Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪

ভেজাল কি পনিরেও, উঠছে প্রশ্ন

পনির বিক্রেতা তাঁকে ওই পনির চেখে দেখার অনুরোধও করেছিলেন। ক্রেতা অবশ্য সে ঝুঁকি নেননি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ওতে (পনির) নিশ্চয়ই ভেজাল আছে।

এমন সব পনির ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র

এমন সব পনির ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৮ ০২:৩৬
Share: Save:

পুজোর ভোজের পনির কিনতে খিদিরপুরের অরফ্যানগঞ্জ বাজারে গিয়েছিলেন বেহালার এক পুজো কমিটির সদস্য। দরদামের পরে পনিরের চেহারা দেখে তাঁর চক্ষু চড়কগাছ! ক্রেতার দাবি, কম দামে তাঁকে যে পনির দেওয়া হয়, তা এতই শক্ত যে মাটিতে ফেললে বলের মতো লাফায়!

পনির বিক্রেতা তাঁকে ওই পনির চেখে দেখার অনুরোধও করেছিলেন। ক্রেতা অবশ্য সে ঝুঁকি নেননি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ওতে (পনির) নিশ্চয়ই ভেজাল আছে। ভাগাড়ের মাংস নিয়ে যা চলছে, তাতে ওই পনিরও পরীক্ষা করা উচিত।’’

একা ওই ব্যক্তিই নন। ভাগাড়-কাণ্ডের জেরে প্রায় সব খাদ্যদ্রব্য নিয়েই সংশয়ে ভুগছেন ক্রেতারা। এই পরিস্থিতিতে পনিরের গুণমান নিয়েও সংশয়ে ক্রেতাদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, সাধারণত পনিরের দাম কিলোগ্রাম প্রতি ৩৬০-৩৮০ টাকা। সেখানে কোথাও কোথাও পনির পাওয়া যাচ্ছে প্রতি কিলোগ্রাম ১৪০ টাকায়! শহরের একাধিক অনুষ্ঠান বাড়ির পাশাপাশি, মিষ্টির দোকানেও সেই পনিরের জোগান যাচ্ছে। কম দামি পনিরে কাজ সারছে একাধিক কেটারিং সংস্থাও। ফলে মাছ-মাংসের মতো পনিরের গুণমান পরীক্ষারও দাবি উঠছে।

বউবাজার, বড়বাজার, এসপ্লানেড এবং মানিকতলা বাজারে পনিরের দাম মোটের উপর একই। তবে খিদিরপুরের অরফ্যানগঞ্জ বাজারে কিলোগ্রাম প্রতি পনিরের দাম ১২০ টাকা মাত্র। যদিও ওই বাজারের বাইরে বসা বিক্রেতারা পনির বিক্রি করেন ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে। তাঁদেরই এক জন, মহম্মদ শাকিল বললেন, ‘‘বাজারের ভিতরে এত কমে কী করে পনির দেয় জানি না। লিটার পিছু দুধ কিনি সাড়ে ৫৬ টাকায়। এক লিটার দুধে ২০০ গ্রাম পনির হয়, যা বিক্রি করি ৭২ টাকায়। বাজারের ভিতরে এই ২০০ গ্রাম পনিরই মাত্র ২৮ টাকায় পাওয়া যায়। তার মানে ওঁরা কত কম দামে দুধ কেনেন, ভাবুন।’’

কম দামে এই পনির বিক্রির ‘রহস্য’ কী? ওই বাজারের এক পনির বিক্রেতা জানাচ্ছেন, তাঁদের পনির আসে মুর্শিদাবাদ থেকে। বললেন, ‘‘মুর্শিদাবাদের ব্যবসায়ীরা যন্ত্রের সাহায্যে দুধের ক্রিম (ফ্যাট) বার করে নেন। বাকি দুধ কাটিয়ে পনির হয়। এই পনিরে ফ্যাট খুব কম মানছি।’’ এ ক্ষেত্রে দুধ কাটার জন্য কী অ্যাসিড ব্যবহার হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ওই বিক্রেতার সাফাই, ‘‘সবটা জানি না। সে ভাবে কেউ দেখতেও আসেন না।’’

পনিরের গুণমানের প্রশ্নে নজরদারিতে অভাবের কথা বলছেন দুগ্ধজাত দ্রব্যের বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘শুধু কম দামে পাওয়া যায় বলেই তা খারাপ, এটা ঠিক নয়। তবে ও ভাবে দুধ থেকে ফ্যাট বার করে নেওয়া আইন বিরুদ্ধ।’’

এক বিশেষজ্ঞ জানান, ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড আইন অনুযায়ী, ফুড গ্রেড অ্যাসিডের সাহায্য দুধ কাটার পরে যে অংশ পড়ে থাকে, তাতে ৬০ শতাংশ জল এবং ৪০ শতাংশ দুগ্ধজাত ‘টোটাল সলিড’ থাকা বাধ্যতামূলক। ওই দুগ্ধজাত সলিডের মধ্যে আবার ৫০ শতাংশ ফ্যাট থাকতেই হবে। অন্যথায় একে পনির বলা যাবে না। ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘অনেক বহুজাতিক সংস্থা ফ্যাটহীন পনির বিক্রি করে। কিন্তু, তার সঙ্গে এই ধরনের পনিরকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। এরা কী ধরনের ফ্যাট দিচ্ছে এবং কম পয়সায় কোন অ্যাসিড ব্যবহার করে দুধ কাটা হচ্ছে, তা-ও দেখা দরকার।’’

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এই পনির লাগাতার খেলে হজমের গন্ডগোল, রক্ত চলাচলে সমস্যা, নার্ভের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ডায়েটিশিয়ান রেশমি রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘ফ্যাট কম থাকা পনির বড়দের সমস্যায় ফেলতে পারে না। তবে ছোটদের ক্ষেত্রে তা ক্ষতিকর।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cheese Adulterated cheese
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE