—নিজস্ব চিত্র।
উদ্বোধনের পর প্লাস্টিকহীন হিসাবে পরিচিতি তৈরি হয়েছিল পাটুলির বিখ্যাত ভাসমান বাজারের। কিন্তু কিছু দিন পর থেকে আবার ফিরেছে সেই প্লাস্টিক। এ বার সেখানেই সংশোধনাগারের আবাসিকদের তৈরি পাটের জিনিসের বিকিকিনি শুরু হতে চলেছে আগামী সপ্তাহ থেকে। তা দেখাশোনা করবেন এক দৃষ্টিহীন মহিলা। সঙ্গী তাঁর ছেলে এবং আরও তিন আংশিক দৃষ্টিহীন তরুণ ভাসমান বাজারে পাটের জিনিস বেচাকেনার সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, এমনটাই স্থির হয়েছে।
আগামী মঙ্গলবার বিকেলে ভাসমান বাজারে পাটের জিনিস বিক্রিতে ব্যবহৃত একটি নৌকা উদ্বোধন করার কথা পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের। কারা দফতরের ডিজি অরুণ গুপ্তও উপস্থিত থাকবেন সে দিন। গত জানুয়ারিতে উদ্বোধনের পরে কিছু দিন প্লাস্টিকহীন ছিল শহরের প্রথম ভাসমান বাজারটি। কিন্তু কিছু দিন পর থেকেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। প্লাস্টিকের পরিবর্তে সেখানে ক্রেতাদের কাপড়ের ব্যাগ দেওয়া হত। অভিযোগ, এখন ক্রেতারা সে ভাবে কাপড়ের ব্যাগও ব্যবহার করছেন না। চিরাচরিত প্লাস্টিকেই বাজার সেরে আনাজ, মাছ কিনে বাড়ি ফিরছেন বলে জানাচ্ছেন ক্রেতারা। তবে আগামী মঙ্গলবার উদ্বোধনের পর থেকেই পাটের ব্যাগ ক্রেতাদের হাতে তুলে দেবেন বলে প্রাথমিক ভাবে স্থির করেছে কারা দফতরের সঙ্গে যুক্ত এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
বছর কয়েক আগে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে পাটের জিনিস তৈরি করা শুরু করেন আবাসিকেরা। পরবর্তীকালে তা বানানো শুরু করেন প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের আবাসিকেরা। এখন সব মিলিয়ে সংশোধনাগারের মোট ৫০ জন আবাসিক এই পাটজাত জিনিস তৈরির সঙ্গে যুক্ত। বেশির ভাগই যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। তাঁদের তৈরি এই সব পাটজাত দ্রব্য পাটুলির ভাসমান বাজারে এ বার হাতের নাগালেই পেতে পারেন ক্রেতারা। ইতিমধ্যে এই পাটজাত সামগ্রীগুলি দেশ-বিদেশে সমাদৃতও হয়েছে।
কারা দফতরের সঙ্গে এই প্রকল্পটি তত্ত্বাবধান করে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। আবাসিকদের সামগ্রী তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া থেকে শুরু করে সার্বিক বিপণন ব্যবস্থা— সবই দেখে ওই সংস্থা। শুধুমাত্র পাটের ব্যাগ আর ফাইল-ফোল্ডারই নয়, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রীও তৈরিতেও পাট ব্যবহার করছেন আবাসিকেরা। আছে বাহারি এমব্রয়ডারির নমুনাও। এই সব কিছুই কিনতে পারেন ক্রেতারা।
কিন্তু এই ধরনের উদ্যোগ কেন?
এর উত্তরে সংস্থার ম্যানেজিং ট্রাস্টি চৈতালি দাসের বক্তব্য, ‘‘পাটের ব্যাগ হাতের কাছে পেলে ক্রেতারা প্লাস্টিক সরিয়ে রেখে তা ব্যবহার করবেন, এমনই আমাদের আশা। আর আবাসিকেরা এখন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়াও শৌখিন বিভিন্ন শিল্পসামগ্রী তৈরি করছেন। সেগুলি নিয়েও আগ্রহ রয়েছে মানুষের।’’ সংস্থাটির দাবি, এ ভাবে সংশোধনাগারের আবাসিকদের তৈরি সামগ্রী মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারলে তাতে তাঁদের কাজকে যেমন স্বীকৃতি দেওয়া হবে, তেমনই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে প্লাস্টিককেও দূরে রাখা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy