বেআইনি বাড়ি যেমন মাথাব্যথার কারণ কলকাতা পুরসভার, তেমনই বেআইনি মোবাইল টাওয়ারও।
বেআইনি বাড়ি যেমন মাথাব্যথার কারণ কলকাতা পুরসভার, তেমনই বেআইনি মোবাইল টাওয়ারও। কারণ, শহরে যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা বেআইনি মোবাইল টাওয়ারের মোট সংখ্যা নিয়ে নির্দিষ্ট তথ্যই নেই পুর কর্তৃপক্ষের কাছে। শুধু কলকাতা নয়, সারা রাজ্যেই এই অবস্থা। এমনটাই জানাচ্ছে রাজ্য প্রশাসনের একাংশ।
বেআইনি মোবাইল টাওয়ারের বিষয়টি নতুন না হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হয়েছে। কারণ, কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রক নাগরিকদের মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে একটি সতর্কবার্তা পাঠাচ্ছে। যার বয়ান— কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা মোবাইল টাওয়ার বসানোর জন্য ‘টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ (ট্রাই)-র ছাড়পত্র (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট বা এনওসি) নিয়ে যোগাযোগ করলে বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট টেলিকম পরিষেবা সংস্থাকে জানাতে। কারণ, ওই ছাড়পত্র জাল। ওই প্রতারক ব্যক্তি বা সংস্থা সেই জাল ছাড়পত্রের পরিবর্তে বাড়ি বা জমির মালিকের কাছ থেকে টাকা দাবি করে। মোবাইল টাওয়ার বসাতে সম্মতি দিলে তারা মালিককে মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তার পরে তাদের ফাঁদে মালিক পা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তারা চম্পট দেয়।
মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, গ্রাহক-সচেতনতার জন্য এমন প্রচার প্রায়ই করে ট্রাই। তবে সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতিতে বাড়ি থেকে কাজের আবহে প্রতারকদের গতিবিধি আগের তুলনায় বেড়েছে। কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রকের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কোনও রকম কর বা ফি নেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাই জড়িত নয়। ফলে ট্রাইয়ের নাম করে কেউ এনওসি-র কথা বলে যোগাযোগ করলে আইনি পদক্ষেপের প্রয়োজন।’’
আর এই প্রসঙ্গেই সামনে আসছে শহরে অনুমোদিত মোবাইল টাওয়ারের সংখ্যার বিষয়টি। পুর প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, শহরে অনুমোদনপ্রাপ্ত টাওয়ারের তুলনায় অনুমোদনহীন টাওয়ারের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। এখন কলকাতা পুর বিল্ডিং আইন অনুযায়ী, কোনও বাড়ি বা জমিতে মোবাইল টাওয়ার বসাতে গেলে তার অনুমোদনের জন্য আবেদনকারী সংস্থা বা ব্যক্তির তরফে পুরসভাকে টাওয়ারপিছু এককালীন দু’লক্ষ টাকা দিতে হয়। কিন্তু, শহরে যত্রতত্র বাড়ির ছাদে বা অন্যত্র গজিয়ে ওঠা মোবাইল টাওয়ারের সিংহভাগের জন্যই সেই টাকা পুর ভাঁড়ারে আসে না। কারণ, সেগুলি বসানোর আগে পুর অনুমোদনই নেওয়া হয় না!
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, দেশে এই মুহূর্তে মোবাইল টাওয়ারের সংখ্যা প্রায় ছ’লক্ষ। প্রতি বছর সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন, ২০১৯ সালের জুলাইয়ে দেশে মোবাইল টাওয়ারের সংখ্যা ছিল ৫ লক্ষ ৬০ হাজার ১৬২। গত বছরের জুলাইয়ে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ লক্ষ ৯৩ হাজারে। যা বর্তমানে আরও বেড়েছে। মোট মোবাইল টাওয়ারের সংখ্যার নিরিখে দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ (প্রায় ৬৩ হাজার)। পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে একাদশ স্থানে (প্রায় ২৩ হাজার)। ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান আরও জানাচ্ছে, এই রাজ্যে জমি বা মাটিতে বসানো (গ্রাউন্ড বেসড) টাওয়ারের সংখ্যা ১৯,৪২৩। আর ছাদে বসানো (রুফ বেসড) টাওয়ারের সংখ্যা ২২৭৮। যে পরিসংখ্যান অবিশ্বাস্য!— মানছেন পুরকর্তাদের একাংশই। কারণ, শুধু কলকাতাতেই মোবাইল টাওয়ারের সংখ্যা রাজ্যের মোট টাওয়ারের সংখ্যার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।
এমনিতে কোনও বাড়ি বা জমিতে মোবাইল টাওয়ার বসানোর ক্ষেত্রে টেলিকম সংস্থা বা টাওয়ার বসানোয় বিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলি সংশ্লিষ্ট বাড়ি বা জমির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের সম্মতিপত্র নিয়ে পুরসভার কাছে আবেদন জানায়। প্রস্তাবিত টাওয়ারের সঙ্গে জমা দিতে হয় ওই বাড়ি অথবা জমির নকশা, ট্রাইয়ের নিয়মবিধি মেনে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জিয়ো টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার-১, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার-১, স্ট্রাকচারাল রিভিউয়ারের (মোবাইল-সহ মূল কাঠামোর উচ্চতা ২৫ মিটারের বেশি হলে) শংসাপত্র-সহ একাধিক প্রমাণপত্র। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘সংশ্লিষ্ট বাড়ি বা জমির মালিকের সঙ্গে টাওয়ার বসানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার চুক্তিপত্রের প্রতিলিপিও স্থানীয় পুরসভায় জমা দিতে হবে।’’
কিন্তু এ সবই গেল আইনের কথা। অর্থাৎ, টাওয়ার বসানোর ক্ষেত্রে যখন যখন পুরসভায় আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু, যেখানে টাওয়ার বসানোর অনুমোদনই দেওয়া হয়নি, তেমন ক্ষেত্রে? উত্তর নেই পুরকর্তাদের কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy