Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

জল আগে না সবুজ রক্ষা, উভয়সঙ্কটে পুরসভা

পুরসভা সূত্রের খবর, একের পর এক পার্কে তৈরি হয়েছে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন। আরও বেশ কয়েকটি পার্কে সেই কাজ চলছে। কোনও কোনও জায়গায় বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরির ফলে পুরো পার্কটাই গায়েব হয়ে গিয়েছে!

সমস্যা: কালীঘাটে পাম্পিং স্টেশন তৈরির জেরে প্রায় উধাও হয়ে গিয়েছে গোটা পার্কই। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

সমস্যা: কালীঘাটে পাম্পিং স্টেশন তৈরির জেরে প্রায় উধাও হয়ে গিয়েছে গোটা পার্কই। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৯ ০২:২৭
Share: Save:

পানীয় জল সরবরাহের ‘নেটওয়ার্ক’ গড়ে তোলা প্রয়োজন। তার জন্য ভূগর্ভস্থ জলাধারের সঙ্গে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে। আর তা করতে গিয়ে হাত পড়ছে শহরের সবুজে। কারণ, অন্য কোথাও জায়গা না পেয়ে শহরের পার্কগুলিতে তৈরি হচ্ছে ওই বুস্টার পাম্পিং স্টেশন। আরও কয়েকটি ‘ক্যাপসুল’ বা ছোট বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরির কথা জানিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। ফলে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, চাহিদা মতো পানীয় জল সরবরাহ না কি পরিবেশ রক্ষার জন্য সবুজের সংরক্ষণ— এই দ্বিমুখী সঙ্কটে পড়েছে কলকাতা পুর প্রশাসন।

পুরসভা সূত্রের খবর, একের পর এক পার্কে তৈরি হয়েছে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন। আরও বেশ কয়েকটি পার্কে সেই কাজ চলছে। কোনও কোনও জায়গায় বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরির ফলে পুরো পার্কটাই গায়েব হয়ে গিয়েছে! সবুজের কোনও অস্তিত্ব নেই। আবার কোথাও পুরোটা না হলেও পার্কের একটা বড় অংশ জুড়ে তৈরি হয়েছে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও ফল একই, সবুজ নষ্ট হয়েছে। ভূগর্ভস্থ জলাধারের উপরে তবু পার্ক করা সম্ভব। শহরের অনেক জায়গায় তেমন রয়েছেও। কিন্তু বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের জন্য অবধারিত ভাবে জায়গা দরকার।

প্রসঙ্গত, মেয়র হওয়ার পরেই ফিরহাদ হাকিম ‘আর্বান ফরেস্ট্রি’র কথা বলেছিলেন। কিন্তু পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বনসৃজন না হয় পরে হল শহরে। কিন্তু সবুজের বর্তমান ভাঁড়ার এ ভাবে একটু একটু করে কমতে থাকলে সমূহ বিপদ। পুরসভা সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বাগমারি, কালীঘাট, তারাতলা, সিরিটি পার্ক-সহ একাধিক পার্কে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন গড়ে উঠেছে। বর্তমানে কাজ চলছে মনসাতলা পার্কে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘পানীয় জল সরবরাহ প্রয়োজন, সে কথা ঠিক। কিন্তু তার পরিবর্তে যদি সবুজ নষ্ট করা হতে থাকে, তা হলেও বিপদ। কারণ এটা মনে রাখতে হবে যে, শহরে সবুজের পরিমাণ সীমিত। আর প্রতিদিন দূষণ যে ভাবে বাড়ছে, তাতে সবুজের সংরক্ষণ ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই আমাদের কাছে।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, ছোট আকারের বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরি করতে অন্তত ১০-১১ কাঠা জায়গা প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেই জায়গা কোথায় শহরের বুকে? তাই কিছুটা ‘বাধ্য’ হয়েই হাত পড়ছে পার্কের সবুজে। কারণ, পানীয় জল সরবরাহ অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরি করতে গেলে জায়গা দরকার। কিছু করার নেই। এ যেন অনেকটা জল দাও, সবুজ নাও-এর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, বর্তমানে ৩০টির মতো বুস্টার পাম্পিং স্টেশন রয়েছে। আরও কমপক্ষে পাঁচটি স্টেশন তৈরির কাজ চলছে। কেন এত সংখ্যক বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের প্রয়োজন পড়ছে, তার কারণ ব্যাখ্যা করে পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, শহরের জনসংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তার সঙ্গে বাড়ছে পানীয় জলের চাহিদা। বর্তমানে টালা-পলতা, গার্ডেনরিচ, ধাপা-সহ মূল জলপ্রকল্পগুলি থেকে একটা নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত জল সরবরাহ করা যায়। সেই নির্দিষ্ট পরিসর পর্যন্ত জলের চাপ ভাল থাকে। কিন্তু, জলপ্রকল্পগুলি থেকে দূরের এলাকাগুলিতে চাপ ক্রমশ কমতে থাকে। অনেক জায়গায় জল পৌঁছয় না। তখন প্রয়োজন হয় ভূগর্ভস্থ জলাধার ও বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘জলাধার তৈরি করে জল প্রথমে মজুত করা হয়। তার পরে বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের মাধ্যমে তা সরবরাহ করা হয়। ফলে তখন আর জলের চাপের সমস্যা থাকে না।’’ মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দার বলেন, ‘‘এটা ঠিকই, অনেক পার্কেই বুস্টার পাম্পিং স্টেশন হচ্ছে। কিন্তু পাশাপাশি যেখানে যেখানে ভূগর্ভস্থ জলাধারের উপরে পার্ক করা সম্ভব, সেটাও করা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি সবুজের পরিমাণ বাড়াতে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Park Greenery KMC Booster Pumping Station
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy