কথায় ও কাজে ফারাক যে কতটা, তা হা়ড়ে হা়ড়ে টের পাচ্ছেন লালবাজারের কর্তারা!
পুলিশ সূত্রের খবর, গত মাসখানেক ধরে উত্তর বন্দর থানার ওসি পার্থ মুখোপাধ্যায় ঊর্ধ্বতন কর্তাদের কাছে বারবার দাবি করেছেন যে, তিনি নিয়মিত নিজের এলাকায় টহল দিচ্ছেন। তাই সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক। কোথাও কোনও অপরাধ বা গোলমাল ঘটছে না। সেই কাজের জন্য বাহবাও কুড়িয়েছিলেন পার্থবাবু। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, উত্তর বন্দর থানা এলাকাতেই আক্রান্ত হলেন চিৎপুর থানার অতিরিক্ত ওসি। পুলিশের একাংশেরই অভিযোগ, জ্যোতিনগর বস্তিতে নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজকর্ম চলে। তাতে বাহিনীর একাংশের যোগসাজশও রয়েছে।
এ সব দেখে অনেকেই বলছেন, দুষ্কৃতী দমন যাদের কাজ, তাদের প্রশ্রয়েই অপরাধের বা়ড়বাড়ন্ত হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, পুলিশের একাংশেরই অভিযোগ, শুক্রবার রাতে যখন পুলিশ গিয়ে জ্যোতিনগর বস্তিতে অভিযুক্তদের পাকড়াও করছে, তখন পার্থবাবু সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের নিরস্ত করতে চেয়েছিলেন। এমনকী, ঊর্ধ্বতন কর্তাদের কাছে নালিশ করবেন বলে হুমকি দেন বলেও অভিযোগ। কিন্তু বাকি অফিসারেরা ফুঁসে ওঠায় চুপসে যান তিনি। পার্থবাবুকে এ দিন বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজ করেও কোনও উত্তর মেলেনি।
লালবাজারের কর্তাদের কয়েক জন জানিয়েছেন, এই ধরনের পুলিশি ব্যবস্থা এক দিনে গড়ে ওঠেনি। বরং উচ্চপদস্থ কর্তারাই দিনের পর দিন বাহিনীকে ঠুঁটো করে রেখেছেন। শহরের দুষ্কৃতী দমনে বিশেষ ভাবে দক্ষ গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডাদমন শাখাও ‘শান্ত’ হয়ে গিয়েছে। তার ফলেই দুষ্কৃতীদের সাহস এত বেড়েছে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়েছে যে, আমজনতা তো কোন ছার, উর্দিধারীদেরও রেয়াত করা হচ্ছে না। উল্টে পুলিশের কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে পরোক্ষে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্তাদের অনেকেই বলছেন, গুন্ডাদমন শাখার কাজের একটি বিশেষ ধরন ছিল। কোন এলাকায় কোন দুষ্কৃতীরা মাথা তুলছে, তার খবর এসে যেত অফিসারদের কাছে। বস্তুত, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগেও একাধিক ঘটনায় গুন্ডাদের শায়েস্তা করেছেন এই শাখার অফিসারেরা। বহু ক্ষেত্রে শাসক দলের ঘনিষ্ঠদেরও রেয়াত করা হয়নি।
‘‘কিন্তু ভোট পেরোতেই যে ভাবে কয়েক জনকে প্রত্যন্ত জেলায় বদলি করে দেওয়া হয়, তাতে একটা শাস্তির বার্তা দেওয়া হয়েছিল। ফলে গুন্ডাদমনের দায়িত্বে থাকা অফিসারেরা নিজেরাই ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছেন,’’ বলছেন গোয়েন্দা বিভাগের এক প্রাক্তন কর্তা। ২০১৪ সালের নভেম্বরে আলিপুর থানায় দুষ্কৃতীদের হাত থেকে বাঁচতে টেবিলের নীচে ঢুকে ফাইলের আড়ালে লুকিয়েছিলেন পুলিশকর্মীরা। পুলিশেরই হিসেব বলছে, চলতি বছর শহরের বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে এক ডজনেরও বেশি। যার মধ্যে মার্চ মাসেই ঘটেছে ছ’টি।
লালবাজারের অন্দরের খবর, কর্তাদের না জানিয়ে যাতে চুনোপুঁটিদেরও ধরা না হয়, সে কথাই ঠারেঠোরে শুনিয়ে দেওয়া হয়েছিল গুন্ডাদমন শাখার অফিসারদের। ফলে কোনও কাজ করতে পারবেন না বুঝে তাঁরাও বসে গিয়েছেন।
সেই কারণে দুষ্কৃতীদের হালহকিকত এখন কতটা লালবাজারে পৌঁছচ্ছে, তা নিয়ে সন্দিহান পুলিশেরই একাংশ। ‘‘এ ভাবে যদি চলতে থাকে, তা হলে শহরের বুকে গুন্ডারাজ তৈরি হতে বেশি দিন বাকি নেই,’’ মন্তব্য এক অবসরপ্রাপ্ত গোয়েন্দাকর্তার।
যদিও এ সব কথা মানতে নারাজ লালবাজারের কর্তারা। তাঁদের এক জন বলেন, ‘‘গত কয়েক মাসে একাধিক দুষ্কৃতীকে শহরের নানা প্রান্ত থেকে পাকড়াও করেছে গুন্ডাদমন শাখা। কোনও রাজনৈতিক চাপের কাছে নতিস্বীকারের প্রশ্নই নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy