রাজভবনে সরস্বতী পুজোর দিন দুই ‘শিশুগুরু’ রাজ্যপালকে বাংলার প্রথম পাঠ দিল। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।
শিখলেন, তিনি শিখলেন। শুধু তাই নয়, কইলেনও! ‘শিশুগুরু’র হাত ধরে বাংলা ভাষায় পথচলা শুরু করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বৃহস্পতিবার, সরস্বতী পুজোর বিকেলে তাঁর ‘হাতেখড়ি’ ছিল। সেখানেই দুই ‘শিশুগুরু’ তাঁকে বাংলার প্রথম পাঠ দিল। আনন্দ শিখলেন ‘অ-আ’, এমনকি ‘কথা কওয়া’ও। তবে উচ্চারণ করলেন মাত্র দু’টি শব্দ— মা আর ভূমি। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘হাতেখড়ি’র উৎসবে রাজ্যপালকে স্বাগত জানালেন আনন্দের মাতৃভাষা মালয়ালমে। রাজ্যপাল পাল্টা বক্তৃতা করলেন বাংলায়। সরস্বতী পুজোয় এই আনন্দ-পাঠশালার সাক্ষী থাকলেন রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী-সহ বিশিষ্টজনেরা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজভবনের ‘ইস্ট লন’-এ বসেছিল রাজ্যপালের ‘হাতেখড়ি’র পাঠশালা। সেখানেই হলুদ শাড়ি পরে এক খুদে এসে কালো স্লেটে গোটা গোটা অক্ষরে লেখে ‘অ’, ‘আ’। নাম দীয়াসিনী রায়। ইংরেজিতে বুঝিয়েও দেয়, সে কী লিখেছে, ‘‘দিজ ইজ অ, দিজ ইজ আ।’’ তার হাত ধরেই ‘অ’, ‘আ’ লেখা শিখলেন রাজ্যপাল। রীতি মেনে ‘শিশুগুরু’কে রাজ্যপাল দিলেন ‘গুরুদক্ষিণা’ও। এর পর আরও দুই খুদে রঞ্জনা আর শুভজিৎ এসে রাজ্যপালকে শেখাল বাংলায় ‘কথা কওয়া’। সুর করে তারা বলে, ‘‘মাদার মানে মা। আর্থ মানে ভূমি।’’ তাদের হাতেও ‘গুরুদক্ষিণা’ তুলে দেন রাজ্যপাল বোস। দর্শকাসনে তখন হাততালির রোল।
রাজ্যপালের ‘হাতেখড়ি’ শেষে মঞ্চে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তৃতার প্রথম অংশ ছিল মালয়ালমে। তার পর মমতা বলেন, ‘‘আপনি আজ বাংলা শেখা শুরু করলেন। আমিও মালয়ালম লিখে দিতে পারি। আমিও শিখেছি। আমরা যেখান থেকে স্বরবর্ণ ও ব্যাঞ্জন বর্ণ শিখি, সেই বর্ণপরিচয় আপনার হাতে তুলে দিতে চাই।’’ এর পরেই রাজ্যপালের হাতে বর্ণপরিচয় তুলে দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা বৃহস্পতিবার মহাত্মা গান্ধীর বাংলা শেখার প্রসঙ্গও মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘‘১৯৪০-এ মহাত্মা গান্ধী বাংলা শেখা শুরু করেছিলেন। প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীও বাংলায় আগ্রহী ছিলেন। ওঁকে কিছু বললে উনি বাংলায় জবাব দিতেন।’’ মমতা জানান, সংখ্যার নিরিখে এশিয়ায় বাংলাভাষীরা দ্বিতীয় স্থানে। তার পরেও বাঙালিরা অন্য ভাষা শিখতে চান। কারণ ভারতের মতো বাংলাও বিভেদের মধ্যে ঐক্যকেই বড় করে দেখতে চায়। মমতার কথায়, ‘‘আমরা সব ভাষা শিখতে চাই। ভারত আমাদের মাতৃভূমি, সেখানে বিভেদের মধ্যে ঐক্য বড় কথা। তামিলদের নিজস্ব ভাষা, পঞ্জাবিদের নিজস্ব ভাষা। দার্জিলিঙেরও নিজস্ব ভাষা রয়েছে। এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও অনেক ভাষা রয়েছে। বাংলাও ঐক্যবদ্ধ ভারতেরই মতো। আমি মনে করি, যেখানেই যাই, স্থানীয় ভাষা শেখা উচিত। স্থানীয় ভাষা শিখলে উপকার হয়।’’
রাজ্যপাল বোস যে এ বিষয়ে সহমত, তা তিনি বাংলা ভাষাতেই জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বাংলা শিখব। বাংলা সুন্দর ভাষা। আমি বাংলাকে ভালবাসি। আমি বাংলার মানুষকে ভালবাসি। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস আমার নায়ক। জয় বাংলা, জয় হিন্দ।’’
রাজ্যপালের এই বক্তব্যের পর ‘ধন ধান্য পুষ্পে ভরা’ দিয়ে শেষ হয় ‘হাতেখড়ি’। ম়ঞ্চে তখন অজয় চক্রবর্তী, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত, পূর্ণদাস বাউলের মতো শিল্পীরা। সঙ্গে গলা মেলাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy