Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Nagerbazar Explosion

‘কেন বাজারে গেলাম... না হলে ছেলেটা বেঁচে যেত’

ঘরে পা দিয়েই বোঝা গেল, কেন জুতো খুলতে বারণ করেছিলেন গৃহকর্ত্রী সঞ্চারি দত্ত।

বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে ছোট্ট বিভাসের।—নিজস্ব চিত্র।

বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে ছোট্ট বিভাসের।—নিজস্ব চিত্র।

সিজার মণ্ডল
শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৮ ২০:৪৪
Share: Save:

কলিংবেল বাজাতেই দরজা খুললেন বছর তিরিশের এক মহিলা। পরিচয় দিয়ে ঘরে ঢোকার জন্য জুতো খুলতে যেতেই বাধা দিলেন। বললেন,‘‘জুতো পরেই ভেতরে আসুন।’’

ঘরে পা দিয়েই বোঝা গেল, কেন জুতো খুলতে বারণ করেছিলেন গৃহকর্ত্রী সঞ্চারি দত্ত। ঘরের মেঝেভর্তি নানা মাপের কাচের টুকরো। লিভিং রুমটা পেরিয়ে গেলে রাস্তার দিকে ব্যালকনি। ওই ব্যালকনিতে যাওয়ার দরজায় লাগানো কাচটা যেন কেউ প্রবল আক্রোশে এলোপাথাড়ি ভাবে ভেঙেছে। সামনে রাখা ডাস্টবিন ভর্তি কাচের টুকরো। বোঝাই যাচ্ছে, এক দফা ঘর পরিষ্কার করা হয়েছে। তার পরেও মেঝেতে পড়ে থাকা কাচের টুকরো দেখলে মনে হবে ঘরের মধ্যে সদ্য যুদ্ধ শেষ হয়েছে!

তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার কর্মী সঞ্চারি ততক্ষণে পাশের ঘরে থাকা তাঁর স্বামী শৌভিক দত্তের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছেন।কথা বলতে গিয়েই জানা গেল, ওই দম্পতি বিষ্ফোরণের সময় বাজারে ছিলেন। তাঁরা বাড়ি থাকলে কাচ ভেঙে আঘাত পাওয়ার সম্ভবনা ছিল বলতেই ফুঁপিয়ে উঠলেন সঞ্চারি। কোনওমতে চোখ মুছতে মুছতে অস্ফুটে বলে উঠলেন,“আমরা বাড়ি থাকলে ছেলেটা বেঁচে যেত। অন্য সব দিন বাড়ি থাকি। আজ কেন যে দু’জন মিলেই বাজার গেলাম!”

দত্ত দম্পতির ঘরের ভিতর এভাবেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কাচের টুকরো

আরও পড়ুন: সাধারণ সকেটের থেকে কয়েক গুণ বেশি শক্তি ছিল এই বোমার, মত বিশেষজ্ঞদের​

আরও পড়ুন: পুলিশ বলল সকেট বোমা! আসলে কী? দানা বাঁধছে রহস্য​

কথাটা না বুঝতে পেরে তাকালাম শৌভিকের দিকে। তাঁর চোখেও জল। সামলে উঠে বললেন,“বিভাস মানে আমরা ওকে বিল্টু বলেই ডাকি, অন্যদিন এই সময় তো আমাদের ফ্ল্যাটেই থাকে।”

কেকে হিন্দু অ্যাকাডেমির দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র বিভাসকে ততক্ষণে মৃত বলে ঘোষণা করেছেন এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকরা। কোমরের নীচে অজস্র আঘাতের চিহ্ন।বিভাসের বাবা জয় ঘোষ বাসন্তী সুইটসের কর্মী। মা সীতা কয়েকটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। শৌভিকই বললেন, ‘‘ওঁদের আসল বাড়ি মগরাহাটে। কিন্তু এখানেই কোথাও কাছাকাছি বাড়ি ভাড়া করে থাকত।’’তাঁর কথায়, “সীতাদি আমাদের বাড়ি কাজ করেন। বিল্টুর মর্নিং স্কুল থাকে। স্কুল থেকে ফেরার সময় সীতাদি ওকে সঙ্গে করে আমাদের বাড়ি চলে আসতেন।”

সঞ্চারি বলেন,“আমি সাড়ে ন’টার মধ্যে বেরিয়ে যাই।শৌভিক দেরিতে অফিস যায়। বিল্টু এখানে টিভি দেখে। খেলে। তারপর সীতাদির কাজ শেষ হলে একসঙ্গে বাড়ি যায় দু’জনে।”

ছুটির দিন। স্কুল ছিল না। তাই অন্যদিনের থেকে একটু তাড়াতাড়িই ‘সঞ্চারিদি’র বাড়িতে টিভি দেখতে আসছিল ছোট্ট বিল্টু। কিন্তু জানত না, দাদা-দিদি বাজারে গিয়েছে। ফ্ল্যাট তালা বন্ধ দেখে নীচে দোকানের সামনে অপেক্ষা করছিল মা-ছেলে। আর তার মধ্যেই এই বিস্ফোরণ। এসএসকেএমে এখনও মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন সীতা। কিন্তু সে সবের মধ্যেই নিজেদের ক্ষমা করতে পারছেন না দত্ত দম্পতি। সঞ্চারি বলেন,“২০১২ সালে এখানে ফ্ল্যাট কিনে এসেছি। তখন থেকেই সীতাদি এখানে কাজ করেন।” দম্পত্তির আক্ষেপ একটাই— যদি তাঁরা বাজারে না যেতেন, যদি ওরা দরজা বন্ধ না পেত, তবে বেঘোরে প্রাণ দিতে হত না সঞ্চারির আদরের বিল্টুকে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE