এখনও বন্ধ বেশ কিছু গয়নার দোকান। রবিবার, বৌবাজারের সোনাপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
সামনেই ধনতেরাস। এত দিন ধনতেরাস উপলক্ষে যে সোনার দোকানগুলিতে নতুন আলো লাগানো হত, দোকান ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার করা হত, সেই সব সোনার দোকান ও সোনার অলঙ্কার তৈরির কারখানাগুলির বেশির ভাগই বন্ধ। কোনওটি আবার ভাঙা। ধনতেরাসের আগে বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেন ও সেকরাপাড়া লেনের সোনার দোকানগুলোয় এ বছর শুধুই শূন্যতা।
রবিবার দুপুরে দুর্গা পিতুরি লেনের ভিতরে গিয়ে দেখা গেল, গলির ভিতরে শাটার দেওয়া সোনার দোকানগুলি পরপর বন্ধ। কোনও কোনও সোনার দোকান ভাঙা হয়ে গিয়েছে। এ রকমই বন্ধ দোকানগুলির সামনে ইতিউতি ঘুরছিলেন এক সোনার দোকানের মালিক গৌতম দে। তাঁর কথায়, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে ধনতেরাসে ভাল ব্যবসা হচ্ছিল। এ বার বৌবাজার বিপর্যয়ের পরে দুর্গা পিতুরি লেন ও সেকরা পাড়া লেনের বেশির ভাগ সোনার দোকান, সোনার অলঙ্কার তৈরির কারখানা বন্ধ। কবে খুলবে দোকান, কেউ জানেন না। ধনতেরাসের আগেও বৌবাজারের সোনার দোকানের মালিকদের মুখে হাসি ফুটল না।’’
বৌবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, সেখানে বড় রাস্তার উপরে যাঁদের দোকান রয়েছে তাঁদের সকলের দোকান হয়তো বন্ধ হয়নি ঠিকই, কিন্তু সেই সব দোকানগুলিরও ধনতেরাস উপলক্ষে ব্যবসা এ বার মার খেয়েছে। কারণ ওই সব দোকানের বেশির ভাগেরই সোনার গয়না তৈরির কারখানা ছিল দুর্গা পিতুরি লেন ও সেকরাপাড়া লেনে। ওই কারখানাগুলি বন্ধ বৌবাজারের বিপর্যয়ের সময় থেকেই। বৌবাজারের স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘ক্রেতারা জিনিস কিনতে এলেও সব সময়ে দোকানদারেরা গয়নার বরাত নিতে পারছেন না। কারণ সোনার অলঙ্কার তৈরির কারখানাগুলিই তো বন্ধ। সেগুলির বেশিরভাগ ছিল দুর্গা পিতুরি লেনে ও সেকরাপাড়া লেনে। সোনার গয়না তৈরি হবে কী ভাবে?’’ তবে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, কোনও কোনও ব্যবসায়ী তাঁদের কারখানা অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করে নিয়েছেন। যদিও তা সংখ্যায় খুবই নগণ্য। দুর্গা পিতুরি লেনের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী সোনাক্ষী সরকার বৌবাজারের বিপর্যয়ের পর থেকে রয়েছেন চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের এক গেস্ট হাউসে। তিনি বলেন, ‘‘এ রকম অন্ধকারময় ধনতেরাস আগে দেখিনি। ধনতেরাস উপলক্ষে নানা রকম লোভনীয় অফার দেওয়া হয়। ফলে কেনাবেচা ভাল হয়। এ বার কিছুই হল না।’’
শুধু সোনার দোকানের মালিকেরাই নন এ বার ধনতেরাসে শূন্য হাতে বসে গয়নার কারিগরেরাও। স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ধনতেরাসে বেশি সংখ্যক অলঙ্কার তৈরি হওয়ায় কারিগরেরা মজুরিতে বেশি লাভ করতেন। তা ছাড়া অনেক দোকানের কারিগর নিজের চেষ্টায় ক্রেতা ধরেন। সেই ক্রেতারা গয়না কিনলে কারিগরেরা সেখান থেকে কমিশন পেতেন। ফলে অতিরিক্ত লাভের মুখ দেখতেন তাঁরা। এই সব কারিগরদেরও এ বার কোনও কাজ নেই।
তবে এর মধ্যেই দেখা গেল ধনতেরাস উপলক্ষে বৌবাজারের কয়েকটি দোকান সাজানোর কাজ চলছে। এ রকমই এক দোকানের মালিক রাজীব ঘোষ বলেন, ‘‘মধ্যবিত্ত মানুষেরাই আমাদের প্রধান ক্রেতা। সোনার দাম চড়া হওয়ায় কেনাবেচা এ বার এমনিতেই কম। তার মধ্যে বৌবাজারের এ রকম একটা ঘটনা ব্যবসায় আরও বিপর্যয় ডেকে এনেছে। তবু কিছু ক্রেতার আশায় ধনতেরাস উপলক্ষে দোকান সাজাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy