেরা আবেদন করলে পাঁচ বছরের জন্য ওই পারমিট
দেওয়া হবে বলে সরকারি শিবিরও
করা হয়। এই সময়েই একাধিক সংগঠনের মাধ্যমে এমন বাইকচালকেরা এক ছাতার তলায় আসতে শুরু করেন। তেমনই একটি সংগঠন এক নেতার মদতে এর পরে নিজেদের মতো করে প্রথমে ধর্মতলা চত্বরে কাজ শুরু করে বলে জানা যাচ্ছে। সেই সূত্রেই এমন কাজ শুরু হয় হাওড়া, বিমানবন্দর এবং দমদম রেলস্টেশনের মতো
ব্যস্ততম জায়গায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাইক ট্যাক্সি-চালক বলেন, ‘‘এঁরা প্রত্যেকেই আগে
বিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করতেন। এর পরে এক ছাতার নীচে এসে সিন্ডিকেট
তৈরি করেছেন। ধরা যাক, এই সিন্ডিকেট হাওড়া স্টেশনের বাইরে রয়েছে। এ বার কোনও যাত্রী নিজের ফোনে বাইক খুঁজে নিয়ে
স্টেশনের বাইরে অপেক্ষা করছেন। এখন অ্যাপ সংস্থার বাইকচালক আসতেই ঝাঁপিয়ে পড়বেন এই সিন্ডিকেটের ছেলেরা। রীতিমতো মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া
হবে তাঁকে। নিরুপায় হয়ে যাত্রী এর পরে বিকল্প পথ খোঁজার চেষ্টা করবেন। সেই সময়েই সিন্ডিকেটের বাইকচালকেরা যাত্রী বুঝে
ইচ্ছে মতো ভাড়া হাঁকবেন।’’ কিন্তু এতে তো অ্যাপ সংস্থার যেমন ক্ষতি হচ্ছে, সরকারও তো রাজস্ব হারাচ্ছে! পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বললেন, ‘‘কিছু অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।’’

যদিও এমনই এক সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত বাইকচালক বললেন, ‘‘সব নিয়ম মেনে বাণিজ্যিক লাইসেন্স নিয়ে কত জন বাইক চালাচ্ছেন? সরকার এমনিও টাকা পায় না। তার বদলে কয়েক জন দাদাকে খুশি করে দিতে পারলেই এই পথে প্রচুর আয়
করা যায়!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Railway Stations

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}