রাত দশটা। বাড়ির দরজায় সজোরে ধাক্কা মারার শব্দ। এত রাতে এ ভাবে কে দরজা পেটাচ্ছেন? সোফা থেকে উঠে দরজা খুলতেই, এক যুবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে গিয়েছিলেন দক্ষিণ কলকাতার এক গৃহবধূ। জিজ্ঞেস করলেন, “এত রাতে কী দরকার ? এ ভাবে দরজা ধাক্কা দিচ্ছেন কেন?
উল্টে ওই যুবকই তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, “মানে। আপনিই তো এই ঠিকানাই দিয়েছেন। এখন বলছেন কী দরকার?” নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে ওই যুবকের কাছে গোটা ঘটনাটি শুনলেন তিনি।
অবাক হওয়ার তখনও বাকি ছিল। ওই গৃহবধূর অজান্তেই কেউ অন-লাইনে বন্ধুত্ব পাতানোর ওয়েবসাইটে তাঁর নাম নথিভূক্ত করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, কী ভাবে, কখন, কোথায় পৌঁছতে হবে? সম্ভাব্য ‘কাস্টমার’-কে মোবাইল চ্যাটে সবই তথ্য দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
গত দুই থেকে আড়াই মাস ধরে এ ভাবেই সকাল-বিকেল, এমন কি মাঝরাতেও ওই আবাসনের ফ্ল্যাটে ‘গোপনে বন্ধুত্ব পাতানো’-র জন্যে হাজির হচ্ছেন যুবকেরা। আসছেন মাঝবয়সি এমন কি প্রৌঢ়রাও। এখন বাড়িতে থাকাই দায় হয়ে দাড়িয়েছে ওই পরিবারের।
ওই গৃহবধূর ভাইয়ের বউকেও এ ভাবেই টার্গেট করা হয়েছে। তাঁর ছবি আপলোড করে দেওয়া হয়েছে এই ধরনের ওয়েবসাইটে। বন্ধুত্ব পাতানোর কথা বলে ওই ধরনের ওয়েবসাইট খোলা হলেও, সাধারণত ‘এসকর্ট সার্ভিস’-এর জন্যে ব্যবহার করা হয়।
ওই গৃহবধূর নাম এবং ছবি ব্যবহার করে বলা হচ্ছে, “আমি….। কিছু দিন আগে বিয়ে হয়েছে। স্বামীর সঙ্গে আমি শারীরিক সম্পর্কে খুশি নই। স্বামীর চাকরিও নেই। আমি একা, টাকারও দরকার। আমার বয়স মাত্র ২০ বছর। বাড়িতে এলে ২ ঘণ্টার জন্যে মাত্র ৫০০ টাকা লাগবে। গ্রুপ সার্ভিসও পাওয়া যায়।”
আরও পড়ুন: ‘স্তন্যপান করান শৌচালয়ে’, বিতর্কের ঝড়ে শপিং মল
এই ঘটনার পর অশান্তি এড়াতে বাড়ির দরজার সামনে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা লাগিয়েছেন বাড়ির লোকজন। কিন্তু তার পরেও আসছেন বহু লোক। আসলে ‘কাস্টমার’ ওই ওয়েবসাইটের সঙ্গে চ্যাটে ক্যামেরার কথা জিজ্ঞেস করলে সেখানে গৃহবধূর বয়ানে বলা হচ্ছে, ‘আমার নিরাপত্তার জন্যেই এ সব করেছি। ভয় পাবেন না। চলে আসুন’।
শুধু ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরাই নয়, বাড়ির সামনে বাংলা, হিন্দি এবং ইংরাজিতে লেখা হয়েছে, ওয়েব সাইট দেখে কেউ এখানে আসবেন না। কিন্তু তাতেও আটকানো যাচ্ছে না ‘কাস্টমার’দের।এক্ষেত্রেও কাস্টমার ওয়েবাসাইটে প্রশ্ন করলে বলা হচ্ছে, ‘ওটা ইচ্ছে করেই লাগানো হয়েছে। যাতে কারও সন্দেহ না হয়!’
আরও পড়ুন: ভিসা পেলে এ বার বইমেলায় পাকিস্তানের প্রকাশকরাও, জানাল গিল্ড
দুই পরিবারের অভিযোগ, এই চক্রান্তের নেপথ্যে প্রতিবেশি কারও হাত রয়েছে। না হলে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ অচেনা কেউকে কী ভাবে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে?আমাদের পারিবারিক জীবন নষ্ট করতেই অসৎ উদ্দেশ্যে কেউ এটা করছে। ইতিমধ্যে কলকাতা পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। তবে এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। তদন্ত শুরু হয়েছে।
এখন পর্যন্ত কেউ ধরা না পড়ায়, দিদি এবং সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে হতাশা এবং আতঙ্কে ভুগছেন মহিলার স্বামী। তার কাছে এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন, কে এই চক্রান্তের নেপথ্যে রয়েছে? সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই ধরনের অপরাধের কড়া শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। এই ঘটনার কারণে, সামাজিক এবং মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন দুই তরুণী।”
(কলকাতার ঘটনা এবং দুর্ঘটনা, কলকাতার ক্রাইম, কলকাতার প্রেম - শহরের সব ধরনের সেরা খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy