Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

তালুতে ছুরির ক্ষতই ধরা পড়িয়ে দিল খুনিকে

হাতের তালুতে কাটা দাগই ধরিয়ে দিল খুনিকে! ছুরি দিয়ে খুন করার সময় ডান হাতের তালু কেটে গেলেও কোথাও সেই ক্ষতের চিকিৎসা না করিয়ে একটি ম্যাটাডরের ভিতরেই তিন দিন ধরে আশ্রয় নিয়েছিল সে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ১৯:১৫
Share: Save:

হাতের তালুতে কাটা দাগই ধরিয়ে দিল খুনিকে!

ছুরি দিয়ে খুন করার সময় ডান হাতের তালু কেটে গেলেও কোথাও সেই ক্ষতের চিকিৎসা না করিয়ে একটি ম্যাটাডরের ভিতরেই তিন দিন ধরে আশ্রয় নিয়েছিল সে। কিন্তু শেষরক্ষা করতে পারল না আততায়ী। হাতের তালুর ক্ষতচিহ্নই পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিল তাকে। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম মহম্মদ সাজিদ। বাড়ি বিহারের সীতামাঢ়ীতে। তাকে জোড়াসাঁকোর বলাই দত্ত স্ট্রিটে ব্যবসায়ী খুরশিদ আলমকে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে কলেজ স্ট্রিট মার্কেটের পিছনে ম্যাটাডর স্ট্যান্ডের একটি গাড়ি থেকে তাকে পাকড়াও করেন তদন্তকারীরা। ধৃত যুবক খুরশিদ আলমের ভাড়াটিয়া। গত মার্চ থেকে খুরিশদের বাড়িতে ভাড়া থাকত সে। সাজিদ গাড়ির খালাসির কাজ করত।

প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের দাবি, লুঠের উদ্দেশ্যেই ওই খুনের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার সকালে খুরশিদের ঘরে ঢুকে তাঁর গলায় ছুরি দিয়ে কোপ মারার সময় সাজিদের হাতে ক্ষত তৈরি হয় ছুরি থেকে। খুনের পর এক জন সাজিদের ওই ক্ষতচিহ্ন দেখেছিল। ধৃতের কাছ থেকে খুরশিদের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত খুনের দায় ওই যুবক স্বীকার করেনি বলে পুলিশ জানিয়েছে। শুক্রবার সাজিদকে আদালতে পেশ করা হবে।

পুলিশ সূত্রের খবর, গত রবিবার সকালে গলাকাটা অবস্থায় খুরশিদ আলম নামে ৭০ বছরের ওই বৃদ্ধের দেহ উদ্ধার করা হয়। ঘরের দরজা খোলা অবস্থায় ছিল। খুরশিদের দেহ ঘরের বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তাঁর এক কর্মচারী। পরে পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে।

লালবাজার সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন ঘটনার সঙ্গে পরিচিত কেউ জড়িত। কারণ হিসেবে তাঁরা দাবি করেন, পরিচিত হওয়াতেই খুরশিদ দরজা খুলে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া ওই বাড়িতে মোট ভাড়াটিয়া রয়েছেন দশ জন।বাইরের কেউ ওই বাড়িতে এলে কারও না কারও নজরে তা পড়ত। কিন্তু তা হয়নি। এর মধ্যেই রবিবার বিকেলে কলকাতায় আসেন খুরশিদের বড় ছেলে আমানত। মূলত ওই ছেলেই বাবার সঙ্গে থাকতেন। কিন্তু পারিবারিক কাজে শনিবার কলকাতার বাইরে গিয়েছিল আমানত।

আরও পড়ুন: ফের চোর সন্দেহে পিটিয়ে খুন করা হল এক যুবককে

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, পরিচিতরা কেউ জড়িত ওই সন্দেহেই সকলের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন তাঁরা। সেই সময় আমানাত জানায়, তাঁর বাবার সঙ্গে সাজিদের সবচেয়ে বেশি খাতির ছিল। দু’জনকেই প্রায় একসঙ্গে দেখা যেত বলে তিনি জানান। তদন্তকারীরা ওই সূত্র ধরেই সাজিদের খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারেন, রবিবার সকাল থেকে খোঁজ নেই তার। এলাকার কয়েক জন জানান, রবিবার হাতে ক্ষত নিয়ে ঘুরতে দেখা গিয়েছিল সাজিদকে। সাজিদ যে গাড়ির খালাসির কাজ করে এর পরেই পুলিশ তার মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, ওই গাড়ির মালিক জানিয়ে দেন, সাজিদ গত রবিবার থেকে গাড়ির মধ্যেই রাতে থাকছে। এরই পাশাপাশি তাঁরা জেনে যান সাজিদের ডান হাতে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।

লালবাজার জানিয়েছে, সব সূত্র মিলে যাওয়ার পরেই বৃহস্পতিবার সকালে কলেজ স্ট্রিট মার্কেটের পিছনে ম্যাটাডর স্ট্যান্ডে হানা দেন তদন্তকারীরা। একটি গাড়ির ভিতর থেকে তাকে পাকড়াও করা হয়। কিন্তু সে ওই খুনের কথা অস্বীকার করে এবং দাবি করতে থাকে, একটি গাড়ির ডালা খুলতে গিয়ে তার হাতে ক্ষত তৈরি হয়েছে। তদন্তকারীরা সেই গাড়ি এবং ডালাটি দেখাতে বললেও তা দেখাতে পারেনি সাজিদ। এর পরেই তাঁকে নিয়ে তল্লাশি চালিয়ে গাড়ির ভিতর থেকে খুরশিদের খোয়া যাওয়া মোবাইলটি পান তদন্তকারীরা।

কেন খুন করা হল খুরশিদকে?

প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দাদের অনুমান, সাজিদের সঙ্গে খুরশিদের সুসম্পর্ক ছিল। সেই সূত্রেই সাজিদের অনুমান ছিল, খুরশিদকে মারলে ওই ঘর থেকে টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু তা হয়নি বলেই তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

kolkata incident murder jorasanko knife
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE