প্রতীকী ছবি।
ভোরের বিধ্বংসী আগুনে শতাব্দীপ্রাচীন উয়াড়ি ক্লাব পুড়ে যাওয়ায় নতুন আশঙ্কা গ্রাস করেছে ময়দানেরই অন্য ক্লাবগুলিকে।
বেশির ভাগ ক্লাবেরই চিন্তা, উয়াড়ি ক্লাবের মতো পরিস্থিতি হলে তাদের কী হবে? কারণ, চার-পাঁচটি প্রতিষ্ঠিত বড় ক্লাব ছাড়া বেশির ভাগ ক্লাবের তাঁবুতেই ঘর তৈরি হয়েছে প্লাইউড দিয়ে। কোনও কোনও ক্লাবে মিটারবক্সও তাঁবুর ভিতরে। কোথাও আবার ত্রিপল ঝুলছে। তাঁবুর ভিতরেই রয়েছে ফ্রিজ ও বাতানুকূল যন্ত্র। সঙ্গে খেলার সরঞ্জাম। নেই কোনও ফায়ার লাইসেন্স। প্রায় দাহ্য বস্তুর উপরেই বসে রয়েছে ময়দানের ক্লাবগুলি।
প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে ময়দানের এই বিভিন্ন ক্লাবের দিনরাতের সঙ্গী মালিরা। উয়াড়ি ক্লাবের ঘটনার পরে তাঁরা প্রত্যেকেই বলছেন, ‘‘ময়দানের কোনও ক্লাবেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। ফের এমন পরিস্থিতি হলে ভরসা একমাত্র উপরওয়ালা।’’
ময়দানের বর্ষীয়ান ফুটবল কোচ ও টাউন ক্লাবের ফুটবল সচিব তপনজ্যোতি মিত্র বলছেন, ‘‘আমাদের তাঁবুতে সব রয়েছে। কাঠ, ফল্স সিলিং, ত্রিপল। কিন্তু আগুনের সঙ্গে লড়াই করার কোনও ব্যবস্থা নেই।’’ রেড রোডের ধারে বিশ্ববিদ্যালয় তাঁবুর অবস্থা শোচনীয়। সেখানে রয়েছে কাঠের ভাঙা আসবাবপত্র। কোনও কারণে এক বার আগুন লেগে গেলে তা বড় আকার ধারণ করবে।
মেয়ো রোড দিয়ে ঢুকতে গেলেই চোখে পড়বে কলকাতা কেনেল ক্লাব। রাস্তা থেকেই দেখা যায় ক্লাবের বাতানুকূল যন্ত্র। সেখানকার অস্থায়ী মালি পঙ্কজ কুমারের চোখেমুখে আতঙ্ক। বলছেন, ‘‘চোখের সামনে উয়াড়ি ক্লাবের তাঁবু দাউদাউ করে পুড়ে গেল। আমাদের ক্লাবে এ রকম হলে রক্ষা করার কেউ নেই। আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থাও নেই।’’ একই বক্তব্য অফিস স্পোর্টস ফেডারেশন তাঁবুর মালি সুধীরকুমার বেহেরার। বললেন, ‘‘আমাদের হাতে আগুনের সঙ্গে লড়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। বড়জোর কল খুলে পাইপ দিয়ে জল দিতে পারি।’’ কিন্তু তাতে যে কিছু হবে না, তা বিলক্ষণ জানেন সুধীরকুমার। উয়াড়ি ক্লাবের মালি রবীন্দ্র বল বলছেন, ‘‘যা জল ছিল, তা দিয়ে বড় আগুন নেভানো যেত না।’’
রাজ্য বাস্কেটবল সংস্থার তাঁবুতেও একই ছবি। সচিব গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কয়েক লিটার জল ছাড়া আর কিছু নেই।’’ একই অবস্থা সিটি ক্লাব, ডালহৌসি ক্লাব ও পার্সি ক্লাবেরও। পার্সি ক্লাবের সভাপতি প্রাচী মেহতা যোগ করেন, ‘‘জল ছাড়াও অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র রয়েছে পাঁচটি।’’ তবে বড়সড় আগুন লাগলে তা দিয়ে পরিস্থিতি কতটা সামাল দেওয়া যাবে বা সেই যন্ত্র চালাতে ক’জন জানেন, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।
আর্মেনিয়ান ক্লাব তাঁবুর ভিতরেই আবার মিটারঘর। এই ক্লাবে গত ৩৩ বছর ধরে মালির কাজ করছেন রামখিলাবর মণ্ডল। তাঁবুর ভিতরেই রয়েছে ফ্রিজ ও ত্রিপলের পর্দা। বর্ষীয়ান এই মালির আশঙ্কা, ‘‘রাতবিরেতে আগুন লাগলে পুড়ে মরতে হবে।’’ একই বক্তব্য উয়াড়ি ক্লাব লাগোয়া মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ক্লাবের মালি সুশান্ত দাশেরও। পাঁচ বছর আগে সেখানে আগুন লেগেছিল। সুশান্ত বলছেন, ‘‘পাঁচ বছরে আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থা হয়নি ক্লাবে।’’
তবে অবস্থা কিছুটা ভাল কলকাতা জুডো ক্লাবের। যুগ্ম সচিব অখিলেশ রায় বলছেন, ‘‘আমাদের এক হাজার লিটারের দু’টি জলের ট্যাঙ্ক রয়েছে। রয়েছে পাম্প ও গভীর নলকূপ।
আগুন লাগলে প্রয়োজনে সেখান থেকে জল তুলে আগুন নেভাতে পারব। এ ছাড়া, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রও রয়েছে গোটা পাঁচেক।’’
ময়দানের দুই বড় ক্লাব মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের বড় জলাধার ও শক্তিশালী পাম্প রয়েছে। তা ছাড়া, দুই ক্লাবের পাশেই নালা থাকায় জল নিয়ে সমস্যা নেই। দুই ক্লাবেই রয়েছে গোটা পনেরো অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র। কিন্তু মহমেডান ক্লাবে ছবিটা অন্য রকম। সেখানে নেই কোনও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র। সচিব কামারুদ্দিন বললেন, ‘‘এ বার দুটো অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র কিনতে হবে। তাঁবু সংস্কারের কিছু কাজও হবে। তখন আগুন প্রতিরোধী ব্যবস্থা করব।’’
দমকলের ডিজি জগমোহন বলছেন, ‘‘ক্লাবগুলির যা কার্যকলাপ, তাতে ফায়ার লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক নয়। তবে তারা নিজেদের উদ্যোগে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতেই পারে। এ নিয়ে ক্লাবগুলির সচেতন হওয়া জরুরি।’’
এ দিন বিকেলে উয়াড়ি ক্লাবে গিয়েছিলেন বেঙ্গল অলিম্পিক্স সংস্থা এবং আইএফএ-র প্রেসিডেন্ট অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ক্লাবগুলির সচেতনতা বাড়াতে দ্রুত তাদের নিয়ে বৈঠকে বসব আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy