Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ছাত্রীদের বিক্ষোভ এনআরএসে

শেষ পর্যন্ত পুলিশের গাড়িতে হাসপাতাল চত্বর ছাড়েন হাসপাতালের কর্তারা।

নার্সিং পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে এনআরএস-এর ডেপুটি সুপারকে উদ্ধার করছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

নার্সিং পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে এনআরএস-এর ডেপুটি সুপারকে উদ্ধার করছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:১৪
Share: Save:

কুকুর ছানা হত্যায় ধৃতদের প্রশিক্ষণ দেওয়া-সহ তিন দফা দাবি নিয়ে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং পড়ুয়াদের বিক্ষোভ চলছিলই। তবে বৃহস্পতিবার হাসপাতাল চত্বরে তাঁদের স্লোগান-সহ মিছিলের পর বৈঠক ডাকেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সন্ধ্যায় বৈঠক তো ভেস্তে গেলই, উল্টে বৈঠক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে নার্সিং পড়ুয়াদের একাংশ চড়াও হন ডেপুটি সুপার দ্বৈপায়ন বিশ্বাস ও নার্সিং সুপার মনীষা ঘোষের উপর। শেষ পর্যন্ত পুলিশের গাড়িতে হাসপাতাল চত্বর ছাড়েন হাসপাতালের কর্তারা।

বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার অন্যতম মূল কারণ, সেখানে ‘স্বাস্থ্য ভবনের প্রতিনিধি’ বলে পরিচয় দেওয়া কয়েক জনের উপস্থিতি। অভিযোগ, এনআরএস হাসপাতালের সিস্টার নিবেদিতা অডিটোরিয়ামে নার্সিং ছাত্রীরা ওই ‘প্রতিনিধি’দের নাম কিংবা পদমর্যাদা জিজ্ঞাসা করতে পাল্টা উত্তর আসে, ‘তোমাদের পাশে আছি। মুখ্যমন্ত্রী পাঠিয়েছেন। চুপ করে কথা শোনো।’ পড়ুয়াদের পাল্টা প্রশ্ন, ‘নিজের পরিচয় দিচ্ছেন না কেন? নার্সিং সুপারকে ডেকে আনুন, তবে কথা হবে।’ প্রতিনিধিদের এক জনের মন্তব্য, ‘আমাদের সব জানাও। উপরমহল জানতে পারবে। আমরা সিএমের লোক।’

ঘণ্টাখানেক এ ভাবেই দু’পক্ষের বচসা চলে। পড়ুয়াদের একাংশ অভিযোগ তোলেন, স্বাস্থ্যভবনের প্রতিনিধি হিসাবে পরিচয় দেওয়া নার্সেরা ‘প্রোগ্রেসিভ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন’এর (শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত) সদস্য। ‘প্রতিনিধি’-রা পাল্টা জানান, অডিটোরিয়ামে ‘নার্সেস ইউনিটি’ নামে একটি সংগঠনের (হাসপাতাল সূত্রের খবর, সংগঠনটি শাসক দল বিরোধী বলে পরিচিত) নেতৃত্ব রয়েছেন। তাঁরা বেরিয়ে গেলে তবেই সুপার বৈঠকে আসবেন। এক প্রতিনিধির কথায়, ‘‘তোমাদের ভুল বোঝানো হচ্ছে। ওঁদের বেরিয়ে যেতে বল। না হলে বিপদ বাড়বে।’’
শেষ পর্যন্ত হাসপাতালের নার্সিং টিউটরদের মধ্যস্থতায় অডিটরিয়াম থেকে নার্সেস ইউনিটি এবং স্বাস্থ্যভবনের ‘প্রতিনিধি’রা বেরিয়ে যান। তারপরে নার্সিং পড়ুয়াদের সঙ্গে নার্সিং সুপার, ডেপুটি সুপার ও সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ের রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ সেই বৈঠকও ভেস্তে যায়।
এনআরএস হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কুকুর ছানা খুনের ঘটনায় ধৃত দুই ছাত্রীকে কর্তৃপক্ষ প্রশিক্ষণ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই ঘটনায় যে আরও তিনজন নার্সিং পড়ুয়ার যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের বিরুদ্ধেও হাসপাতালের তদন্ত কমিটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে। কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের খবর, এদিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মেনকা গাঁধী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ফোন করে ওই দুই পড়ুয়াকে কার্যত বহিষ্কারের কথা বলেন। নচেৎ এই নার্সিং প্রশিক্ষণ কলেজের ‘রেজিস্ট্রেশন’ বাতিল হতে পারে বলেও তিনি জানান।
এদিন বিকেলে প্রায় শ’দুয়েক নার্সিং পড়ুয়া প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে হাসপাতাল চত্বরে মিছিল করেন। পড়ুয়াদের দাবি, ধৃতদের প্রশিক্ষণ পাওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না। গত তিন বছরে প্রায় ৩৫ জন নার্সিং পড়ুয়াকে কুকুরে কামড়েছে। তাই হাসপাতাল চত্বরকে কুকুর-বেড়াল মুক্ত করতে হবে। বারবার অভিযোগ করার পরে নার্সিং সুপার কুকুরদের বিষ দিয়ে মেরে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এই ঘটনার পরে তিনি কেন পড়ুয়াদের মুখোমুখি হচ্ছেন না? এই অভিযোগ সম্পর্কে মনীষাদেবীর কোনও বক্তব্য রাত পর্যন্ত মেলেনি।
রাতে হাসপাতালের সুপার বলেন, ‘‘ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ওঁদের কিছু ভ্রান্ত ধারণা ছিল। সেগুলি কেটে গিয়েছে। বৈঠক শেষে কয়েক জন বহিরাগত অবাঞ্ছিত আচরণ করেছেন। তাঁরা কী ভাবে ঢুকলেন, তা আমি জানি না।’’ যদিও নার্সিং পড়ুয়াদের অভিযোগ, তাঁদের দাবি কর্তৃপক্ষ মানতে নারাজ। তাই স্লোগান দিয়েছিলেন তাঁরা।
দুই অভিযুক্ত পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে অবশ্য স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি সুপার। তিনি বলেন, ‘‘কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ ভাবে রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে পারে না। আমরা এমন কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। এ ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নার্সিং কাউন্সিল নেবে।’’ স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী অবশ্য স্পষ্টই বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ভবনের কোনও প্রতিনিধিকে বৈঠকে পাঠানো হয়নি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

NRS hospital Dogs Crime Puppies Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE