Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

গঙ্গায় ‘ঝাঁপ’, মা বাঁচলেও মৃত্যু চার মাসের শিশুপুত্রর

আদতে বিহারের গয়ার বাসিন্দা, পেশায় গাড়িচালক স্বামীর সঙ্গে ই এম বাইপাসের আনন্দপুর থানা এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে সংসার ওই মহিলার।

সন্তান হারিয়ে কান্না মায়ের।

সন্তান হারিয়ে কান্না মায়ের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৮ ০২:৪২
Share: Save:

গঙ্গার জলে চার মাসের শিশুপুত্রকে নিয়ে তলিয়ে যাচ্ছেন এক মহিলা। এক হাতে গাছের ডাল ধরে কোনওমতে ঝুলে থেকে বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। সঙ্গে প্রবল আর্তনাদ।

সেই আর্তনাদ কানে যেতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় গঙ্গায় টহলরত নৌবাহিনীর স্পিডবোট। ওই মা ও শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবু শেষরক্ষা হয়নি। মা বেঁচে গেলেও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। রবিবার ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়া স্টেশনের কাছে লক্ষ্মীঘাটে।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলা এ দিন বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ হাওড়া স্টেশনের কাছাকাছি হাওড়া ব্রিজ লাগোয়া লক্ষ্ণীঘাটে নামেন। পুলিশের দাবি, পারিবারিক অশান্তির জেরে নিজের সন্তানকে নিয়েই গঙ্গায় ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে জানিয়েছেন ওই মহিলা। কিন্তু গঙ্গায় পুরোপুরি তলিয়ে যাওয়ার আগে সম্বিৎ ফিরতেই বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন তিনি। পাড় থেকে ঝুলে থাকা গাছের ডাল এক হাতে ধরে অন্য হাতে নিজের সন্তানকে আগলে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু শিশুর দেহের বেশির ভাগ অংশই তখন জলে ডুবে ছিল। টহলরত নৌবাহিনীর স্পিড বোটের নাবিকেরাআর্তনাদ শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে মা ও শিশুকে নিয়ে প্রথমে বাবুঘাটের রিভার ট্র্যাফিক থানায় যান। রিভার ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে মা ও শিশুপুত্রকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা ওই শিশুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এখানেই ঝাঁপ দেন ওই তরুণী। রবিবার, লক্ষ্মীঘাটে। নিজস্ব চিত্র

আদতে বিহারের গয়ার বাসিন্দা, পেশায় গাড়িচালক স্বামীর সঙ্গে ই এম বাইপাসের আনন্দপুর থানা এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে সংসার ওই মহিলার। মাস তিনেক হল এ শহরে এসেছেন তিনি। এ দিন ওই মহিলার স্বামী বলেন, ‘‘সকাল সাতটা নাগাদ বাড়ি থেকে ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়েছিলাম। এগারোটা নাগাদ পুলিশ ফোন করে বাবুঘাটে আসতে বলল। আমার সংসারে কোনও অশান্তি ছিল না।’’ এ দিন এসএসকেএম হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা গেল, ছেলের শোকে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন ওই মা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘স্বামীর অত্যাচারের জন্যই চার মাসের ছেলেকে নিয়ে সকাল ন’টা নাগাদ বা়ড়ি থেকে বেরিয়ে বাসে করে হাওড়া স্টেশনে আসি।’’ এর পরে আর কথা বলতে পারছিলেন না পুত্রহারা ওই মা। কথা বলতে গেলেই জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। এসএসকেএম আউটপোস্টের মহিলা পুলিশকর্মীরা তাঁর চোখমুখে জল ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেন। ডিসি (বন্দর) ওয়াকার রেজা বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, পারিবারিক বিবাদের জেরেই ওই মহিলা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তবে এটি আত্মহত্যার চেষ্টা নাকি অন্য কোনও কারণ আছে, তা জানতে ওই মহিলা ও তাঁর স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’ এই ঘটনায় রাত পর্যন্ত ওই মহিলার তরফে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। ডিসি (বন্দর) বলেন, ‘‘ওই মহিলা অভিযোগ দায়ের করলে আমরা নিশ্চয়ই তদন্ত শুরু করব।’’

ওই মহিলার আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় তাঁর স্বামীর আচরণকেই দায়ী করছেন মনোবিদরা। মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের কথায়, ‘‘যে স্বামীর কাছে আশ্রয় পাওয়ার কথা, তাঁরই অত্যাচারে ওই মহিলা নিজেকে আশ্রয়হীন ভাবতে শুরু করেছিলেন। তাঁর কাছে জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল।’’ নীলাঞ্জনাদেবীর আশঙ্কা, নিজে বেঁচে গেলেও একমাত্র ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় ওই মহিলা অপরাধবোধে ভুগবেন। তিনি আরও আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠতেই পারেন। পারিবারিক যত্ন এ ক্ষেত্রে জরুরি। আর এক মনোবিদ মোহিত রণদীপের ব্যাখ্যা, ‘‘ওই মহিলা বিহার থেকে নতুন পরিবেশে এসেছেন। যে স্বামীর ভরসায় আসা, তিনিই বিমুখ হওয়ায় চূড়ান্ত বিষণ্ণতায় ভুগেছেন। তবে এই বিষণ্ণতাজনিত অসুখের চিকিৎসা আছে। সব সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে সেই চিকিৎসা মেলে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Mother Jump River Ganga Baby Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE