জড়ো করে রাখা গাছের কাটা ডালপালার উপরে পড়ে গিয়েছিলেন বছর ৪৩-এর যুবক। তাতে একটি ডাল তাঁর ডান দিকের বগলের নীচ দিয়ে ঢুকে ফুসফুস ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। প্রায় দু’ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে সেটি বার করে এবং ফুসফুস মেরামত করে ওই যুবকের প্রাণ বাঁচাল এসএসকেএম। এক-দু’দিনের মধ্যে তাঁকে ছুটি দেওয়া হবে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা খোকন বিশ্বাস পেশায় কনস্টেবল। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে শৌচাগারে যাওয়ার সময়ে তিনি কোনও ভাবে ঘরের বারান্দায় ডাঁই করে রাখা গাছের কাটা ডালপালার উপরে পড়ে যান। একটি গাছের ডাল ডান দিকের বগলের নীচ দিয়ে ঢুকে ফুসফুস ফুটো করে বেরিয়ে পিঠের কাছে আটকে যায়।
খোকন নিজে ডালটি টেনে বার করার চেষ্টা করলে সেটি ভেঙে গিয়ে কিছুটা বেরোয়। কিন্তু, শরীরের ভিতরে থেকে যায় বাকি অংশ। রক্তাক্ত অবস্থায় ওই যুবককে প্রথমে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে। ২৪ তারিখ দুপুরে সেখানে পৌঁছন খোকন।
পিজি-র শল্য বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারের ইউনিটের অধীনে ভর্তি করা হয় খোকনকে। ওই ইউনিটের সহকারী শিক্ষক-চিকিৎসক রুদ্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, যুবককে পরীক্ষা করে তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘‘পরীক্ষায় দেখা যায়, গাছের ডালটি ডান দিকের ফুসফুস ফুঁড়ে বেরিয়ে শিরদাঁড়া ঘেঁষে পিঠের কাছে আটকেছে। ফলে, শিরদাঁড়ায় চাপ পড়লে বড় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বুঝে অত্যন্ত সতর্ক ভাবে অস্ত্রোপচার করতে হয়।’’ রুদ্রদীপের সঙ্গে অমিতকুমার দাস, লোপামুদ্রা বসু, শল্য বিভাগের অন্য চিকিৎসকেরা এবং অ্যানাস্থেশিয়ার বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক অর্পিতা লাহা-সহ তাঁর দল অস্ত্রোপচার (থোরাকোটমি) করে।
রুদ্রদীপ, অমিতেরা বলছেন, ‘‘অস্ত্রোপচারে অ্যানাস্থেশিয়ার ভূমিকাও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ, রোগী বেশি নড়াচড়া করলে শিরদাঁড়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ শিরা, ধমনীর মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। পুরো বুক কেটে ভিতরে ফুসফুস ফুঁড়ে থাকা প্রায় সাত ইঞ্চি লম্বা ডালটি বার করা হয়। তার পরে ফুসফুসটি মেরামত করা হয়।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কোনও ভাবেই যাতে ফুসফুসে সংক্রমণ না হয়, সে দিকে সব সময়ে নজর রাখা হয়েছিল। কড়া পর্যবেক্ষণের জন্য কয়েক দিন আইটিইউ-তে রাখা হয় খোকনকে। এর পরে তাঁকে শল্য বিভাগের সাধারণ শয্যায় নিয়ে আসা হয়। এখন নিজে উঠে বসা, খাওয়াদাওয়া— সবই করছেন ওই পুলিশকর্মী।
দীপ্তেন্দ্রর কথায়, ‘‘শল্য বিভাগের সহকারী শিক্ষক ও জুনিয়র চিকিৎসকেরা এবং অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের চিকিৎসকেরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অস্ত্রোপচার করে যুবককে বাঁচিয়েছেন। সব মিলিয়ে এটি এসএসকেএমের সার্বিক সাফল্য।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)