Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

বিপর্যয় মোকাবিলার মহড়া গঙ্গাবক্ষে

সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ পীযূষবাবুই ঘোষণা করেন, ঝড় আছড়ে পড়েছে গঙ্গা উপকূলে। তার দাপটে গঙ্গা তীরবর্তী উত্তর ২৪ পরগনা এবং হুগলির বেশ কিছু এলাকা তছনছ হয়ে গিয়েছে।

ঝাঁপ: চলছে বিপর্যয় মোকাবিলার মহড়া। রবিবার, ব্যারাকপুরে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

ঝাঁপ: চলছে বিপর্যয় মোকাবিলার মহড়া। রবিবার, ব্যারাকপুরে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৫১
Share: Save:

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের সতর্কবার্তা ছিল, রবিবার সকালে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়। সেই মতো তৈরি রাখা হয়েছিল হ্যাম রেডিয়োর ছ’টি দলকে। ব্যারাকপুর গাঁধী মিউজিয়ামে তৈরি হয়েছিল কন্ট্রোল রুম। দায়িত্বে ছিলেন ব্যারাকপুরের মহকুমা শাসক পীযূষ গোস্বামী।

সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ পীযূষবাবুই ঘোষণা করেন, ঝড় আছড়ে পড়েছে গঙ্গা উপকূলে। তার দাপটে গঙ্গা তীরবর্তী উত্তর ২৪ পরগনা এবং হুগলির বেশ কিছু এলাকা তছনছ হয়ে গিয়েছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মোবাইল ব্যবস্থা। কোনও ভাবেই ওই সব এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। মহকুমা শাসকের ওই ঘোষণার পরেই হ্যাম রেডিয়োর ছ’টি দল ছ’জায়গায় রওনা হয়ে যায়। লক্ষ্য ছিল, ঝড়ে বিধ্বস্ত এলাকায় যথাসম্ভব দ্রুত পৌঁছনো।

না, রবিবার সকালে গঙ্গার উপকূলে আসলে কোনও ঝড় আছড়ে পড়েনি। এ দিন ব্যারাকপুরে যেটা হল, তা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর মহড়া। যদি তেমন ঝড় হয়, তার পরের পরিস্থিতি কী ভাবে সামলানো যাবে, হাতেকলমে তা দেখাতেই ছিল এমন ব্যবস্থা। এ দিন মহকুমা শাসক ঘোষণা করার পরেই হ্যাম রেডিয়োর সদস্যেরা রওনা হয়ে যান ব্যারাকপুর মহকুমার পানিহাটি, দু’পয়সার ঘাট, বাবুর ঘাট, হুগলির শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলি এবং কোন্নগরে।

পাশাপাশি নৌকাডুবি হলে বা কেউ নদীতে ডুবে গেলে কী ভাবে উদ্ধারকাজ শুরু করা যেতে পারে, তা-ও এ দিন দেখান বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরা। ঘাট থেকে ভুটভুটিতে ওঠা যাত্রীদের সকলকে লাইফ জ্যাকেট পরানো হয়। বাহিনীর কিছু সদস্য ছিলেন লাইফ জ্যাকেট ছাড়া। মাঝগঙ্গায় তাঁদের কয়েক জন ঝাঁপ মারেন। এই অবস্থায় কী ভাবে তাঁদের উদ্ধার করা যেতে পারে, হাতেকলমে সেটা দেখানো হয় যাত্রীদের।

পীযূষবাবু বলছেন, ‘‘হ্যাম রেডিয়োর সদস্যেরা কত তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেন, সেটাই ছিল পরীক্ষা।’’ পশ্চিমবঙ্গ রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগবিশ্বাস বলেন, ‘‘কাজটা সহজ নয়। এলাকায় পৌঁছে বাঁশ বা লম্বা কিছু জোগাড় করে অ্যান্টেনা লাগিয়ে কন্ট্রোল রুম এবং দলের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করা যথেষ্ট ঝুঁকির। এ দিন রেডিয়ো দলের সদস্যেরা সেটাই করেছেন নিপুণ ভাবে।’’ তিনি আরও জানান, এমন ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে হ্যাম রেডিয়ো যে অত্যন্ত কার্যকর, তা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সময়ে প্রমাণিত হয়েছে। অম্বরীশবাবুর দাবি, নদী এলাকায় এমন কাজ আগে হয়নি। এ দিনের মহড়ায় শ্রীরামপুরের ‘টাইগার’ গ্রুপ প্রথম হয়েছে, দ্বিতীয় পানিহাটির ‘অগ্নি’।

ভুটভুটির এক যাত্রী, শেওড়াফুলির বাসিন্দা অমিতাভ সরকার বলেন, ‘‘অনেক কিছুই জানলাম। বিপদের সময়ে অন্তত কিছুটা কাজ যে আমরা যাত্রীরাই করতে পারি, তা বুঝলাম। ভবিষ্যতে মনে রাখব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Disaster Management
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE