ঘটনা ১: দিন কয়েক আগে পেট্রাপোল সীমান্তে বিএসএফ বাংলাদেশের কুমিল্লার বাসিন্দা এক মহিলাকে আটক করে। সে হাতে গয়না পরে সোনা পাচার করছিল। সোনার চুড়িগুলির বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করে দেখা যায়, গয়নায় ছিল ৯৯.৭৬ শতাংশ খাঁটি সোনা। সোনার গয়না তৈরিতে খুব কমই ব্যবহৃত হয় এই বিশুদ্ধতার মাত্রা। গয়নার ওজন ছিল প্রায় ১০৩ গ্রাম, মূল্য প্রায় ৯ লক্ষ টাকা।
ঘটনা ২: চেন্নাইয়ের বাসিন্দা এক ব্যক্তি সম্প্রতি বাংলাদেশে গিয়েছিল। পেট্রাপোল সীমান্ত হয়ে দেশে ফিরছিল। বিএসএফ জওয়ানেরা মেটাল ডিটেক্টরে ওই ব্যক্তির শরীরে লুকানো ধাতুর উপস্থিতি টের পান। পরে তার মলদ্বারে লুকনো তিনটি নলাকার সোনার টুকরো মেলে, যার মূল্য প্রায় ৯৯ লক্ষ টাকা।
ঘটনা ৩: কয়েক দিন আগে বিথারি সীমান্ত থেকে বিএসএফ এক সোনা পাচারকারীকে গ্রেফতার করে। সে-ও মলদ্বারের ভিতর লুকিয়ে সোনার বিস্কুট পাচারের চেষ্টা করছিল। ১২টি সোনার বিস্কুট উদ্ধার হয়, যার মূল্য প্রায় সওয়া এক কোটি টাকা। বিস্কুটগুলি বাংলাদেশ থেকে ভারতে আনা হচ্ছিল।
ঘটনা ৪: সম্প্রতি বিথারি সীমান্ত থেকে বিএসএফ এক সোনা পাচারকারীকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে ২৫টি সোনার বিস্কুট উদ্ধার হয়, মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। বাইকে তেলের ট্যাঙ্কের মধ্যে সোনা ছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-বাংলাদেশের উত্তর ২৪ পরগনার জেলার সীমান্ত দিয়ে নিত্যনতুন কৌশলে সোনা পাচারের একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে। পাচারকারীদের এই সব পরিকল্পনায় বিএসএফ জওয়ানেরা আরও বেশি সর্তকতামূলক পদক্ষেপ করছেন। বাহিনীর আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক, আধুনিক সরঞ্জামের সাহায্যে সীমান্তে চোরাচালান বন্ধের চেষ্টা চলছে।
শুল্ক দফতর ও বিএসএফের হাতে ধরা পড়ছে পাচারকারীরা। উদ্ধার হচ্ছে সোনা। তারপরেও কেন সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না সোনা পাচার? সূত্রের খবর, মূলত ‘সোর্স ইনফরমেশন’ ছাড়া সোনার বিস্কুট ধরা সম্ভব নয়। কারণ, তা আকারে ছোট, বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। যারা ধরা পড়ছে, সকলেই সোনা বহনকারী। তাদের জেরা করে ‘মাথা’ পর্যন্ত পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে না।
কেন এত চাহিদা সোনার বিস্কুটের?
সীমান্তের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে এ দেশের একটি চক্রের যোগাযোগ রয়েছে। বিভিন্ন হাত ঘুরে ঢাকা থেকে সোনা আসে। সোনা পাচার খুবই লাভজনক। ফলে তা সম্পূর্ণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। বিএসসএফ জানিয়েছে, সোনা পাচার বন্ধ করতে সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের বিএসএফের ‘সীমাসাথীর’ হেল্পলাইন নম্বর: ১৪৪১৯-এ অথবা ৯৯০৩৪৭২২২৭ নম্বরে ওয়টস্যাপ বার্তা বা ভয়েস মেসেজ করতে বলা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে পুরষ্কার দেওয়া হবে, তথ্যদাতার পরিচয়ও গোপন রাখা হবে বলে জানানো হচ্ছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)