রবীন্দ্র সদনে এক অনুষ্ঠানে আগে দলের সদস্যরা। নিজস্ব চিত্র
উড়ান কি থমকে গেল বন্দিদের নিয়ে গড়া লোকগানের দল ‘মুক্তবেড়ি’র!
কারা দফতর সূত্রের খবর, বছর ছয়েক আগে পুজোর সময়ে বন্দিদের যে গানের দল অ্যালবাম প্রকাশ করে জেলকে আক্ষরিক অর্থেই সংশোধনাগারের মর্যাদা দিয়েছিল, নিয়মের গেরোয় সেই ‘মুক্তবেড়ি’র পায়ে এখন বেড়ি পড়েছে। যার প্রেক্ষিতে গত তিন মাস ধরে লোকগানের দলের সদস্যদের রেওয়াজ করাতে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে যাচ্ছেন না সঙ্গীতশিল্পী তপন রায়।
কারা দফতর সূত্রের খবর, শুরু থেকে বিকেল সাড়ে ৪টেয় লক-আপের পরে বন্দিদের গানের রেওয়াজ করাতেন তাঁদের ‘স্যর’। কিন্তু সম্প্রতি কারা কর্তৃপক্ষ শিল্পীকে জানান, লক-আপের আগে রেওয়াজ করাতে হবে। তাতে আপত্তি জানিয়ে শিল্পীর বক্তব্য ছিল, লক-আপের আগে অন্য বন্দিদের কোলাহলে সংশোধনাগারের ভিতরে গান শেখানোর পরিবেশ থাকে না। অন্য বন্দিদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে মনঃসংযোগ নষ্ট হয়। গানের রেওয়াজের জন্য নিরিবিলি পরিবেশ চেয়ে লক-আপের পরে রেওয়াজ চালিয়ে যাওয়ার দরবার করেছিলেন তিনি। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকলে গত দশ বছরের যাতায়াতে ইতি টানেন তপনবাবু।
‘কালাচারাল থেরাপি’র আঙিনায় ২০০৭ সালে রবীন্দ্রসদনে বন্দিদের নিয়ে ‘তাসের দেশ’ ম়ঞ্চস্থ করেন বহরমপুর রেপার্টরি থিয়েটারের কর্ণধার প্রদীপ ভট্টাচার্য। এর পরে বন্দিদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাকে তুলে ধরার প্রশ্নে এক এক করে এগিয়ে আসেন নৃত্যশিল্পী অলকাননন্দা রায়, চিত্রশিল্পী চিত্ত দে এবং তপন রায়। বস্তুত, ‘মুক্তবেড়ি’র সাফল্য অন্য দেশেরও প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাঁদের কাজ নিয়ে আগ্রহী স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৎকালীন আইজি (কারা) বংশীধর শর্মার প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন সংশোধনাগার থেকে বাছাই বন্দিদের নিয়ে দল গড়েন তপনবাবু। কারা দফতর সূত্রের খবর, শুরুর দিকে সুর-তাল মেনে গান গাইতে পারতেন না বন্দিরা। তবুও হাল না ছেড়ে একটি ছন্দে বন্দিদের দিয়ে গানের লাইন মুখস্থ করাতেন তপনবাবু। এ ভাবেই ধীরে ধীরে সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের স্বরে সুর ফোটে। এই মুহূর্তে গানের দলে পরিতোষ ঘোষ, গিরিধারী কুমার, স্বপন সর্দার, অসীম দত্ত, সিরাজুল ইসলাম, সুজিত দলুই-সহ মোট ছ’জন সদস্য। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ওই দলের সদস্যেরা যে ছোট থেকে গানের সাধনা করেছেন, তা তো নয়। ফলে রেওয়াজ নিয়মিত না হলে গলা থেকে সুর হারিয়ে যাবে।’’ এ বিষয়ে তপনবাবু বলেন, ‘‘আমার বক্তব্য প্রশাসনিক স্তরে জানিয়েছি। সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে কিছু বলব না।’’
লক-আপের পরে রেওয়াজের অনুমতি না দেওয়া নিয়ে কারা দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘এক-দু’দিন নিয়ম শিথিল করা যায়। কিন্তু প্রতি দিন তা সম্ভব নয়। প্রত্যেক জায়গার একটা নিয়মকানুন আছে। সেটা মেনে চলতে হয়। মুক্তবেড়ি ছাড়া দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে আরও তিনটি দল কাজ করছে। তাদেরও লক-আপের আগে অনুশীলন করা নিয়ে নানা আর্জি আছে। কিন্তু তারা কাজটা বন্ধ করেনি। জেল প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতাই করছে।’’
টানাপড়েনের এই আবহে প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘এক-একটা জেলের পৃথক পরিকাঠামো। সেই পরিকাঠামো মেনে কাজটা করতে হয়। না হলে কাজ করা অসম্ভব। আমাদেরও তো নতুন কোনও প্রযোজনা হচ্ছে না।’’ চিত্রশিল্পী চিত্ত দে বলেন, ‘‘কাজটা হওয়া উচিত। সেই কাজের জন্য আইনি পরিধি মেনে একটা পৃঠক পরিকাঠামো তৈরির সময়ও এসেছে।’’
বিতর্ক প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ডিজি (ওএসডি) অরুণ গুপ্ত। কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy