বিরোধীরা নারদ কাণ্ডে মেয়র আর ডেপুটি মেয়রের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলতেই তুমুল হট্টগোল শুরু করে দিল তৃণমূল। —ফাইল চিত্র।
নারদ কাণ্ডের উল্লেখ এবং ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগকে ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠল কলকাতা পুরসভার অধিবেশন। শাসক এবং বিরোধীদের মধ্যে দফায় দফায় বচসা এবং তুমুল হইচইয়ে বার বার থমকে গেল অধিবেশন। নারদ প্রসঙ্গে আলোচনা থামাতে মাইক্রোফোন বন্ধ করে দিলেন চেয়ারপার্সন মালা রায়। বাম-কংগ্রেস-বিজেপি সম্মিলিত ভাবে এ দিন তীব্র নিন্দা করেছে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ও চেয়ারপার্সন মালা রায়ের।
পুরসভার অধিবেশনে এ দিন সংবাদমাধ্যমকে ক্যামেরা নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কলকাতা পুরসভার ইতিহাসে এই ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি বলে বিরোধী দলগুলির দাবি। বিষয়টি নিয়ে সোমবার পুর অধিবেশন শুরু থেকেই উত্তপ্ত ছিল। কেন সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা অধিবেশন কক্ষে ঢুকতে দেওয়া হল না, বিরোধীরা সেই প্রশ্ন তুলে হইচই শুরু করেন। ফলে শাসকের সঙ্গে বিরোধীদের তুমুল বচসা শুরু হয়ে যায়।
গোলমাল থামিয়ে চেয়ারপার্সন মালা রায় ফের অধিবেশনের কাজ শুরু করান। কিন্তু বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সুবাদে মিউনিসিপ্যাল অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদ পেয়েছেন যে কাউন্সিলর, সেই বাপি ঘোষকে এ দিন মালা রায় বিজেপি কাউন্সিলর হিসেবে উল্লেখ করতেই গোলমাল শুরু হয়ে যায়। প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তথা বিজেপি কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিত-সহ বিজেপি কাউন্সিলররা এর তীব্র বিরোধিতা শুরু করেন। বিজেপি ছেড়ে বাপি ঘোষ তৃণমূলে গিয়েছেন বলেই তাঁকে মিউনিসিপ্যাল অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে, অভিযোগ বিজেপির। ওই পদের জন্য বিজেপি এক বারও বাপি ঘোষের নাম পাঠায়নি। বাপি ঘোষকে বিজেপি আর নিজেদের দলের কাউন্সিলর হিসেবে মান্যতাও দেয় না। তা সত্ত্বেও চেয়ারপার্সন কেন তাঁকে বিজেপি কাউন্সিলর হিসেবে উল্লেখ করলেন, বিজেপি সেই প্রশ্ন তুলে হইচই শুরু করে। যোগ দেয় অন্য বিরোধী দলগুলিও।
নারদ অস্বস্তি ঢাকতে বিরোধী কাউন্সিলরের মাইক্রোফোন বন্ধ করে দিয়ে তীব্র বিতর্কে কলকাতা পুরসভার চেয়ারপার্সন মালা রায়। —ফাইল চিত্র।
গোলমাল চরমে পৌঁছয় অবশ্য নারদ প্রসঙ্গ আসতেই। ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের আরএসপি কাউন্সিলর দেবাশিস মুখোপাধ্যায় বলছিলেন তখন। পুরসভার ভিতরে ক্যামেরা ঢুকতে না দেওয়ার নিন্দা করেন তিনি। যে মামলায় খোদ কলকাতার মেয়র এবং ডেপুটি মেয়র অভিযুক্ত, কলকাতা হাইকোর্ট সম্প্রতি সেই নারদ মামলার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় তৃণমূল খুব অস্বস্তিতে রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। পুর অধিবেশনে সেই প্রসঙ্গ উঠে আসতে পারে, এই আশঙ্কায় অধিবেশন কক্ষে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা ঢুকতে দেননি চেয়ারপার্সন, অভিযোগ করেন দেবাশিস মুখোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: তৃণমূল সাংসদ কে ডি সিংহের নির্দেশেই স্টিং অপারেশন, বিস্ফোরক ম্যাথু
আরএসপি কাউন্সিলর এই প্রসঙ্গ তুলতেই বাধা দেন তৃণমূল কাউন্সিলররা। তাঁরা তুমুল হইচই শুরু করে দেন। ওই কাউন্সিলরের আসনের সামনে ছুটে এসে কয়েক জন তাঁর বক্তব্য থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাতেও কাজ না হওয়ায় চেয়ারপার্সন মালা রায় ওই কাউন্সিলরের মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেন, যাতে তাঁর বক্তব্য আর শোনা না যায়। চেয়ারপার্সন মাইক্রোফান বন্ধ করতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে গোটা বিরোধী পক্ষ। বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপি কাউন্সিলররা তুমুল হট্টগোল শুরু করে দেন। কিন্তু দেবাশিস মুখোপাধ্যায়কে নারদ প্রসঙ্গে আর কিছুতেই বলতে দেননি চেয়ারপার্সন।
পরে মালা রায় জানিয়েছেন, যে বিষয় নিয়ে ওই কাউন্সিলর কথা বলছিলেন, পুরসভার বাজেট অধিবেশনের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। তাই মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। দেবাশিসবাবুর বক্তব্যের ওই অংশ অধিবেশনের কার্যবিবরণী থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। অধিবেশনে ক্যামেরা ঢুকতে না দেওয়ার প্রসঙ্গে মালা রায়ের মন্তব্য, ক্যামেরা থাকলে বিরোধী কাউন্সিলররা অতিরিক্ত উৎসাহী হয়ে পড়েন এবং বেশি করে হট্টগোল করতে থাকেন। সেই গোলমাল রুখতেই ক্যামেরা ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy