সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিয়ে আপৎকালীন নম্বর জুগিয়ে রেখেছে প্রশাসন। ভরসা দিয়েছে, সহায়তা মিলবে ২৪ ঘণ্টাই। কিন্তু সেই আপৎকালীন নম্বর, ১০০— তার আদৌ অস্তিত্ব রয়েছে কি? সাড়া মেলে প্রয়োজনে?
রবিবার মাঝরাতে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া একটি পথ-দুর্ঘটনার পরে চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা বলল, না। নম্বর, ভরসা, আশ্বাস— সবই কেবল প্রশাসনিক ‘নির্দেশ’ পর্যন্তই কার্যকর। নির্দেশের সীমানা পেরিয়ে বাস্তবে অস্তিত্ব নেই তাদের। বিপদের মুখে উত্তর মেলে না!
রবিবার রাত তখন ১১টা ৫৭। ঘটনাস্থল প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিটের সামনে। এক পরিচিতকে ট্যাক্সিতে তুলে দেব বলে অপেক্ষা করছি। অ্যাপের মাধ্যমে বুক করা ট্যাক্সি কয়েক মিনিটেই এসে পৌঁছবে। এমন সময়ে, যোগাযোগ ভবনের দিক থেকে সাঁ সাঁ করে ছুটে আসা একটা সাদা সেডান গাড়ির বেপরোয়া ধাক্কায় ছিটকে পড়লেন এক পথচারী। অত্যন্ত দ্রুত ছুটে আসা গাড়িটি গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না-পারায় ঘটল দুর্ঘটনা। প্রায় ফুট দশেক দূরে ছিটকে পড়ে যাওয়া ওই ব্যক্তি তখন নিঃসাড়। মাথার পিছন দিক থেকে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। তাঁর হাত থেকে ছিটকে রাস্তায় ছড়িয়ে পড়েছে প্যাকেটের ভাত-তরকারি। মুহূর্তের মধ্যে বাঁ দিকে মুখ ঘুরিয়ে ম্যাডান স্ট্রিটের দিকে পালিয়ে গেল ঘাতক গাড়িটি। নম্বর প্লেটের শেষ চারটে সংখ্যা দেখতে পেলাম শুধু। ৪৭০০।
পুরো ঘটনাটা কয়েক সেকেন্ডের। সঙ্গে সঙ্গে ১০০ ডায়াল করলাম মোবাইল থেকে। বেজে গেল। আবার করলাম, আরও কয়েক বার করলাম। উত্তর মিলল না। এর পরে ডায়াল করলাম ১০২। বেজে গেল সেটিও। লালবাজারের আপৎকালীন নম্বর ১০০ এবং আপৎকালীন অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা ১০২। সত্যিকারের আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যে এই নম্বরে সাড়া মেলে না, তা নিয়ে এত দিন অভিযোগ পেতাম নানা জায়গা থেকে। কিন্তু অভিজ্ঞতাও যে একই কথা বলবে, জানতে পারতাম না এই দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী না-হলে। আহত ব্যক্তি পড়ে রয়েছেন। রক্ত গড়িয়ে পড়ছে মাথার পিছন থেকে। লোক জড়ো হয়েছে। আশপাশে কোনও পুলিশ নেই, নেই সার্জেন্টও। এমনকী, পুলিশের কোনও টহলদার গাড়িও চোখে পড়ল না।
পরপর কয়েকটি গাড়ি ও ট্যাক্সিকে থামাতে না পারলেও অবশেষে একটি ট্যাক্সি থামল। তাতে করে ওই অচেতন ব্যক্তিকে নিয়ে এসএসকেএম চলে গেলেন দু’জন। ততক্ষণে ১০০ ডায়ালে সাড়া না পেয়ে আমি খবর দিয়েছি ট্র্যাফিক কন্ট্রোল রুম এবং ওসি কন্ট্রোল রুমে। মিনিট পনেরোর মাথায় খবর পেলাম, ঘাতক গাড়িটি চাঁদনি চক বাজারের মুখ থেকে ধরা পড়েছে। ট্র্যাফিক কন্ট্রোল রুমের নির্দেশে এবং স্থানীয় ট্র্যাফিক গার্ডের তৎপরতায় নম্বর মিলিয়ে আটক করা হয়েছে সেটিকে।
ইতিমধ্যে এসএসকেএমে পৌঁছে প্রাথমিক চিকিৎসাও শুরু হয় আহত ব্যক্তির। সিটি স্ক্যান ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষার পরে চিকিৎসকেরা জানান, আঘাত তেমন গুরুতর নয়। রক্তপাত বন্ধ হয়েছে, তবে তখনও জ্ঞান ফেরেনি তাঁর। জানা যায়নি পরিচয়। হাসপাতালে পৌঁছয়নি পুলিশও। যদিও দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই ওসি কন্ট্রোলে জানিয়েছিলাম ১২টা নাগাদ। তা সত্ত্বেও অভিযোগ, হাসপাতালে পুলিশ পৌঁছেছে রাত সওয়া দু’টোয়।
অথচ কিছু দিন আগেই রাতের শহরে পথ-নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক ডেকে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার নিজে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যে কোনও সময় যে কোনও দুর্ঘটনার খবর পেলেই সঙ্গে সঙ্গে যৌথ পদক্ষেপ করবে ট্র্যাফিক কন্ট্রোল এবং ওসি কন্ট্রোল। গত মাসের ২৪ তারিখ থানা এবং ট্র্যাফিক গার্ডের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে সমন্বয়ের অভাব নিয়ে সকলকেই সর্তক করেছিলেন তিনি। কিন্তু গত রাতের অভিজ্ঞতা বলল, ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের তৎপরতায় ঘাতক গাড়িটি সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়লেও, আহত ব্যক্তির কাছে পৌঁছতেই পুলিশের লেগে গিয়েছে পাক্কা দু’ঘণ্টা।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার ঘটনাটি শুনে বললেন, ‘‘১০০ নম্বরে ফোন এলে অত্যন্ত সতর্ক থাকি আমরা। গত রাতের রেকর্ডও বলছে, ওই সময়ে অন্য অনেক ফোন এসেছিল।’’ তবু কেন আমার ফোন কলটি বারবার বেজে গেল, তার কারণ নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলে জানালেন তিনি। ‘‘তবে প্রযুক্তিগত কোনও ত্রুটির কারণে এমনটা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছি।’’— বললেন যুগ্ম কমিশনার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy