Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

সেফ ড্রাইভের ব্যানার ভেঙে আহত চালক

পথেঘাটে নিরাপদে গাড়ি চালাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চালু করেছেন ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচি। কলকাতা-সহ সারা রাজ্যে ব্যানার, হোর্ডিংয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেই স্লোগান। কাকতালীয় ভাবে মঙ্গলবার, কলকাতার রাজপথে ওই কর্মসূচিরই এক ব্যানার ভেঙে পড়ল সরকারি বাসের উইন্ডস্ক্রিনের উপরে।

অঘটন: যন্ত্রণায় ছটফট করছেন আহত চালক। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

অঘটন: যন্ত্রণায় ছটফট করছেন আহত চালক। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৭
Share: Save:

পথেঘাটে নিরাপদে গাড়ি চালাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চালু করেছেন ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচি। কলকাতা-সহ সারা রাজ্যে ব্যানার, হোর্ডিংয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেই স্লোগান। কাকতালীয় ভাবে মঙ্গলবার, কলকাতার রাজপথে ওই কর্মসূচিরই এক ব্যানার ভেঙে পড়ল সরকারি বাসের উইন্ডস্ক্রিনের উপরে। তার ধাক্কায় উইন্ডস্ক্রিনের কাচ ভেঙে চালকের শরীরে ঢুকে যাওয়ায় গুরুতর জখম হলেন তিনি। আপাতত ওই ব্যক্তিকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চালকের উপস্থিত বুদ্ধি এবং তৎপরতায় এ দিন বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু এই সব ব্যানার-হোর্ডিং কতটা নিয়ম মেনে লাগানো হয়, ঘটনার পরে উঠে গিয়েছে সেই গুরুতর প্রশ্ন।

পুলিশ সূত্রের খবর, বালিগঞ্জ-ডানলপ রুটের এস ৯এ বাসটি এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ পার্ক স্ট্রিট থেকে ধর্মতলার দিকে আসছিল। গতিও তেমন বেশি ছিল না। ভারতীয় জাদুঘরের কাছাকাছি আসতে হঠাৎই যাত্রীরা বুঝতে পারেন, বাসটি বেপরোয়া ভাবে চলছে। সঙ্গে প্রবল ঝাঁকুনি। ‘কী হল, কী হল’ বলে চিৎকার শুরু করেন তাঁরা। হতবাক কন্ডাক্টরও। সকলের নজর তখন চালকের দিকে। কিছু পরেই সকলের চোখে পড়ে, বাসের সামনে কাচের উপরে কী একটা পড়েছে। তার চাপে ভেঙে গিয়েছে কাচ। সেই ভাঙা কাচের টুকরো ঢুকে গিয়েছে চালকের পেটে, গায়ে। সেই অবস্থাতেই গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন তিনি। কিন্তু উইন্ডস্ক্রিনের উপরে ভাঙা হোর্ডিং এসে পড়ায় কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। ফলে এ দিক-ও দিক ছুটতে থাকে বাস। তাতে আতঙ্ক আরও বাড়ে। ‘বাস থামান, বাস থামান’ বলে শুরু হয়ে যায় হইচই। শেষমেশ কোনও ভাবে বাস থামাতে সমর্থ হন চালক। তার পরেই নিজের আসন থেকে পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন।

খবর পেয়ে ছুটে আসে পুলিশ। তখনও ভয়ে, আতঙ্কে কাঁপছেন বহু যাত্রী। এ যাত্রা যে বেঁচে গিয়েছেন, তা-ও কারও কারও প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না। পরে অনেকে বাস থেকে নেমে দেখতে পান, যার জন্য এত বিপত্তি, সেটা আসলে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফের’ সতর্কীকরণ বার্তা। যা লোহার কাঠামো দিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে টাঙানো রয়েছে ওই এলাকা জুড়ে।

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, শুধু এই কর্মসূচির ব্যানারই নয়, শহর জুড়ে ব্য়ানার-হোর্ডিং লাগানোর কাজে আরও সতর্ক থাকা কি জরুরি নয়? যে কাঠামোয় সেগুলি লাগানো হচ্ছে, তা ভেঙে পড়লে বড় বিপদ হতে পারে। যেমনটা ঘটেছে এ দিন। এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, চলন্ত বাসের সামনে এ ভাবে ব্য়ানার-হোর্ডিং ভেঙে পড়া নতুন করে চিন্তা বাড়াল। প্রশাসন ও পুলিশের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, এমন অনেক বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং-ব্যানার শহর জুড়ে রয়েছে, যা পুরনো। কোনও কোনও অনুষ্ঠান অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। তার পরেও ঝুলছে সেই সব হোর্ডিং। সব দেখেও প্রশাসন কী ভাবে চুপ করে থাকে?

এ ব্যাপারে শহরের এক নামী বিজ্ঞাপনী সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘যে কোনও বেসরকারি সংস্থার ব্যানার কাঠের কাঠামোয় দেওয়ার নিয়ম। এবং সেগুলি তিন ফুট বাই ছ’ফুটের মধ্যে থাকতে হবে। তবে সরকার নিজে যে বিজ্ঞাপন দেয়, সেই ব্যানার অনেক সময়ে লোহার কাঠামোয় লাগানো হতে পারে।’’ এ দিনের ঘটনায় ঠিক কী হয়েছিল, তা বলতে পারবেন না বলে জানান দিলীপবাবু। তবে তাঁর কথায়, ‘‘আমরা নিয়ম মেনেই ব্যানার লাগাই।’’ কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, এ ধরনের ব্যানার দিয়ে থাকে কলকাতা পুলিশ। সরকারি হওয়ার কারণে পুরসভার অনুমতির দরকার হয় না। পুরসভার বিজ্ঞাপন দফতরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘ঘটনাটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগ এমন ক্ষেত্রে কোনও পরামর্শ দিলে আমরা অবশ্যই তা গ্রহণ করব।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE