রেড রোডে রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি সংগৃহীত।
গত নভেম্বরেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসাবে শপথ নিয়েছেন সিভি আনন্দ বোস। রাজভবনে আসা ইস্তক রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্কেরই ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তার ব্যত্যয় ঘটল না বৃহস্পতিবার রেড রোডেও। প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে অভিবাদন গ্রহণ অবশ্য রাজ্যপালের সাংবিধানিক কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকতার বাইরেও বৃহস্পতিবারের রেড রোড যে খণ্ডদৃশ্যগুলির জন্ম দিল, সেগুলি জুড়লে গত দু’মাসের রাজ্য এবং রাজভবনের ‘সৌহার্দ্যে’র ছবিটিই আবার ধরা পড়েছে। যে ছবিটি ধনখড়-জমানার কয়েক বছরের থেকে একেবারেই পৃথক।
রেড রোডের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঘাড় নাড়াতে দেখা যায় বোসকে। তাঁর মুখেও লেগে ছিল বিস্ময় এবং তৃপ্তির হাসি। অনুষ্ঠানের একেবারে শেষ লগ্নে গাড়িতে ওঠার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গিয়ে নমস্কার জানান বোস। প্রতিনমস্কার জানান মুখ্যমন্ত্রীও। মুখ যদি মনের কথা বলে, তবে বলাই যায়, নবান্ন এবং রাজভবন দুই পক্ষই আপাতত পরস্পরের ভূমিকায় সন্তুষ্ট।
এই আবহেই অনেকের মনে পড়তে পারে গত বছরের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের কথা। স্থান এবং কাল প্রায় এক থাকলেও সে বার অন্যতম পাত্রের ভূমিকায় ছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ঘটনাচক্রে তিনি এখন দেশের উপরাষ্ট্রপতি। সে সময় রাজ্য-রাজভবন সংঘাত নয়া উচ্চতায় পৌঁছেছিল। প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের দিন বিধানসভায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী, স্পিকার-সহ রাজ্য প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন ধনখড়। সভাস্থলে এসে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে নমস্কার জানালে মুখ্যমন্ত্রীও প্রতি নমস্কার জানান। তবে ধনখড়ের প্রতি বিশেষ মনোযোগী বলে মনে হয়নি তাঁকে। মুখ্যমন্ত্রীর দিকে ঝুঁকে তদানীন্তন রাজ্যপালকে কিছু বলতেও দেখা যায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে সেই সময়েও ‘উদাসীন’ দেখিয়েছিল। দেখা যায়, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য পাশে দাঁড়ানো বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাছে ডেকে বসতে বলছেন। মঞ্চ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়ে নিয়মরক্ষার খাতিরেই ধনখড় ও মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে আরও এক বার নমস্কার বিনিময় হয়েছিল।
অপর দিকে নতুন রাজ্যপাল গোড়া থেকেই রাজ্যের তৃণমূল সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার ইঙ্গিত দিয়েছেন। রাজ্যের উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করার ক্ষেত্রে শিক্ষা দফতরকে গুরুত্ব দিয়ে সেখানেই আগে চিঠি পাঠিয়েছেন বোস। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রেও সার্চ কমিটির সুপারিশ করা তিন জনের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলার কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। অথচ রাজ্যপাল থাকাকালীন ধনখড় টুইট করে অভিযোগ তুলেছিলেন যে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ রাজ্যের ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে ‘আইনের শাসন নয়, শাসকের আইন’ চলছে। এ ছাড়াও রাজ্যে নির্বাচন পরবর্তী হিংসার অভিযোগ-সহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করে নবান্নের বিরাগভাজন হন অধুনা উপরাষ্ট্রপতি ধনখড়। বৃহস্পতিবার অবশ্য পুরনো সব বিতর্ক থেকে অনেক দূরে দিল্লির কর্তব্যপথের অনুষ্ঠানে ছিলেন তিনি।
তবে অন্য পথের পথিক আনন্দ। তিনি মনে করেন, বাংলাই দেশকে পথ দেখাবে। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে ভালবেসে এই ভাষাটি শিখে নেওয়ারও ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন তিনি। আর সে জন্যই বৃহস্পতিবার বাংলায় ‘হাতেখড়ি’ হতে চলেছে প্রাক্তন এই আমলার। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা মুখ্যমন্ত্রীরও। রাজ্যপাল হওয়ার পরে ফিল্ম ফেস্টিভাল-সহ বেশ কিছু অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একমঞ্চে দেখা গিয়েছে বোসকে। তবে এই প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে অভিবাদন গ্রহণ করলেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসাবে কেরলের অবসরপ্রাপ্ত আমলা বোসকে মনোনীত করে পাঠানোর আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে। সে সময় নাকি মমতা অনুযোগের সুরে জানিয়েছিলেন, বার বার কেন্দ্রের তরফে রাজ্যকে না জানিয়েই রাজ্যপাল মনোনীত করে ফেলা হচ্ছে। যার প্রত্যুত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, নতুন রাজ্যপালকে নিশ্চিত ভাবেই পছন্দ হবে রাজ্য সরকারের। এখনও পর্যন্ত যা ছবি, তাতে অপছন্দের কোনও কারণও নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy