মামলা হয়েছিল একটি বাড়ির ‘অবৈধ’ তকমা নিয়ে। কিন্তু সেই মামলায় তথ্য খুঁড়তে গিয়ে উঠে এসেছে, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি এলাকায় অন্তত পাঁচশোটি বেআইনি নির্মাণের খবর। আদালতের খবর, সেই তালিকায় বসতবাড়ি, আবাসনের পাশাপাশি বেসরকারি স্কুল, কলেজ এবং বড় মাপের গাড়ি মেরামতির কারখানা—সবই আছে। এই মামলায় ইএম বাইপাস সংলগ্ন জগতিপোঁতা এলাকার ওই সব বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ। বেআইনি নির্মাণের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
আদালতের খবর, এই মামলায় সম্প্রতি ওই এলাকার কিছু বাসিন্দা কোর্টে অভিযোগ করেছেন যে প্রশাসন বেছে বেছে কিছু বাড়ি ভাঙছে। বাকিগুলির ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করছে না। এ ব্যাপারেও ওই আবেদনকারীদের কাছ থেকে হলফনামা তলব করেছেন বিচারপতি সিংহ। একটি সূত্রের দাবি, জলাভূমির উপরে নির্মিত কয়েকটি ছোট মাপের একতলা বাড়ি ভাঙা হলেও বড় মাপের আবাসন বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এখনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলেই এই দাবি উঠেছে।
প্রসঙ্গত, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি দখল করে নির্মাণের অভিযোগ নতুন নয়। এর আগেও অভিযোগের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে প্রশাসন এফআইআর রুজু করে চার্জশিট জমা দিলেও নির্মাণগুলি ভাঙার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সক্রিয়তা থাকে না। সেই সব নির্মাণ ভাঙার ক্ষেত্রে কোর্টের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়। সাম্প্রতিক অতীতে হাই কোর্ট শুধু কলকাতা জলাভূমি নয়, রাজ্যের একাধিক জায়গায় বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে নির্দেশ দিয়েছে।
হাই কোর্টের খবর, এই মামলাটির উৎস শ্যামলকুমার লাহিড়ি নামে এক ব্যক্তি। তাঁর আবাসন নির্মাণ নিয়ে প্রথমে মামলা হয়েছিল। সেই বাড়ি বেআইনি চিহ্নিত করে ভাঙার নির্দেশ হয়। পরবর্তী কালে শ্যামলকুমার ওই এলাকার বাকি বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপের আর্জি জানান। তাঁর বর্তমান আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত এবং শিঞ্জিনী চক্রবর্তী জানান, শ্যামলকুমারের বাড়ি ভাঙার পরবর্তী সময়ে জানা গিয়েছে যে সেটি জলাভূমি এলাকায় ছিল না। সেই ঘটনার পর মামলা যে দিকে গড়িয়েছে তাতে পাঁচশোটি বেআইনি নির্মাণের কথা উঠে এসেছে।
এই মামলার সর্বশেষ শুনানিতে কোর্টে পূর্ব কলকাতা জলাভূমি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা বেআইনি নির্মাণ ভেঙে জলাভূমি উদ্ধারের কাজ করছেন। সেই তথ্য নথিবদ্ধ করার পাশাপাশি বিচারপতি এ-ও নির্দেশ দিয়েছেন যে আরও যে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে, সেগুলি পরিদর্শন করে যথাযথ পদক্ষেপ করতে হবে। রাজ্য প্রশাসনকে ওই জলাভূমি এলাকায় কোনও সম্পত্তির রেজিস্ট্রি এবং নির্মাণের অনুমতি দিতে নিষেধ করা হয়েছে। আগামী ৫ মে ফের এই মামলার শুনানি হবে বলে আদালত জানিয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)