দোল লেগেছে নবদ্বীপে। আর উৎসবে ত্র্যহস্পর্শ দোষ! তাতেই বুঝি অনেকটা ফিকে দোলের নবদ্বীপ, মায়াপুর।
অনেকেই ভেবেছিলেন চৈতন্যধামের দোল এবার একটু বেশিই রঙিন হবে। নবদ্বীপ এবং সংলগ্ন এলাকার পথ গতি হারাবে পরিক্রমার ভিড়ে। নবদ্বীপ মণ্ডল পরিক্রমা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই উপচে পড়া ভিড় কোথায়? কোথায় সেই উন্মাদনা!একদিকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। তার উপর সদ্য শেষ হওয়া মহাকুম্ভ এবং পড়শি দেশের অশান্তি। এই ত্র্যহস্পর্শে এবার দোলে কম লোকসংখ্যা নজরে পড়ার মতো। অন্য বছর যেখানে পরিক্রমায় প্রতিদিন হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেন। এবার সেখানে মেরেকেটে ৪০০-৫০০ জন।
নবদ্বীপের চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রমের প্রধান অদ্বৈত দাস মহারাজের কথায়, “গত বছরের তুলনায় মাত্র ৪০ শতাংশ লোক এবার এসেছেন পরিক্রমায়। এসবই মহাকুম্ভের কারণে। এবার দোলে তাই উপচে পড়া ভিড় হবে না বলেই মনে হচ্ছে।” শুধু তিনি নন, দোল এবার ভিড় হারাবে এমনটা মনে করছেন নবদ্বীপ, মায়াপুরের সব মঠ-মন্দিরের প্রধানেরাই।গত রবিবার থেকে শুরু হয়েছে নবদ্বীপ মণ্ডল পরিক্রমা। বাকি সব কিছু আগের মতো হলেও কমতি কেবল ভক্ত সমাগমে। যদিও মায়াপুর ইস্কনের জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস বলেন, “আমাদের পরিক্রমায় যাঁরা অংশ নেন, তাঁরা বহু আগে থেকেই নাম নথিভুক্ত করান। বিদেশের কয়েক হাজার ভক্ত যোগ দেন। সেই হিসাবে পরিক্রমায় জনসংখ্যা ঠিকই আছে। কিন্তু দোলের যে সাধারণ ভিড় তা এবার অন্যবারের থেকে বেশ কম। হয়তো দোলের দিন ভিড় হবে। কিন্তু অন্যবার দু’সপ্তাহ ধরে যে ভিড় থাকে সেটা এবার কম বলেই মনে হচ্ছে।”
কারণ, ব্যাখ্যা করে সব মন্দির প্রধানরাই জানাচ্ছেন, দেড় মাসের বেশি সময় ধরে মানুষ কুম্ভ নিয়ে মেতেছিলেন। বিপুল ধকল গিয়েছে কুম্ভ স্নানে। টাকা পয়সাও প্রচুর খরচ হয়েছে। তারপরই আবার দোলের পরিক্রমায় উৎসাহ হারিয়েছেন মানুষ। পকেটের টানও রয়েছে। সর্বোপরি সদ্য মহাকুম্ভের স্নান সেরে মানসিক ভাবে তৃপ্ত ভক্তজন হয়তো মনে করছেন এখনই আর কোনও ধর্মাচারণের প্রয়োজন নেই। নবদ্বীপের কেশবজী গৌড়ীয় মঠের মধুসূদন ব্রহ্মচারী বলেন, “গত বছর ছ’হাজারের বেশি মানুষ আমাদের পরিক্রমায় অংশ নিয়েছিলেন। এবার ৯ মার্চ পরিক্রমা শুরু হবে। তবে আড়াই থেকে তিন হাজারের বেশি মানুষ হবে না বলেই মনে হচ্ছে। কুম্ভ সেরে আসার পর লোকের হাতে অর্থ নেই। তারপর উচ্চ মাধ্যমিক দোলের মধ্যেই চলছে। লোকে আসবে কী করে।” অদ্বৈত দাস মহারাজ বলেন, “নবদ্বীপের দোলে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ আসতেন। এখন অশান্তির কারণে তাঁরাও আসতে পারছেন না।”একই অভিমত নবদ্বীপ মহাপ্রভু মন্দিরের সেবায়েত গোস্বামীদের। মন্দির পরিচালন সমিতির সম্পাদক জয়ন্ত গোস্বামী জানাচ্ছেন, এবারের পরিক্রমায় সেই উদ্যম, আবেগ অনেক কম। নিয়মরক্ষার মতো হচ্ছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)