বিরল রোগ এবং ক্যানসার আক্রান্ত শিশুরা সমাজের মূল স্রোতের অঙ্গ। চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের প্রতিভা ও দক্ষতা সকলের সামনে নিয়ে আসাও সামাজিক কর্তব্য। এ বারও সেই লক্ষ্যে বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ‘ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ’ (আইসিএইচ)।
শুক্রবার ‘বিশ্ব বিরল রোগ দিবস’-এ ঢাকুরিয়ার মধুসূদন মঞ্চে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠান নাচ, গান, নাটকে মাতিয়ে রাখল বিরল রোগ ও ক্যানসারে আক্রান্ত কচিকাঁচারা। যাদের কারও এখনও ‘আইসিএইচ’-এর মৃণালিনী ক্যানসার রিসার্চ সেন্টারে চিকিৎসা চলছে। কেউ আবার স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পথে। ওই হাসপাতালের ‘নিবেদিতা স্কুল ফর স্পেশ্যাল চিলড্রেন’-এর শিক্ষার্থীরাও অংশ নিয়েছিল অনুষ্ঠানে। আইসিএইচ-এর কার্যনির্বাহী অধিকর্তা, শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘বিরল রোগ, ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া মানেই একটি শিশুর জীবন শেষ নয়। আর, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা কতটা দক্ষ, সেটাও সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন। পাশাপাশি, চিকিৎসার জন্য তহবিল তৈরিও জরুরি। সেটার জন্য মানুষের কাছে পৌঁছনোও এই অনুষ্ঠানের একটি উদ্দেশ্য।’’ সপ্তাহে অন্তত ৫০ জন বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু ওই হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য আসে।
বিরল রোগ সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা আরও বৃদ্ধির প্রয়োজন বলে জানান আইসিএইচ-এর অধ্যক্ষ জয়দেব রায়। তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসার পাশাপাশি রিহ্যাবিলিটেশনও অত্যন্ত জরুরি। যাতে সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক বিকাশও হয়।’’ বিরল রোগে আক্রান্ত বাচ্চারা এ দিন বিভিন্ন রাজ্যের নৃত্য, যোগাসনের মাধ্যমে নৃত্যশৈলী, মূকাভিনয় মঞ্চস্থ করে। ক্যানসারের জন্য চিকিৎসাধীন, হাওড়ার ১০ বছরের পিউ জানা নৃত্য পরিবেশন করে। আবৃত্তি করে উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা, রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত চার বছরের সৌরিক চক্রবর্তী। তাদের এবং ক্যানসার আক্রান্ত অন্য শিশুদের প্রস্তুত করেছেন মৃণালিনী সেন্টারের কাউন্সেলর ঐন্দ্রিলা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ওই সেন্টারের ইন-চার্জ, শিশু ক্যানসার চিকিৎসক দীপশিখা মাইতি জানান, আইসিএইচে এই মুহূর্তে ওই রোগের চিকিৎসার জন্য ১৮টি শয্যা রয়েছে। মাসে অন্তত ২৫০ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা পায়। আর, বহির্বিভাগে আসা শিশুদের মধ্যে বছরে অন্তত ১০০ জন নতুন রোগী চিহ্নিত হয়। শিশুদের চিকিৎসার জন্য নতুন ভবন তৈরি করছে আইসিএইচ। মালা রায় তাঁর সাংসদ তহবিল থেকে গত অর্থবর্ষে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন বলে জানান অপূর্ব। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মালা বলেন, ‘‘দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিশুরা আইসিএইচে চিকিৎসার জন্য আসে। নতুন ভবনের জন্য এ বারও সমপরিমাণ টাকা দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।’’ অনুষ্ঠানে কলকাতার মেয়র-সহ অন্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)