Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪

বিয়েতে রাজি স্কুলছাত্রী, মা ঠেকাতে মরিয়া

দু’মাস আগে দমদমেরই বাসিন্দা পাত্রের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর। এ দিন ওই ছাত্রীর মা বলেন, ‘‘আমার মেয়ের মাত্র ১৩ বছর বয়স। এখন তো ওর পড়াশোনার সময়। তাই বিয়েতে আমার মত নেই।

দু’মাস আগে দমদমেরই বাসিন্দা পাত্রের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর। প্রতীকী ছবি।

দু’মাস আগে দমদমেরই বাসিন্দা পাত্রের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর। প্রতীকী ছবি।

সৌরভ দত্ত
শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৮ ১৮:০৭
Share: Save:

মায়ের দাবি, মেয়ে নাবালিকা। তাই স্বামী এবং শাশুড়ির বিরুদ্ধে গিয়ে মেয়ের বিয়ে আটকাতে তৎপর হয়েছিলেন দমদমের বাসিন্দা ওই মহিলা। কিন্তু শনিবার দুপুর থেকে লড়াই চালিয়েও তাঁর দাবির সপক্ষে উপযুক্ত প্রমাণ না থাকায় সন্ধ্যায় হার মানলেন মা।

দু’মাস আগে দমদমেরই বাসিন্দা পাত্রের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর। এ দিন ওই ছাত্রীর মা বলেন, ‘‘আমার মেয়ের মাত্র ১৩ বছর বয়স। এখন তো ওর পড়াশোনার সময়। তাই বিয়েতে আমার মত নেই। কিন্তু স্বামী এবং শাশুড়ি কোনও কথাই শুনছেন না।’’ আজ, রবিবার মেয়ের বিয়ে। বাড়িতে সহযোগিতা না পেয়ে একমাত্র মেয়ের বিয়ে রুখতে মরিয়া হয়ে যান মা। অভিজিৎ সাহা নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে তিনি পরিচারিকার কাজ করেন। কিছুতেই মেয়ের বিয়ে আটকানো যাচ্ছে না দেখে দুপুরে অভিজিৎবাবুর বাড়িতে সাহায্যের জন্য ছুটে যান মা। ওই মহিলার অভিযোগ, তিনি মেয়ের বিয়ে আটকাতে পুলিশের সাহায্য নেওয়ার কথা বললে তাঁর স্বামী আত্মহত্যার হুমকি দেন। এ দিন অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘অন্যের পারিবারিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে কি না, এই ভেবে প্রথমে ইতস্তত বোধ করছিলাম। কিন্তু ওর মায়ের মরিয়া ভাব দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি।’’ দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) গোপা পাণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল অভিজিৎবাবুর। তাঁর সাহায্যে চাইল্ডলাইনে গোটা ঘটনার কথা জানানো হয়।

দমদমের মতো শহরাঞ্চল থেকে নাবালিকার বিয়ের অভিযোগ শুনে সক্রিয় হন চাইল্ডলাইনের সদস্যেরা। ব্যারাকপুর কমিশনারেট সূত্রের খবর, সন্ধ্যা নাগাদ দমদম থানায় হাজির হন চাইল্ডলাইনের সদস্য দীপালি মিত্র এবং তুহিনশুভ্র মিস্ত্রি। সংশ্লিষ্ট এলাকা যেহেতু ঘুঘুডাঙা ফাঁড়ির অন্তর্গত, তাই তাঁদের সেখানে যেতে বলা হয়। এর পরে ঘুঘুডাঙা ফাঁড়ির পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন চাইল্ডলাইনের প্রতিনিধিরা। তাঁদের দেখে আশ্বস্ত হন পাত্রীর মা এবং দিদিমা। উল্টো দিকে শাশুড়ি, স্বামী এবং তাঁদের পরিজনেরা। বিয়ের আগের দিনের সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি এবং পুলিশকে দেখে কিছুটা হকচকিয়ে যান পাত্রীর ঠাকুরমা। পাড়ার প্রতিবেশীরাও ততক্ষণে জড়ো হয়ে গিয়েছেন। এরই মধ্যে নাবালিকার বিয়ে কেন দেওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্ন করেন চাইল্ডলাইনের প্রতিনিধিরা। তাঁদের জানানো হয়, মেয়ে সাবালিকা। দাবি, সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রীর জন্ম হয়েছে ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে! এর পরে প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ডের প্রতিলিপি প্রশাসনের প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেখানে জন্মের তারিখ হিসেবে ২০০০ সালের ২ ফেব্রুয়ারির উল্লেখ রয়েছে।

এ সবের পরেও মা অবশ্য বলে চলেন, ‘‘বিশ্বাস করুন, আমার মেয়ে নাবালিকা। ওর বিয়ে আটকানো যাবে না?’’ প্রমাণপত্রে জটিলতার মধ্যেই পাত্রী জানিয়ে দেয়, বিয়েতে তার সম্মতি রয়েছে। পারিবারিক সমস্যার কারণে সে বিয়ে করতে চায় বলে দাবি ওই ছাত্রীর। পাত্রীর বক্তব্য, মা স্নেহ করেন না। বাবার আচরণও পছন্দ নয় তার। এই পরিস্থিতিতে বিয়ে করে সুখী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে সে। মা বলেন, ‘‘সব শেখানো কথা বলছে।’’ যা শুনে ঝাঁঝিয়ে ওঠে ওই স্কুলছাত্রী।

আধ ঘণ্টা ঘটনাস্থলে থাকার পরে ফিরে যাওয়াই শ্রেয় মনে করেন জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিরা। চাইল্ডলাইনের সদস্যা দীপালি মিত্র বলেন, ‘‘বিয়েটা আটকাতে পারলাম না। মা বলছেন, মেয়ের বয়স ১৩ বছর। কিন্তু বার্থ সার্টিফিকেট তিনি দেখাতে পারেননি। আধার কার্ড অনুযায়ী মেয়েটির ১৮ বছর হয়ে গিয়েছে। মনে যা-ই থাকুক, আইনের কাছে তো হাত-পা বাঁধা।’’ একই বক্তব্য পুলিশেরও। চেয়ারম্যান পারিষদ গোপাদেবী বলেন, ‘‘এক জন মা অল্পবয়সী মেয়ের বিয়ে আটকানোর জন্য আবেদন করেছিলেন। সেই লড়াইয়ে পাশে থাকতে চেয়েছিলাম।’’ অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘শেষরক্ষা হল না। তবে চেষ্টা ছাড়ব না।’’

সব শেষে জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিরা যখন ফিরে যাচ্ছেন, তখনও হার মেনে নিতে পারছিলেন না মা। বিস্মিত ওই মহিলা বলেন, ‘‘বিয়েটা তা হলে হবে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Marriage Minor Marriage Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE