কৌতূহলী: ঘটনার সময়ে নিমতলা শ্মশানের বাইরে ভিড়। সোমবার সকালে । ছবি:বিশ্বনাথ বণিক
শ্মশানে জিনিসপত্র বিক্রির বরাত পাওয়া নিয়ে গন্ডগোলের জেরে সোমবার সকালে প্রায় তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকল নিমতলা শ্মশানে শবদাহ করার কাজ। শবদাহের মতো জরুরি পরিষেবা এই ভাবে বন্ধ থাকায় চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হলেন সাধারণ মানুষ। এই ঘটনায় পুলিশ স্থানীয় একটি ঠিকাদারি সংস্থার মালিক কৃষ্ণেন্দু ভকত ওরফে আপ্পা ভকত ও আর এক যুবক কৃশানু ভকতকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ ও নিমতলা শ্মশান সূত্রে জানা গিয়েছে, শবদাহের জন্য প্রয়োজনীয় নানা উপকরণ-সহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কারা বিক্রি করবে, তা ঠিক করার জন্য সম্প্রতি দরপত্র ডেকেছিল কলকাতা পুরসভা। অনলাইনে সেই দরপত্র ভরার পরে একটি সংস্থা ওই কাজের বরাত পায়। ওই সংস্থা সোমবার সকাল থেকে কাজে নামলে স্থানীয় আর একটি ঠিকাদার সংস্থা তাদের কাজে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। যে গুদামে কাঠের খাটিয়া, ঘট ইত্যাদি রাখা থাকে সেই গুদামটিও ওই ঠিকাদার সংস্থা তালাবন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ। বন্ধ করে দেওয়া হয় শবদাহও।
শ্মশানের এক আধিকারিকের অভিযোগ, এ দিন রীতিমতো গুন্ডামি শুরু করেছিল ওই ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা। তিনি বলেন, ‘‘এক দল যুবক শ্মশানের কর্মীদের কাজ না করার জন্য শাসিয়ে যায়। তালা দিয়ে দেয় গুদামে। আমরা পুলিশ ডাকি। কিন্তু পরিস্থিতি শান্ত হয়নি।’’
এ দিন প্রথমে ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় কাউন্সিলর শিখা সাহা। তিনি বিক্ষোভকারীদের শ্মশানের পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার জন্য আবেদন জানান। কিন্তু শিখাদেবীর অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা তাঁর দিকে তেড়ে আসে। জায়গা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য হুমকিও দেয়। শিখাদেবী বলেন, ‘‘নিমতলা শ্মশানে শবদাহ বন্ধ আছে এমনটা আগে হয়নি। বিক্ষোভকারীরা আমাকেও মারতে এসেছিল।’’
ওই ঠিকাদার সংস্থার তরফে কৃষ্ণেন্দু ভকতের অভিযোগ, ‘‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে শবদাহের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করি। দরপত্রের মাধ্যমেই আমরা এত দিন বরাত পেয়েছি। এ বার দরপত্রে কারচুপি করে আমাদের বরাত দেওয়া হয়নি। এর ফলে বহু স্থানীয় যুবকের রোজগার বন্ধ হয়ে গেল।’’ কৃষ্ণেন্দু অবশ্য গুদামে তালা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ওই ঠিকাদারি সংস্থার অভিযোগ মানতে রাজি নয় পুরসভা। পুরসভা সূত্রের খবর, শবদাহের জন্য শ্মশানে কাঠ সরবরাহ করতে গেলে কাঠ রাখার জন্য নিয়ম অনুযায়ী ন্যূনতম ৪০০ বর্গফুট জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে। পাশাপাশি, সাত দিনের মতো কাঠ মজুত রাখতে হবে। নতুন দরপত্রে সেই নিয়মের উল্লেখ করা হয়েছিল। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষের অভিযোগ, ওই ঠিকাদারি সংস্থা মাত্র ১০০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছিল। ওই সংস্থা কখনও পুরসভার কোয়ার্টার্সে, কখনও মনীষীদের সমাধি দখল করে কাঠ রাখছিল। তারা ব্যবসা করার জন্য পুরসভার জায়গা অবধি দখল করে নিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ‘‘অনলাইনে এ বার টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। অনেক সংস্থাই আবেদন করেছিল। সবচেয়ে ভাল কোটেশন যারা দিয়েছে, তাকেই আমরা নির্বাচন করেছি। পুরোটাই স্বচ্ছ ভাবে হয়েছে। কোনও সংস্থা গত ৪০ বছর ধরে এখানে কাজ করেছে মানে এই নয় যে ভবিষ্যতেও তারাই কাজ পাবে।’’
এ দিন নিমতলায় গিয়ে দেখা যায়, উত্তর বন্দর থানার প্রচুর পুলিশকর্মী পরিস্থিতি সামাল দিতে এসেছেন। হাওড়ার বাসিন্দা পীযূষকুমার সারদা এক আত্মীয়ের দেহ নিয়ে এসেছিলেন সকাল আটটা নাগাদ। তিনি বলেন, ‘‘এসে দেখি চুল্লি বন্ধ। দাহ করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেওয়া হচ্ছিল না। অনেকেই অন্য শ্মশানে চলে যাচ্ছিলেন। প্রায় চার ঘণ্টা অপেক্ষা করি। বারোটা নাগাদ ফের কাজ শুরু হয়। টেন্ডারের গন্ডগোল জেরে কেন হয়রানির শিকার হতে হবে, এর উত্তর কেউ দিতে পারেননি।’’
এ দিনের ঘটনার পরে পুরমহলে প্রশ্ন ওঠে, প্রায় চার ঘণ্টা ধরে শ্মশানের কাজ বন্ধ থাকলেও পুলিশ দ্রুত সক্রিয় হয়নি কেন? অতীনবাবুও এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। তবে শ্মশানে হাজির থাকা একাধিক পুর অফিসারের মত, পুলিশ বুঝতে পারেনি ওই ঘটনার পেছনে কারা রয়েছে। শাসক দলের কেউ জড়িত কি না, তা বুঝতে না পারায় আগেভাগে পুলিশ নামেনি। পরে অতীনবাবু ঘটনাস্থলে আসতে পুলিশ সক্রিয় হয়। পুরসভা সূত্রের খবর, অতীনবাবু পুরো বিষয়টি মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে জানিয়েছেন। মেয়র অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy