সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়েছে লিফটে পড়ুয়াদের আটকে পড়ার এই দৃশ্য। রবিবার, পার্ক স্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র
অন্য দিনের মতোই পার্ক স্ট্রিটের এক কোচিং সেন্টারে পড়তে গিয়েছিলেন চার ছাত্রী। চারতলার ওই সেন্টার থেকে পড়ে ফেরার জন্য লিফটে উঠেওছিলেন তাঁরা। একতলায় নামার জন্য বোতাম টিপে অপেক্ষা করছিলেন। লিফট নামতেও শুরু করেছিল। আচমকা একতলা এবং দোতলার মাঝে আটকে যায় সেটি। প্রায় ২০-২৫ মিনিট বন্ধ লিফটে আটকে থাকার পরে তাঁদের উদ্ধার করতে যায় দমকল। ওই চার পড়ুয়াকে উদ্ধার করার পরেও তাঁদের চোখ-মুখ থেকে আতঙ্ক কাটেনি। রবিবারের দুপুর সাড়ে বারোটার ওই ঘটনায় খানিকটা অসুস্থ হয়ে পড়েন ছাত্রীরা।
লিফটে আটকে পড়েন চার ছাত্রী সায়ঙ্কা মুখোপাধ্যায়, প্রচেতা রায়চৌধুরী, পায়েল সাহা এবং আকাঙ্ক্ষা। ২৪, পার্ক স্ট্রিটের বহুতলটিতে ম্যানেজমেন্টের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশিক্ষণ নিতে তাঁরা নিয়মিত যান। সায়ঙ্কা জানান, চার জন যখন লিফটে ওঠেন, তখন সব ঠিকই ছিল। হঠাৎ দোতলা আর একতলার মাঝে সেটি আটকে যায়। সায়ঙ্কা বলেন, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম, হয়তো কোনও কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই বারবার ‘জি’ বোতাম টিপছিলাম। কিন্তু লিফট চালু হচ্ছিল না।’’
আটকে পড়া ছাত্রীদের দাবি, লিফটের ইমার্জেন্সি বোতাম কাজ করেনি। লিফটে থাকা সিসি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁরা হাতের ইশারা করে বিপদবার্তা দেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। প্রচেতা বলেন, ‘‘হঠাৎ দেখি, আমাদের মোবাইলে কোনও নেটওয়ার্ক নেই। ফলে বাড়ির সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। তখন সবাই খুব ঘাবড়ে যাই।’’ অবশেষে তাঁদের সঙ্গেই লিফটে আটকে পড়া অন্য ছাত্রী পায়েলের মোবাইলে নেটওয়ার্ক আসে। সায়ঙ্কা বলেন, ‘‘আমার এক আত্মীয় দেবব্রত মুখোপাধ্যায়, তিনি বিধানসভার মার্শাল। তাঁকেই ফোন করে আমাদের আটকে থাকার কথা জানাই। উনি সঙ্গে সঙ্গে দমকলে খবর দেন ও নিজেই ঘটনাস্থলে চলে আসেন।’’ এর পরে দমকল এবং ওই বহুতলের নিরাপত্তার কাজে নিযুক্ত কর্মীরা তাঁদের লিফট থেকে উদ্ধার করেন। তত ক্ষণে আতঙ্কিত ছাত্রীদের কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন।
যে কোচিং সেন্টারে পড়তে গিয়েছিলেন ওই তরুণীরা তাঁর এক কর্মী সম্বরণকুমার পাল বলেন, ‘‘সপ্তাহের অন্য দিন হলে এমন ঘটনা ঘটত না। কারণ রবিবার বাদে প্রত্যেক দিন ওখানে লিফটম্যান থাকেন। তাই এ দিন পড়ুয়ারা নিজেরাই লিফট চালিয়ে ওঠানামা করছিলেন। এত দিন ধরে ওই লিফটে কোনও যান্ত্রিক গোলমাল হয়নি। তবে এটা ঠিক, ওই লিফটের ভিতরে মোবাইল নেটওয়ার্ক থাকে না। এটা অনেক দিনের সমস্যা।’’
কেন লিফটের আপৎকালীন বোতাম কোনও কাজ করল না? এত ক্ষণ ধরে ওই পড়ুয়ারা লিফটে আটকে ছিলেন, সিসি ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও তা কেন নজরদারিতে এল না? বহুতলের ফায়ার অফিসার কৃষ্ণচন্দ্র খান বলেন, ‘‘কোনও যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য লিফট আটকে গিয়েছিল। দ্রুত ঠিক করে নেওয়া হয়েছে। লিফটের সিসি ক্যামেরা এবং আপৎকালীন বোতাম ঠিকই আছে। তবে লিফটের ভিতরে মোবাইল নেটওয়ার্ক কখনও কখনও চলে যায়। তাই হয়তো ঠিক মতো যোগাযোগ হয়নি। যোগাযোগ হতেই ওদের দ্রুত উদ্ধার করা হয়েছে।’’
যদিও সিসি ক্যামেরা ঠিক থাকার কথা মানতে রাজি নয় পড়ুয়াদের পরিবার। তাদের অভিযোগ, ‘‘হয় ওই লিফটের সিসি ক্যামেরা ঠিক মতো কাজ করছিল না, নয়তো নজরদারিতে ফাঁক ছিল। না হলে এতগুলো মেয়ে লিফটে আটকে থেকে ক্যামেরার সামনে হাত নেড়ে বিপদের কথা জানাচ্ছেন, সেটা নজরদারিতে ধরা পড়ল না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy